যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে -

Sunday 17 June 2012

পথহারা পাখি

পথহারা পাখি কেঁদে ফিরি একা
আমার জীবনে শুধু আঁধারের লেখা

বাহিরে অন্তরে ঝড় উঠিয়াছে
আশ্রয় যাচি হায় কাহার কাছে!

বুঝি দুখ নিশি মোর
হবে না হবে না ভোর
ফুটিবে না আশার আলোক রেখা।।

তুমি আমার সকালবেলার সুর

তুমি আমার সকালবেলার সুর
বিদায় আলোয় উদাস করা অশ্রুভারাতুর।

ভোরের তারার মতো তোমার সজল চাওয়ায়
ভালোবাসা চেয়ে সে যে কান্না পাওয়ায়
রাত্রিশেষের চাঁদ তুমি গো, বিদায়বিধুর।

তুমি আমার ভোরের ঝরা ফুল
শিশির নাওয়া শুভ্রশুচি পূজারিণীতুল।

অরুণ তুমি তরুণ তুমি করুণ তারও চেয়ে
হাসির দেশে তুমি যেন বিষাদ লোকের মেয়ে
তুমি ইন্দ্রসভার মৌনবীণা নীরবনিঠুর।।

তিলক দিলে কি শ্যাম

তিলক দিলে কি শ্যাম ত্রিলোক ভুলাতে?
কে দিল বনমালী বনমালা গলাতে?

আঁখি যেন ঢলঢল আধফোটা শতদল
কে শিখাল ও চাহনি গোপিনী ছলিতে?

গভীর রাতে জাগি

গভীর রাতে জাগি খুঁজি তোমারে
দূর গগনে প্রিয় তিমির-পারে।

জেগে যবে দেখি বঁধু তুমি নাই কাছে
আঙিনায় ফুটে ফুল ঝরে পড়ে আছে
বাণ-বেঁধা পাখী সম আহত এ প্রাণ মম
লুটায়ে লুটায়ে কাঁদে অন্ধকারে।

মৌনা নিঝুম ধরা ঘুমায়েছে সবে
এসো প্রিয় এই বেলা বক্ষে নীরবে।

কত কথা কাঁটা হয়ে বুকে আছে বিঁধে
কত আভিমান কত জ্বালা এই হূদে
দেখে যাও এসো প্রিয় কত সাধ ঝরে গেল
কত আশা মরে গেল হাহাকারে।।

কেমনে রাখি আঁখিবারি চাপিয়া

রাগ - রাগেশ্রী

কেমনে রাখি আঁখিবারি চাপিয়া
প্রাতে কোকিল কাঁদে, নিশীথে পাপিয়া।

এ ভরা ভাদরে আমারি মরা নদী
উথলি উথলি উঠিছে নিরবধি
আমার এ ভাঙ্গা ঘাটে আমার এ হূদি তটে
চাপিতে গেলে ওঠে দুকুল ছাপিয়া।

নিষেধ নাহি মানে আমার এ পোড়া আঁখি
জল লুকাব কত কাজল মাখি মাখি
ছলনা করে হাসি অমনি জলে ভাসি
ছলিতে গিয়া আসি ভয়েতে কাঁপিয়া।।

আমার কালো মেয়ে

আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে
কে দিয়েছে গালি
তারে কে দিয়েছে গালি
রাগ করে সে সারা গায়ে
মেখেছে তাই কালি।

যখন রাগ করে মোর অভিমানী মেয়ে
আরো মধুর লাগে তাহার হাসিমুখের চেয়ে
কে কালো দেউল করে আলো
অনুরাগের প্রদীপ জ্বালি।

পরেনি সে বসনভূষণ, বাঁধেনি সে কেশ
তারি কাছে হার মানে রে ভুবনমোহন বেশ।

রাগিয়ে তারে কাঁদি যখন দুখে
দয়াময়ী মেয়ে আমার ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকে
আমার রাগী মেয়ে, তাই তারে দিই
জবা ফুলের ডালি।।

Saturday 16 June 2012

আসিবে তুমি জানি প্রিয়

আসিবে তুমি জানি প্রিয়
আনন্দে বনে বসন্ত এলো
ভুবন হল সরসা, প্রিয়-দরশা, মনোহর।

বনানতে পবন অশান্ত হল তাই
কোকিল কুহরে, ঝরে গিরি নির্ঝরিণী ঝর ঝর।

ফুল্ল যামিনী আজি ফুল সুবাসে
চন্দ্র অতন্দ্র সুনীল আকাশে
আনন্দিত দীপান্নিত অম্বর।

অধীর সমীরে দিগঞ্চল দোলে
মালতী বিতানে পাখি পিউ পিউ বোলে
অঙ্গে অপরূপ ছন্দ আনন্দ-লহর তোলে
দিকে দিকে শুনি আজ আসিবে রাজাধিরাজ
প্রিয়তম সুন্দর।।

এ কুল ভাঙ্গে ও কুল গড়ে

এ কুল ভাঙ্গে ও কুল গড়ে
এই তো নদীর খেলা (রে ভাই)
এই তো বিধির খেলা।
সকাল বেলার আমির রে ভাই
ফকীর সন্ধ্যাবেলা।

সেই নদীর ধারে কোন ভরসায়
(ওরে বেভুল) বাঁধলি বাসা সুখের আশায়
যখন ধরল ভাঙন পেলিনে তুই
পারে যাবার ভেলা।

এই দেহ ভেঙ্গে হয় রে মাটি
মাটিতে হয় দেহ
যে কুমোর গড়ে সেই দেহ
তার খোঁজ নিল না কেহ।

রাতে রাজা সাজে নট-মহলে
দিনে ভিক্ষা মেগে পথে চলে
শেষে শ্মশান-ঘাটে গিয়ে দেখে
সবই মাটির ঢেলা
এই তো বিধির খেলা রে ভাই
ভব-নদীর খেলা।।

ওই ঘর ভুলানো সুরে

ওই ঘর ভুলানো সুরে
কে গান গেয়ে যায় দূরে
তার সুরের সাথে সাথে
মোর মন যেতে চায় উড়ে।

তার সহজ গলার তানে
সে ফুল ফোটাতে জানে
তার সুরে ভাটির টানে
নব জোয়ার আসে ঘুরে।

তার সুরের অনুরাগে
বুকে প্রণয়-বেদন জাগে
বনে ফুলের আগুন লাগে
ফুল সুধায় ওঠে পুরে।

বুঝি সুর সোহাগে ওরই
পায় যৌবন কিশোরী
হিয়া বুঁদ হয়ে গো নেশায়
তার পায়ে পায়ে ঘুরে।।

বঁধু, মিটিলনা সাধ

বঁধু, মিটিলনা সাধ ভালোবাসিয়া তোমায়
তাই আবার বাসিতে ভালো আসিব ধরায়।

আবার বিরহে তব কাঁদিব
আবার প্রণয় ডোরে বাঁধিব
শুধু নিমেষেরি তরে আঁখি দুটি ভ’রে
তোমারে হেরিয়া ঝ’রে যাব অবেলায়।

যে গোধূলি-লগ্নে নববধূ হয় নারী
সেই গোধূলি-লগ্নে বঁধু দিল আমারে গেরুয়া শাড়ি

বঁধু আমার বিরহ তব গানে
সুর হয়ে কাঁদে প্রাণে প্রাণে
আমি নিজে নাহি ধরা দিয়ে
সকলের প্রেম নিয়ে দিনু তব পায়।।

ভুলিতে পারিনে তাই

ভুলিতে পারিনে তাই আসিয়াছি পথ ভুলি
ভোলো মোর সে অপরাধ, আজ যে লগ্ন গোধূলি।

এমনি রঙিন বেলায় খেলেছি তোমায় আমায়
খুঁজিতে এসেছি তাই সেই হারানো দিনগুলি।

তুমি যে গেছ ভুলে, ছিল না আমার মনে
তাই আসিয়াছি তব বেড়া দেওয়া ফুলবনে
গেঁথেছি কতই মালা এই বাগানের ফুল তুলি
আজও হেথা গাহে গান আমার পোষা বুল্‌বুলি।

চাহ মোর মুখে প্রিয়, এস গো আরও কাছে
হয়তো সে দিনের স্মৃতি তব নয়নে আছে
হয়তো সে দিনের মতই প্রাণ উঠিবে আকুলি।।

মধুকর মঞ্জীর বাজে

মধুকর মঞ্জীর বাজে বাজে গুন্‌ গুন্‌ মঞ্জুল গুঞ্জরণে
মৃদুল দোদুল নৃত্যে বন শবরী মাতে কুঞ্জবনে।

বাজায়ছে সমীর দখিনা
পল্লবে মর্মর বীণা
বনভুমি ধ্যান-আসীনা
সাজিল রাঙা কিশলয় বসনে।

ধূলি-ধূসর প্রান্তর পরেছিল গৈরিক সন্ন্যাসী সাজ
নব দূর্বাদল শ্যাম হলো আনন্দে আজ।

লতিকা বিতানে ওঠে ডাকি
মুহু মুহু ঘুমহারা পাখি
নব নীল অঞ্জন মাখি
উদাসী আকাশ হাসে চাঁদের সনে।।

যাও যাও তুমি ফিরে

যাও যাও তুমি ফিরে, এই মুছিনু আঁখি
কে বাঁধিবে তোমারে, হায় বনের পাখি।

মোর এত প্রেম আশা, মোর এত ভালোবাসা
আজ সকলি দুরাশা, আর কি দিয়ে রাখি।

এই অভিমান জ্বালা, মোর একেলারি কালা
ßান মিলনেরি মালা, দাও ধুলাতে ঢাকি।

তোমার বেঁধেছিল নয়ন শুধু এ রূপের জালে
তাই দু দিন কাঁদিয়া হায় সে বাঁধন ছাড়ালে।

মোর বাঁধিয়াছে হিয়া, তায় ছাড়াব কি দিয়া
সখা হিয়া ত নয়ন নহে
সে ছাড়ে না কাঁদিয়া, দু দিন কাঁদিয়া।

আজ যে ফুল প্রভাতে হায় ফুটিল শাখাতে
তায় দেখিল না রাতে, সে ঝরিল নাকি।

হায় রে কবি প্রবাসী, নাই হেথা সুখ হাসি
ফুল ঝরে হলে বাসি, রয় কাঁটার ফাঁকি।।

সতী হারা উদাসী ভৈরব কাঁদে

সতী হারা উদাসী ভৈরব কাঁদে
বিষাণ ত্রিশূল ফেলি গভীর বিষাদে
জটাজুটে গঙ্গা নিস্তরঙ্গা
রাহু যেন গ্রাসিয়াছে ললাটের চাঁদে।

দুই করে দেবী-দেহ ধরে বুকে বাঁধে
রোদনের সুর বাজে প্রণব নিনাদে
ভক্তের চোখে আজি ভগবান শঙ্কর
সুন্দরতর হল পড়ি মায়া ফাঁদে।।

সই, ভালো করে বিনোদ-বেণী

সিন্ধু-ভৈরবী / কাহার্‌বা

সই, ভালো করে বিনোদ-বেণী বাঁধিয়া দে
মোর বঁধু যেন বাঁধা থাকে বিননী-ফাঁদে।

সই চপল পুরুষ সে, তাই কুরুশ-কাঁটায়
রাখিব খোঁপার সাথে বিঁধিয়া লো তায়
তাহে রেশমী জাল বিছায়ে দে ধরিতে চাঁদে।

বাঁধিতে সে বাঁধন হারা বনের হরিণ
জড়ায়ে দে জরীন্‌ ফিতা মোহন ছাঁদে

প্রথম প্রণয় রাগের মত আল্‌তা রঙে
রাঙায়ে দে চরণ মোর এমনি ঢঙে
সই পায়ে ধরে বঁধু যেন আমারে সাধে।।

রঙ্গীলা আপনি রাধা

রঙ্গীলা আপনি রাধা
তারে হোরীর রং দিও না
ফাগুনের রাণী যে রাই
তারে রঙে রাঙিয়ো না।

রাঙ্গা আবির রাঙ্গা ঠোঁটে
গালে ফাগের লালী ফোটে
রংসায়রে নেয়ে উঠে
অঙ্গে ঝরে রঙের সোনা।

অনুরাগ-রাঙা মনে
রঙের খেলা ক্ষণে ক্ষণে
অন্তরে যার রঙের লীলা
(তারে) বাহিরে রং লাগিয়ো না।।

শাওন আসিল ফিরে

শাওন আসিল ফিরে, সে ফিরে এল না
বরষা ফুরায়ে গেল, আশা তবু গেল না।

ধানী রং ঘাঘরীর মেঘ রং ওড়না
পরিতে আমারে মাগো অনুরোধ কোরোনা
কাজরী কাজল মেঘ পথ পেল খুঁজিয়া
সে কি ফেরার পথ পেল না মা পেল না?

আমার বিদেশীরে খুঁজিতে অনুখন
বুনোহাঁসের পাখার মতো উড়ু উড়ু করে মন

অথৈ জলে মাগো পথঘাট থৈথৈ
আমার হিয়ার আগুন নিভিল কই?
কদমকেশর বলে কোথা তোর কিশোর
চম্পাডালে ঝুলে শূন্য ঝুলনা।

মন বলে তুমি আছ ভগবান

মন বলে তুমি আছ ভগবান
চোখ বলে তুমি নাই
মিছে শুধু তোমায় ডেকে ডেকে মরি
দেখা কভু নাহি পাই।

মন বলে ঐ তৃণ-লতা-গাছে
তব সে অরূপ মিলাইয়া আছে
চোখ বলে কেন কল্পনা দিয়ে
নিজেরে নিজে ভুলাই।।

তোরা সব জয়ধ্বনি কর

তোরা সব জয়ধ্বনি কর
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়
তোরা সব জয়ধ্বনি কর

আসছে এবার অনাগত প্রলয় নেশায় নৃত্য পাগল
সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক ভেনে ভাঙলো আগল
মৃত্যুগহন অন্ধকুপে মহাকালের চন্ডরূপে ধূম্রধূপে
বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর
ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর
তোরা সব জয়ধ্বনি কর

দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়
দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়
বিন্দু তাহার নয়নজলে সপ্তমহাসিন্ধু দোলে কপোলতলে
বিশ্বমায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর পর
হাঁকে ঐ জয় প্রলয়ংকর
তোরা সব জয়ধ্বনি কর

মাভৈঃ মাভৈঃ জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে
জরায় মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ লুকানো ঐ বিনাশে
এবার মহানিশার শেষে আসবে Œষা অরুণ হেসে তরুণ বেশে
দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশুচাঁদের কর
আলো তার ভরবে এবার ঘর
তোরা সব জয়ধ্বনি কর।

চুড়ির তালে নুড়ির মালা

চুড়ির তালে নুড়ির মালা রিনি ঝিনি বাজে লো
খোঁপায় দোলে বুনো ফুলের কুঁড়ি
কালো ছোঁড়ার কাঁকাল ধরে নাচে মাতাল ছুঁড়ি লো
খোঁপায় দোলে বুনো ফুলের কুঁড়ি।

মহুয়া মদের নেশা পিয়ে, বুঁদ হয়েছে বৌয়ে-ঝিয়ে
চাঁদ ছুটছে মনকে নিয়ে যেন ডুরি ছেঁড়া ঘুড়ি লো।

বাজে নুপূর পাঁইজোড়, সারা গায়ে নাচের ঘোর
ওলো লেগেছে মন হল নেশায় বিভোর
ওই আকাশে চাঁদ হের মেঘের সাথে যেন করে খুন্‌সুড়ি লো।।

গুঞ্জ-মালা গলে

গুঞ্জা-মালা গলে কুঞ্জে এস হে কালা
বনমালী এস দুলাইয়া বনমালা।

তব পথে বকুল ঝরিছে উতল বায়ে
দলিয়া যাবে চলি অরুণ-রাঙা পায়ে
রচেছি আসন তরুর তমাল ছায়ে
পলাশে শিমুলে রাঙা প্রদীপ জ্বালা।

ময়ুরে নাচাও এসে তোমার নূপুর তালে
বেঁধেছি ঝুলনিয়া ফুলেল্‌ কদম ডালে
তোমা বিনে বনমালী বিফল এ ফুল-দোল
বাঁশী বাজিবে কবে উতলা ব্রজবালা।।

আমি যদি আরব হতাম

আমি যদি আরব হতাম মদিনারই পথ
এই পথে মোর চলে যেতেন নূর নবী হজরত।

পয়জা তাঁর লাগত এসে আমার কঠিন বুকে
আমি ঝর্ণা হয়ে গলে যেতাম অমনি পরম সুখে
সেই চিহ্ন বুকে পুরে
পালিয়ে যেতাম কোহ-ই-তুরে
সেথা দিবানিশি করতাম তার কদম জিয়ারত

মা ফাতেমা খেলত এসে আমার ধূলি লয়ে
আমি পড়তাম তার পায়ে লুটিয়ে ফুলের রেণু হয়ে
হাসান হোসেন হেসে হেসে
নাচত আমার বক্ষে এসে
চক্ষে আমার বইত নদী পেয়ে সে ন্যামত।

আমার বুকে পা ফেলে রে বীর আসহাব যত
রণে যেতেন দেহে আমার আঁকি মধুর ক্ষত
কুল মুসলিম আসত কাবায়
চলতে পায়ে দলত আমায়
আমি চাইতাম খোদার দীদার শাফায়ত জিন্নত।।

উম্মত আমি গুনাহগার

উম্মত আমি গুনাহগার
(সুন্ধু ভৈরবী- কার্ফা)

উম্মত আমি গুনাহগার
তবু ভয় নাহি রে আমার
আহমদ আমার নবী
যিনি খোদ হাবিব খোদার।।

যাঁহার উম্মত হতে চাহে সকল নবী,
তাহারি দামন ধরি' পুলসিরাত হব পার।।

কাঁদিবে রোজ হাশরে সবে
যবে নাফসি ইয়া নাফসি রবে,
ইয়া উম্মতী বলে একা কাঁদিবেন আমার মোখতার।।

কাঁদিবেন সাথে মা ফাতিমা ধরিয়া আরশ আল্লার
হোসায়েনের খুনের বদলায় মাফী চাই পাপী সবাকার।।

দোযখ হয়েছে হারাম যে দিন পড়েছি কালেমা,
যেদিন হয়েছি আমি কোরানের নিশান- বর্দার।।

(গুল বাগিচা)- কাজী নজরুল ইসলাম-

অনুরোধ

পুবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া।
যাও রে বইয়া এই গরীবের সালামখানি লইয়া।।

কাবার জিয়ারতের আমার নাই সম্বল ভাই,
সারা জনম সাধ ছিল যে, মদিনাতে যাই ( রে ভাই)।
মিটল না সাধ, দিন গেল মোর দুনিয়ার বোঝা বইয়া।।

তোমার পানির সাথে লইয়া যাও রে আমার চোখের পানি,
লইয়া যাওরে এই নিরাশের দীর্ঘ নিশ্বাসখানি।
নবীজীর রওজায় কাঁদিও ভাই রে আমার হইয়া।।

মা ফাতেমা হযরত আলীর মাজার যেথায় আছে,
আমার সালাম দিয়া আইস তাঁদের পায়ের কাছে।
কাবায় মোজানাজাত করিও আমার কথা কইয়া।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

তোমায় যেমন করে ডেকেছিল

তোমায় যেমন করে ডেকেছিল আরব মরুভূমি;
ওগো আমার নবী প্রিয় আল আরাবী,
তেমনি করে ডাকি যদি আসবে নাকি তুমি।।

যেমন কেঁদে দজলা ফোরাত নদী
ডেকেছিল নিরবধি,
হে মোর মরুচারী নবুয়তধারী,
তেমনি করে কাঁদি যদি আসবে নাকি তুমি।।

যেমন মদিনা আর হেরা পাহাড়
জেগেছিল আশায় তোমার
হে হযরত মম, হে মোর প্রিয়তম,
তেমনি করে জাগি যদি আসবে নাকি তুমি।।

মজলুমেরা কাবা ঘরে
কেঁদেছিল যেমন করে,
হে আমিনা- লালা, হে মোর কামলীওয়ালা,
তেমনি করে চাহি যদি আসবে নাকি তুমি।।

- কাজী নজরুল ইসলাম-

পাষাণের ভাঙালে ঘুম

পাষাণের ভাঙালে ঘুম
কে তুমি সোনার ছোঁয়ায়
গলিয়া সুরের তুষার
গীতিনির্ঝর বয়ে যায়।

উদাসী বিবাগী মন
যাচে আজ বাহুর বাঁধন
কত জনমের কাঁদন
ও পায়ে লুটাতে চায়।

ওগো তোমার চরণ ছন্দে মোর
মুঞ্জরিল গানের মুকুল
তোমার বেণীর বন্ধে গো
মরিতে চায় সুরের বকুল।
চমকে ওঠে মোর গগণ
ঐ হরিণ চোখের চাওয়ায়।

তোমারি আঁখির মত

তোমারি আঁখির মত আকাশের দুটি তারা
চেয়ে থাকে মোর পানে নিশীথে তন্দ্রাহারা।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?

ক্ষীণ আঁখিদীপ জ্বালি বাতায়নে জাগি একা
অসীম অন্ধকারে খুঁজি তব পথরেখা
সহসা দখিনবায়ে চাঁপাবনে জাগে সাড়া।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?

তব স্মৃতি যদি ভুলি ক্ষণতরে আনকাজে
কে যেন কাঁদিয়া ওঠে আমার বুকের মাঝে।

বৈশাখী ঝড়ে রাতে চমকিয়া উঠি জেগে
বুঝি অশান্ত মম আসিলে ঝড়ের বেগে
ঝড় চলে যায় কেঁদে, ঢালিয়া শ্রাবণধারা।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?

তরুণ প্রেমিক

তরুণ প্রেমিক, প্রণয় বেদন
জানাও জানাও বে-দিল প্রিয়ায়
ওগো বিজয়ী, নিখিল হূদয়
কর কর জয় মোহন মায়ায়।

নহে ও এক হিয়ার সমান
হাজার কাবা হাজার মস্‌জিদ
কি হবে তোর কাবার খোঁজে
আশয় খোঁজ তোর হূদয় ছায়ায়।

প্রেমের আলোয় যে দিল্‌ রোশন
যেথায় থাকুক সমান তাহার
খুদার মস্‌জিদ মুরত মন্দির
ইশাই দেউল ইহুদখানায়।

অমর তার নাম প্রেমের খাতায়
জ্যোতির লেখায় রবে লেখা
দোজখের ভয় করে না সে
থাকে না সে বেহেস্তের আশায়।।

চমকে চমকে ধীর ভীরু পায়

আরবী (নৃত্যের) সুর - কার্ফা

চম্‌কে চম্‌কে ধীর ভীরু পায়
পল্লী-বালিকা বন-পথে যায়
একেলা বন-পথে যায়।

সাড়ি তার কাঁটা-লতায়
জড়িয়ে জড়িয়ে যায়
পাগল হাওয়াতে অঞ্চল লয়ে মাতে
যেন তার তনুর পরশ চায়।
একেলা বনপথে যায়।

শিরীষের পাতায় নূপুর
বাজে তার ঝুমুর ঝুমুর
কুসুম ঝরিয়া মরিতে
চাহে তার কবরীতে,
পাখী গায় পাতার ঝরোকায়।
একেলা বনপথে যায়।

চাহি তার নীল নয়নে
হরিণী লুকায় বনে,
হাতে তার কাঁকন হতে
মাধবী লতা কাঁদে
ভ্রমরা কুন্তলে লুকায়।
একেলা বনপথে যায়।।

এসো প্রিয় আরো কাছে

দেশী টোড়ি, ত্রিতাল

এস প্রিয় আরো কাছে
পাইতে হূদয়ে যে বিরহী মন যাচে।

দেখাও প্রিয়-ঘন স্বরূপ মোহন
যে রূপে প্রেমাবেশে পরাণ নাচে।।

আমরা সেই সে জাতি

ধর্মের পথে শহীদ যাহারা আমরা সেই সে জাতি।
সাম্য মৈত্রী এনেছি আমরা বিশ্বে করেছি জ্ঞাতি।
আমরা সেই সে জাতি।।

পাপবিদগ্ধ তৃষিত ধরার লাগিয়া আনিল যারা
মরুর তপ্ত বক্ষ নিঙ্গাড়ি শীতল শান্তিধারা,
উচ্চ- নীচের ভেদ ভাঙ্গি দিল সবারে বক্ষ পাতি।
আমরা সেই সে জাতি।।

কেবল মুসলমানের লাগিয়া আসেনি ক ইসলাম
সত্যে যে চায়, আল্লায় মানে, মুসলিম তারি নাম।
আমির- ফকিরে ভেদ নাই সবে সব ভাই এক সাথী
আমরা সেই সে জাতি।।

নারীরে প্রথম দিয়াছি মুক্তি নর- সম অধিকার
মানুষে গড়া প্রাচীর ভাঙ্গিয়া করিয়াছি একাকার,
আঁধার রাতের বোরখা উতারি এনেছি আশায় ভাতি।
আমরা সেই সে জাতি।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

এস হে সজল

এস হে সজল শ্যাম ঘন দেয়া
বেণুকুঞ্জ ছায়ায় এস
তাল তমাল বনে এস শ্যামল
ফুটাইয়া যূঁথী-কুন্দ-নীপ-কেয়া।

বারিধারে এস চারিধার ভাসায়ে
বিদ্যুৎ-ইঙ্গিতে দশ দিক হাসায়ে
বিরহী মনে জ্বালায়ে আশা আলেয়া
ঘন দেয়া মোহনিয়া শ্যাম পিয়া।

শ্রাবণ বরিষণ হরষণ ঘনায়ে
এস নব ঘনশ্যাম নূপুর শোনায়ে
হিজল তমাল ডালে ঝুলন ঝুলায়ে
তাপিতা ধরার চোখে অঞ্জন বুলায়ে
যমুনা স্রোতে ভাসায়ে প্রেমের খেয়া
ঘন দেয়া মোহনিয়া শ্যাম পিয়া।।

ওগো প্রিয় তব গান

ওগো প্রিয় তব গান
আকাশ গাঙের জোয়ারে উজান বাহিয়া যায়।
মোর কথাগুলি কাঁদিছে বুকের মাঝারে,
পথ খুঁজে নাহি পায়।

ওগো দখিনা বাতাস, ফুলের সুরভি বহ
ওরি সাথে মোর না বলা বাণী লহ।
ওগো মেঘ, তুমি মোর হয়ে গিয়ে কহ
বন্দিনী গিরি-ঝরণা পাষাণতলে যে কথা কহিতে চায়।

ওরে ও সুরমা, পদ্মা, কর্ণফুলি
তোদের ভাটির স্রোতে
নিয়ে যা আমার না বলা কথাগুলি
ধুয়ে মোর বুক হতে।

ওরে ‘চোখ গেল’ ‘বৌ কথা কও’ পাখি
তোদের কণ্ঠে মোর সুর যাই রাখি।
ওরে মাঠের মুরলি কহিও তাহারে ডাকি
আমার এ কলি, না-ফোটা বুলি, ঝরে গেল নিরাশায়।।

ভরিয়া পরাণ শুনিতেছি গান

ভরিয়া পরাণ শুনিতেছি গান
আসিবে আজ বন্ধু মোর।
স্বপন মাখিয়া সোনার পাখায়
আকাশে উধাও চিত-চকোর।
আসিবে আজ বন্ধু মোর।।

হিজল বিছানো বন পথ দিয়া
রাঙায়ে চরণ আসিবে গো প্রিয়া।
নদীর পারে বন কিনারে
ইঙ্গিত হানে শ্যাম কিশোর।
আসিবে আজ বন্ধু মোর।।

চন্দ্রচূড় মেঘের গায়
মরাল-মিথুন উড়িয়া যায়,
নেশা ধরে চোখে আলো-ছায়ায়
বহিছে পবন গন্ধ চোর।
আসিবে আজ বন্ধু মোর।।

জনম জনম গেলো

জনম জনম গেলো, আশা পথ চাহি,
মরু মুসাফির চলি, পার নাহি নাহি।
বরষও পরে বরষ, আসে যায় ফিরে,
পিপাসা মিটায়ে চলি, নয়নেরও তীরে,
জ্বালিয়া আলেয়া শিখা, নিরাশার মরিচীকা,
ডাকে মরু প্রাণনিকা, শত গীত গাহি।
জনম জনম গেলো, আশা পথ চাহি।
এ মরু ছিল গো কবে সাগরের বারি
স্বপনে হেরি গো তারে আজো মরুচারী
সেই সে সাগর তলে যে তরী ডুবিল জলে
সে তরী-সাথীরে খুঁজি মরুপথ বাহি

Friday 15 June 2012

মোমতাজ! মোমতাজ!

মোমতাজ! মোমতাজ! তোমার তাজমহল
(যেন) বৃন্দাবনের একমুঠো প্রেম,
ফিরদৌসের একমুঠো প্রেম,
আজো করে ঝলমল।

কত সম্রাট হল ধূলি স্মৃতির গোরস্থানে
পৃথিবী ভুলিতে নারে প্রেমিক শাহ্‌জাহানে
শ্বেত মর্মরে সেই বিরহীর ক্রন্দন মর্মর
গুঞ্জরে অবিরল।

কেমনে জানিল শাহ্‌জাহান, প্রেম পৃথিবীতে মরে যায়!
(তাই) পাষাণ প্রেমের স্মৃতি রেখে গেল পাষাণে লিখিয়া হায়?
(যেন) তাজের পাষাণ অঞ্জলি লয়ে নিঠুর বিধাতা পানে
অতৃপ্ত প্রেম বিরহী-আত্মা আজো অভিযোগ হানে
(বুঝি) সেই লাজে বালুকায় মুখ লুকাইতে চায়
শীর্ণা যমুনা জল।।

মাগো চিন্ময়ী রূপ ধরে আয়

মাগো চিন্ময়ী রূপ ধরে আয়
মৃণ্ময়ী রূপ তোর পূজি শ্রীদুর্গা
তাই দুর্গতি ঘুচিল না হায়।

যে মহাশক্তির হয় না বিসর্জন
অন্তরে বাহিরে প্রকাশ যার অনুক্ষণ
মন্দিরে দুর্গে রহে না যে বন্দী
সেই দুর্গারে দেশ চায়।

আমাদের দ্বিভুজে দশভুজা শক্তি
দে পরব্রক্ষ্মময়ী
শক্তি পূজার ফল ভক্তি কি পাব শুধু
হব না কি বিশ্বজয়ী?

এ পূজা বিলাস সংহার কর
যদি পুত্র শক্তি নাহি পায়।

চাঁদ হেরিছে চাঁদমুখ তার সরসীর আরশিতে

চাঁদ হেরিছে চাঁদমুখ তার সরসীর আরশিতে
ছোটে তরঙ্গ বাসনা ভঙ্গ সে অঙ্গ পরশিতে।

হেরিছে রজনী রজনী জাগিয়া
চকোর উতলা চাঁদের লাগিয়া
কাঁহা পিউ কাঁহা ডাকিছে পাপিয়া
কুমুদীরে কাঁদাইতে।

না জানি সজনী কত সে রজনী
কেঁদেছে চকোরী পাপিয়া
হেরেছে শশীরে সরসী মুকুরে
ভীরু ছায়া তরু কাঁপিয়া।

কেঁদেছে আকাশে চাঁদের ঘরণী
চিরবিরহিণী রোহিণী ভরণী
অবশ আকাশ বিবশা ধরণী
কাঁদানীয়া চাঁদিনীতে।।

শূণ্য এ বুকে পাখি মোর আয়

শূণ্য এ বুকে পাখি মোর আয়
ফিরে আয় ফিরে আয়।
তোরে না হেরিয়া সকালের ফুল
অকালে ঝরিয়া যায়।
তুই নাই বলে ওরে উন্মাদ
পান্ডুর হলো আকাশের চাঁদ
কেঁদে নদী হলো করুণ বিষাদ
ডাকে আয় তীরে আয়।।
আকাশে মেলিয়া শত শত কর
খোঁজে তোরে তরু ওরে সুন্দর
তোর তরে বনে উঠিয়াছে ঝড়
লুটায় লতা ধূলায়।
তুই ফিরে এলে ওরে চঞ্চল
আবার ফুটিবে বন ফুল দল
ধূসর আকাশ হইবে সুনীল
তোর চোখের চাওয়ায়।।

হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে

হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে
কুড়াই ঝরা ফুল একেলা আমি
তুমি কেন হায় আসিলে হেথায়
সুখের স্বরগ হইতে নামি।

চারিপাশে মোর উড়িছে কেবল
শুকনো পাতা মলিন ফুলদল
বৃথাই কেন হায় তব আঁখিজল
ছিটাও অবিরল দিবসযামী।

এলে অবেলায় পথিক বেভুল
বিঁধিছে কাঁটা নাহি যবে ফুল
কি দিয়া বরণ করি ও চরণ
নিভিছে জীবন, জীবনস্বামী।।

Wednesday 13 June 2012

আমার কোন কুলে আজ

আমার কোন কুলে আজ ভিড়লো তরী
এ কোন সোনার গাঁয়?
আমার ভাটির তরী আবার কেন
উজান যেতে চায়?

দুখেরে কান্ডারী করি
আমি ভাসিয়েছিলাম ভাঙ্গা তরী
তুমি ডাক দিলে কি স্বপন পরী
নয়ন ইশারায় গো?

নিভিয়ে দিয়ে ঘরের বাতি
ডেকেছিলে ঝড়ের রাতি
কে এলে মোর সুরের সাথি
গানের কিনারায়?

সোনার দেশের সোনার মেয়ে
ওগো হবে কি মোর তরীর নেয়ে
এবার ভাঙ্গা তরী চল বেয়ে
রাঙা অলকায়।।

আমার হাতে কালি মুখে কালি

আমার হাতে কালি মুখে কালি
আমার কালিমাখা মুখ দেখে মা
পাড়ার লোকে হাসে খালি।

মোর লেখাপড়া হল না মা
আমি ম দেখিতেই দেখি শ্যামা।
আমি ক লিখিতেই কালী বলে
(মা) নাচি দিয়ে করতালি।

কালো আঁক দেখে মা ধারাপাতের
ধারা নামে আঁখিপাতে।
আমার বর্ণপরিচয় হল না মা
তোর বর্ণ বিনা কালী।

যা লিখিস মা বনের পাতায়
সাগর জলে আকাশ খাতায়
আমি সে লেখা তোর পড়তে পারি
(লোকে) মূর্খ বলে দিক না গালি।।

আমি যার নূপুরের ছন্দ

আমি যার নূপুরের ছন্দ, বেণুকার সুর
কে সেই সুন্দর, কে?
আমি যার বিলাস যমুনা, বিরহ বিধুর
কে সেই সুন্দর, কে?

যাহার গলে আমি বনমালা
আমি যার কথার কুসুমডালা
না দেখা সুদূর
কে সেই সুন্দর, কে?

যার শিখীপাখা লেখনী হয়ে
গোপনে মোরে কবিতা লেখায়
সে রহে কোথায় হায়?

আমি যার বরষার আনন্দ কেকা
নৃত্যের সঙ্গিনী দামিনীরেখা
যে মম অঙ্গের কাঁকন-কেয়ূর
কে সেই সুন্দর, কে?

আন্‌মনে জল নিতে

আন্‌মনে জল নিতে ভাসিল গাগরী
সাঁতার জানি না, আনি কলস কেমন করি।

জানি না বলিব কি, শুধাবে যবে ননদী
কাহার কথা ভাবে পোড়া মন নিরবধি
গাগরী না ভাসিয়া ভাসিতাম আমি যদি-
কি বলিব কেন মোর ভিজিল গো ঘাগরী

একেলা কুলবধূ, পথ বিজন, নদীর বাঁকে
ডাকিল বৌ-কথা-কও কেন হলুদ চাঁপার শাখে
বিদেশে শ্যাম আমার, পড়ল মনে সেই ডাকে
ঠাঁই দে যমুনে বুকে, আমিও ডুবিয়া মরি।।

অনেক ছিল বলার

অনেক ছিল বলার, যদি সেদিন ভালোবাসতে
পথ ছিল গো চলার, যদি দুদিন আগে আসতে
আজকে মহাসাগর স্রোতে চলেছি দূর পারের পথে
ঝরা পাতা হারায় যথা, সেই আঁধারে ভাসতে
যাই সেই আঁধারে ভাসতে।

গহন রাতি ডাকে আমায়, এসে তুমি আজকে
কাঁদিয়ে গেলে হায় গো আমার বিদায় বেলার সাঁঝকে
আসতে যদি হে অতিথি, ছিল যখন শুক্লা তিথি
ফুটতো চাঁপা, সেদিন যদি চৈতালী চাঁদ হাসতে।।

যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারনি

যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারনি
কেন মনে রাখ তারে
ভুলে যাও তারে ভুলে যাও একেবারে
আমি গান গাহি আপনার দুখে
তুমি কেন আসি দাঁড়াও সুমুখে
আলেয়ার মত ডাকিও না আর
নিশিথ অন্ধকারে
দোয়া কর, মোরে দোয়া কর
আর আমারে লইয়া খেলোনা নিঠুর খেলা
শত কাঁদিলেঅ ফিরিবেনা
সেই শুভ লগনের বেলা
আমি ফিরি পথে, তাহে কার ক্ষতি
তব চোখে কেন সজল মিনতী
আমি কি কোনদিন এসে দাঁড়ায়েছি তব দ্বারে
ভুলে যাও মোরে ভুলে যাও একেবারে

গভীর নিশীথে ঘুম ভেঙ্গে যায়

গভীর নিশীথে ঘুম ভেঙ্গে যায়
কে যেন আমারে ডাকে
সে কি তুমি? সে কি তুমি?
সে কি তুমি?

কার স্মৃতি বুকে পাষানের মত ভার হয়ে যে থাকে
সে কি তুমি, সে কি তুমি?
কাহার ক্ষুধিত প্রেম যেন হায়
ভিক্ষা চাহিয়া কাঁদিয়া বেড়ায়
কার সকরুন আঁখি দুটি যেন রাতের মত
মুখপানে চেয়ে থাকে
সে কি তুমি? সে কি তুমি?

নিশির বাতাশ কাহার হুতাশ দীর্ঘ নিশাস সম
ঝড় তোলে এসে অন্তরে মোর
ওগো দুরন্ত মম
সে কি তুমি, সে কি তুমি

মহাসাগরের ঢেউ এর মতন
বুকে এসে বাজে কাহার রোদন
পিয়া পিয়া নাম ডাকে অবিরাম বনের পাপিয়া পাখি
আমার চম্পা- শাঁখে
সে কি তুমি? সে কি তুমি?

Sunday 10 June 2012

আজি মনে মনে লাগে হোরী

আজি মনে মনে লাগে হোরী
আজি বনে বনে জাগে হোরী।।
ঝাঁঝর করতাল খরতালে বাজে
বাজে কংকন চুড়ি মৃদুল আওয়াজে
লচকিয়া আসে মুচকিয়া হাসে
প্রেম-উল্লাসে শ্যামল গৌরী।।
আজি কদম্ব তমাল রঙ্গে লালে লাল
হলো কৃষ্ণ ভ্রমর ভ্রমরী
রঙ্গের উজান চলে কালো যমুনার জলে
আবীর রাঙ্গা হলো ময়ূর-ময়ূরী।।
মোর হৃদি বৃন্দাবন যেন রাঙে
রাধা শ্যাম যুগল চরণ রাগে
ও চরণ ধূলি যেন ফাগ হ’য়ে মেশে রে
অন্তরে পড়ে মোর ঝরি’।।

Saturday 9 June 2012

মদির স্বপনে মম মন ভবনে জাগো

মদির স্বপনে মম মন ভবনে জাগো
চঞ্চলা বাসন্তিকা, ওগো ক্ষনিকা
ওগো ক্ষনিকা।।

মোর গগনের ঊল্কার প্রায়
চমকি ক্ষনেক চকিতে মিলায়
তোমার হাসির যুঁই কনিকা
ওগো ক্ষনিকা, ওগো ক্ষনিকা।।

পুষ্পধনু তব মন রাঙ্গানো
বঙ্কিম ভুরু হানো হানো
তোমার উতল উত্তরীয়
আমারো চোখে প্রিয় ছুঁইয়ে দিও
যৌবনের দাও রাজ- টীকা
ওগো ক্ষনিকা, ওগো ক্ষনিকা

আমি হবো ওগো আমি হবো
তোমার মালার মলিকা
ওগো ক্ষনিকা, ওগো ক্ষনিকা