যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে -

Thursday 17 March 2011

খাঁদু- দাদু

ও মা! তোমার বাবার নাকে কে মেরেছে ল্যাং?
খ্যাঁদা নাকে নাচছে ন্যাদা- নাক ড্যাঙ্গা-ড্যাং- ড্যাং!

ওঁর নাকতাকে কে করল খ্যাঁদ্যা রাঁদা বুলিয়ে?
চামচিকে- ছা ব'সে যেন ন্যাজুড় ঝুলিয়ে।
বুড়ো গরুর টিকে যেন শুয়ে কোলা ব্যাং।
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।

ওঁর খ্যাঁদা নাকের ছ্যাঁদা দিয়ে টুকি কে দেয় 'টু'!
ছোড়দি বলে সর্দি ওটা, এ রাম! ওয়াক! থুঃ!
কাছিম যেন উপুড় হয়ে ছড়িয়ে আছেন ঠ্যাং!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।

দাদু বুঝি চিনাম্যান মা, নাম বুঝি চাং চু,
তাই বুঝি ওঁর মুখটা অমন চ্যাপটা সুধাংশু।
জাপান দেশের নোটীশ উনি নাকে এঁটেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।

দাদুর নাকি ছিল না মা অমন বাদুড়- নাক
ঘুম দিলে ঐ চ্যাপটা নাকেই বাজতো সাতটা শাঁখ।
দিদিমা তাই থ্যাবড়া মেরে ধ্যাবড়া করেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।

লম্ফানন্দে লাফ দিয়ে মা চলতে বেঁজির ছা
দাড়ির জালে প'ড়ে দাদুর আটকে গেছে গা,
বিল্লি- বাচ্চা দিল্লি যেতে নাসিক এসেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।

দিদিমা কি দাদুর নাকে টাঙাতে 'আলমানাক'
গজাল ঠুঁকে দেছেন ভেঙ্গে বাঁকা নাকের কাঁখ?
মুচি এসে দাদুর আমার নাক করেছেন 'ট্যান'!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।

বাঁশির মতন নাসিকা মা মেলে নাসিকে,
সেথায় নিয়ে চল দাদু দেখন -হাসিকে!
সেথায় গিয়ে করুন দাদু গরুড় দেবের ধ্যান,
খাঁদু দাদু নাকু হবেন, নাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।

Wednesday 16 March 2011

মা

যেখানেতে দেখি যাহা
মা- এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!


হেরিলে মায়ের মুখ
দূরে যায় সব দুখ
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শিতল কোলে
সকল যাতনা ভোলে
কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।

কত করি উৎপাত
আবদার দিন রাত,
সব স'ন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা!
আমাদের মুখ চেয়ে
নিজের র'ন নাহি খেয়ে
শত দোষে দোষী তবু মা তো তাজে না।

ছিনু খোকা এতটুকু,
একটুতে ছোট বুক
যখন ভাঙ্গিয়া যেতো, মা-ই সে তখন
বুকে করে নিশিদিন
আরাম-বিরাম-হীন
দোলা দেয়া শুধাতেন, 'কি হলো খোকন?'

আহা সে কতই রাতি
শিয়রে জ্বালায়ে বাতি
একটু অসুখ হলে জাগেন মাতা,
সব-কিছু ভুলে গিয়ে
কেবল আমায়ের নিয়ে
কত আকুলতা যেন জগন্মাতা।

যখন জন্ম নিনু
কত অসহায় ছিনু
কাঁদা ছাড়া নাহি জানিতাম কোন কিছু,
ওঠা বসা দূরে থাক-
মুখে নাহি ছিল নাক,
চাহনি ফিরিত শুধু আর পিছি পিছু।

তখন সে মা আবার
চুমু খেয়ে বারবার
চাপিতেন বুকে, শুধু একটি চাওয়ায়
বুঝিয়া নিতেন যত
আমার কি ব্যথা হোতো,
বল কে এমন স্নেহে বুকটি ছাওয়ায়।।

তারপর কত দুখে
আমারে ধরিয়া বুকে
করিয়া তুলেছে মাতা দেখ কত বড়
কত না সে সুন্দর
এ দেহ এ অন্তর
সব মোরা ভাই বোন হেথা যত পড়।

পাঠশালা হতে যবে
ঘরে ফিরি যাব সবে,
কত না আদরে কোলে তুলি' নেবে মাতা,
খাবার ধরিয়া মুখে
শুধাবেন কত সুখে
কত আজ লেখা হলো, পড়া কত পাতা?


পড়া লেখা ভালো হ'লে
দেখেছ সে কত ছলে
ঘরে ঘরে মা আমার কত নাম করে।
বলে, 'মর খোকামনি!
হীরা- মানিকের খনি,
এমনটি নাই কারো!' শুনে বুক ভরে।

গা'টি গরম হলে
মা সে চোখের জলে
ভেসে বলে 'ওরে যাদু কি হয়েছে বল।'
কত দেবতার 'থানে'
পীরে মা মানত মানে-
মাতা ছাড়া নাই কারো চোখে এত জল।

যখন ঘুমায়ে থাকি
জাগে রে কাহার আ৬খি
আমার শিয়রে, আহা কিসে হবে ঘুম।
তাই কত ছড়া গানে
ঘুম-পাড়ানীরে আনে,
বলে,'ঘুম! দিয়ে যা রে খুকু-চখে চুম।'

দিবানিশি ভাবনা
কিসে ক্লেশ পাব না,
কিসে সে মাউষ হব, বড় হব কিসে;
বুক ভরে ওঠে মা'র
ছেলেরি গরবে তাঁর,
সব দুখ সুখ হয় মায়ের আশিসে।

আয় তবে ভাই বোন,
আয় সবে আয় শোন
গাই গান, পদধুলি শিরে লয়ে মা'র;
মা'র বড় কেহ নাই-
কেউ নাই কেউ নাই!
নত করি বল সবে 'মা আমার! মা আমার!'

সালাম অস্ত 'রবি'

কাব্য-গীতির শ্রেষ্ঠ স্রষ্ঠা, দ্রষ্ঠা, ঋষি ও ধ্যানী
মহাকবি রবি অস্ত গিয়াছে! বীণা, বেণুকা ও বাণী
নীরব হইল। ধুলির ধরণী জানিনা সে কত দিন
রস- যমুনার পরশ পাবেনা। প্রকৃতি বাণীহীন
মৌন বিষাদে কাঁদিবে ভুবনে ভবনে ও বনে একা;
রেখায় রেখায় রুপ দিবে আর কাহার ছন্দ লেখা?
অপ্রাকৃত মদনে মাধবী চাঁদের জ্যোৎস্না দিয়া
রূপায়িত রসায়িত করিবে কে লেখনী, তুলিকা নিয়া?

ব্যাস, বাল্মীকি,কালিদাস, খৈয়াম, হাফিজ ও রুমী
আরবের ইমরুল কায়েস যে ছিলে এক সাথে তুমি!
সকল দেশের সক্ল কালের সকল কবিরে ভাঙ্গি'
তাঁহাদের রুপে রসে রাঙ্গাইয়া, বুঝি কত যুগ জাগি'
তোমারে রচিল রসিক বিধাতা, অপরুপ সে বিলাস,
তব রুপে গুনে ছিল যে পরম সুন্দরের আভাস।

এক সে রবির আলোকে তিমির- ভীত এ ভারপ্তবাসী
ভেলেছিল প্রাধীনতা- পিড়ন দুঃখ- দৈন্যরাশি।
যেন উর্ধ্বের বরাভয় তুমি আল্লাহর রহমত,
নিত্য দিয়াছ মৃত এ জাতিরে অমৃত শরবত,
সকল দেশের সব জাতির সকল লোকের তুমি
অর্ঘ্য আনিয়া ধন্য করিলে ভারত- বঙ্গভুমি।।

তোমার মরুতে তোমার আলোকে ছায়া- তরু ফুল-লতা
জমিয়া চির স্নিগ্ধ করিয়া রেখেছিল শত ব্যথা।
অন্তরে আর পাইনা যে আলো মানস-গগন-কবি,
বাহিরের রবি হেরিয়া জাগে যে অন্তরে তব ছবি।
গোলাব ঝরেছে, গোলাবি আতর কাঁদিয়া ফিরিছে হায়।
আতরে কাতর করে আরো প্রান, ফুলেরে দেখিতে চায়।

ফুলের, পাখির, চাঁদ-সুরুজের নাহি ক' যেমন জাতি,
সকলে তাদেরে ভালোবাসে, ছিল তেমনি তোমার খ্যাতি।
রস-লোক হতে রস দেয় যারা বৃষ্টিধারার প্রায়
তাদের নাহি ক' ধর্ম ও জাতি, সকলে ঘরে যায়
অবারিত দ্বার রস- শিল্পীর, হেরেমেও অনায়াসে
যায় তার সুর কবিতা ও ছবি আনন্দে অবকাশে।

ছিল যে তোমার অবারিত দ্বার সকল জাতির গেহে,
তোমারে ভাবিত আকাশের চাঁদ, চাহিত গভীর স্নেহে।
ফুল হারাইয়া আঁচলে রুমালে তোমার সুরভি মাখে
বক্ষে নয়নে বুলায়ে আতর, কেঁদে ঝরাফুল ডাকে।

আপন জীবন নিঙ্গাড়ি' যেজন তৃষাতুর জনগণে
দেয় প্রেম রস, অভয় শক্তি বসি' দূর নির্জনে,
মানুষ তাহারি তরে কাঁদে, কাঁদে তারি তরে আল্লাহ,
বেহেশত হতে ফেরেশ্তা কহে তাহারেই বাদশাহ।

শত রুপে রঙ্গে লীলা- নিকেতন আল্লার দুনিয়াকে
রাঙ্গায় যাহারা, আল্লার কৃপা সদা তাঁরে ঘিরে থাকে।
তুমি যেন সেই খোদার রহম, এসেছিল রুপ ধরে,
আর্শের ছায়া দেখাইয়া ছিলে রুপের আর্শি ভরে।

কালাম ঝরেছে তোমার কলমে, সালাম লইয়া যাও
উর্দ্ধে থাকি' এ পাষান জাতিরে রসে গলাইয়া দাও।।

বাঁশীর ব্যথা- ( মাওলানা জালালুদ্দিন রুমী)

শোন দেখি মন বাঁশের বাঁশির বুক বোপে কি উঠছে মধুর সুর,
সুর তো নয় ও, কাঁদছে যে রে বাঁশরী বিচ্ছেদ- বিধুর
কোন অসীমের মায়াতে
সসীম তার এই কায়াতে
এই যে আমার দেহ- বাঁশি, কান্না সুরের গুমরে তায়,
হায়রে! সে যে সুদুর আমার অচিন- প্রিয়ায় চুমুতে চায়।
প্রিয়ায় পাবার ইচ্ছে যে,
উড়ছে সুরের বিচ্ছেদে।

নজরুল রচনাবলী খন্ড-২ / পৃষ্ঠা- ৫০৪

রুবাইয়াত-ই- হাফিজ- ৮

তোমার পথে মোর চেয়ে কেউ,
সর্বহারা নাই কো, প্রিয়!
আমার চেয়ে তোমার কাছে,
নাই সখি, কেউ অনাত্নীয়!
তোমার বেণীর শৃংখলে গো
নিত্য আমি বন্দী কেন?
মোর চেয়ে কেউ হয়নি পাগল,
পিয়ে তোমার প্রেম- অমিয়!!

রুবাইয়াত-ই- হাফিজ- ৭

আমার সকল ধ্যানে জ্ঞানে,
বিচিত্র সে সুরে সুরে
গাহি তোমার বন্দনা গান,
রাজাধিরাজ, নিখিল জুড়ে!
কী বলেছে তোমার কাছে
মিথ্যা ক'রে আমার নামে
হিংসুকেরা,- ডাকলে না আজ,
তাইতে আমায় তোমার পুরে!!

রুবাইয়াত-ই- হাফিজ- ৬

রবি, শশী, জ্যোতিষ্ক সব,
বান্দা তোমার, জ্যোতির্মতি!
যেদিন হ'তে বান্দা হ'ল
পেল আঁধার -হরা জ্যোতি!
রাগে- অনুরাগে মেশা
তোমার রুপের রৌশনীতে
চন্দ্র হ'ল স্নিগ্ধ-কিরণ,
সূর্য হল দীপ্ত অতি!!

রুবাইয়াত-ই- হাফিজ- ৫

তারি আমি বান্দা গোলাম,
সৌখিন যে রস- পিয়াসী।
গলায় যাহার দোলায় বিধি
পাগল প্রেমের শিকলি ফাঁসি!
প্রেমের এবং প্রেম জানানোর
স্বাদ অ-রসিক বুঝবে কিসে?
পান করে এ সুরার ধারা,
সুর- লোকের রুপ- বিলাসী!!

রুবাইয়াত-ই- হাফিজ- ৪

চন্দ্র- সূর্য রাত্রি দিবা
বিচিত্র সে আবেগ ভরে
ওগো প্রিয়, দেখি- তোমার
ধূলির 'পরে প্রণাম করে!
হৃদয় আঁখির সাধ হতে মোর
করো না গো নিরাশ মোরে,
রইবে ন্দূরে- বসিয়ে আমায়,
প্রতীক্ষার ঐ অগ্নি পরে?

রুবাইয়াত-ই- হাফিজ- ৩

পরান ভরে পিয়ে শরাব,
জীবন যাহা চিরকালের।
মৃত্যু-জরা-ভরা জগৎ
ফিরে কেহ আসবেনা ফের।
ফুলের বাহার, গোলাব- কপোল,
গেলাস- সাথী মস্ত-ইয়ার,
এক লহমার খুশির তুফান,
এইতো জীবন!- ভাবনা কিসের!!

রুবাইয়াত-ই- হাফিজ- ২

তোমার হাতের সকল কাজে
হবে শুভ নিরবধি-
প্রিয়, তোমার ভাগ্যবশে
নিয়তির এই নির্দেশ যদি;
দাও তাহলে পান করে নিই
তোমার দেওয়া শিরীন শরাব,
হ'লেও হব চির-অমর,
হয়ত ও-মদ সুধা-নদী!!

রুবাইয়াত-ই- হাফিজ- ১

হায় রে, আমার এ বদনসিব
হ'ত যদি মনের মত!
কিংবা গ্রহের চক্র ঘুরে
আবার আমার বন্ধু হত!
পালিয়ে যেত যৌবন মোর
যখন হাতের মুঠি হ'তে,
রেকাব সম রাখত ধ'রে
এই জরারে সমুন্নত!!

রুবাইয়াত- ১৯

কারুর প্রানে দুখ দিওনা, করো বরং হাজার পাপ,
পরের মনের শাস্তি নাশি বাড়িও না তার মনস্তাপ।
আমর আশিস লাভের আশা রয় যদি, হে বন্ধু মোর,
আপনি সয়ে ব্যথা, মুছো পরের বুকের ব্যথার ছাপ।

রুবাইয়াত- ১৮

সবকে পারি ফাঁকি দিতে মনকে পারি ঠারতে চোখ,
খোদার উপর খোদকারিতে ব্যর্থ হয় এ মিছে স্তোক।
তীক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ বুদ্ধি দিয়ে জাল বুনিলাম চাতুর্যের,
মুহূর্তে তা দিল ছিঁড়ে হিংস্র নিয়তির সে নখ।

রুবাইয়াত- ১৭

ভালো করেই জানি আমি, আছে এক রহস্য লোক,
যায় না বলা সকলকে তা ভালোই হোক কি মন্দ হোক।
আমার কথা ধোঁয়ায় ভরা, ভাংতে তবু পারবো না-
থাকি সে কোন গোপন- লোকে, দেখতে যাহা পায় না চোখ।

রুবাইয়াত- ১৬

তত্ত্ব- গুরু খৈয়ামেরে পৌঁছে দিও মোর আশিস
ওর মত লোক বুঝল কিনা উলটো করে মোর হদিস!
কথায় আমি বলেছি, যে, সবার তরেই মদ হারাম?
জ্ঞানীর তরে অমৃত এ, বোকার তরে উহাই বিষ।

রুবাইয়াত- ১৫

খৈয়াম! তুই কাঁদিস কেন পাপের ভয়ে অযথা?
দুঃখ করে কেঁদে কি তোর ভরবে প্রান শূন্যতা?
জীবনে যে করল না পাপ নাই দাবি তার তাঁর দয়ায়
পাপীর তরে দয়ার সৃষ্টি, আনন্দ কর ভোল ব্যথা।

রুবাইয়াত- ১৪

দাস হয়োনা মাৎসর্যের, হয়ো না কো অর্থ-যখ,
ঘাড়ে যেন ভর করে না ঠুঙ্কো যশোখ্যাতির সখ,
অগ্নি-সম প্রদীপ্ত হও, বন্যা- সম প্রানেদ্বেল,
হয়ো না কো পথের ধূলি, হাওয়ার হাতের ক্রীড়নক!

রুবাইয়াত- ১৩

দরিদ্ররে যদি তুমি প্রাপ্য তাহার অংশ দাও,
প্রানে কারুর না দাও ব্যথা, মন্দ কারুর নাহি চাও,
তখন তুমি শাস্ত্র মেনে না-ই চললে তায় বা কি!
আমি তোমায় স্বরগ দিব, আপাতত শরাব নাও।

রুবাইয়াত- ১২

মার্কা- মারা রইস যত- ঈষৎ দুঃখের বোঝার ভার
বইতে যাঁরা পড়েন ভেঙ্গে, বিস্ময়ের নাই অন্ত আর,
তাঁরাই যখন দীন- দরিদ্রে দেখেন দ্বারে পাততে হাত
তাদের তখন চিনতে নারেন মানুষ বলে এই ধরার।

রুবাইয়াত- ১১

দুঃখে আমি মগ্ন প্রভু, দুয়ার খোলো করুণার!
আমায় করো তোমার জ্যোতি, অন্তর মোর অন্ধকার।
স্বর্গ যদি অর্জিতে হয় এতই পরিশ্রম করে-
সে ত আমার পারিশ্রমিক, নয় সে দয়ার দান তোমার।

রুবাইয়াত- ১০

তোমার দয়ার পেয়ালা প্রভু উপচে পড়ুক আমার'পর
নিত্য ক্ষুধার অন্ন পেতে না যেন হয় পাততে কর।
তোমার মদে মস্ত করো আমার 'আমি'র পাই সীমা,
দুঃখে যেন শির না দুখায় অতঃপ্র, হে দুঃখহর!

রুবাইয়াত- ৯

যদিও মদ নিষিদ্ধ ভাই, যত পার মদ চালাও,
তিনটি কথা স্মরণ রেখে; কাহার সাথে মদ্য খাও?
মদ- পানের কি যোগ্য তুমি? কি মদই বা করেছ পান?-
জ্ঞান পেকে না ঝুনো হলে মদ খেয়ো না এক ফোঁটাও।

রুবাইয়াত- ৮

অর্থ বিভব যায় উড়ে সব রিক্ত করে মোদের কর,
হৃদপিন্ড ছিঁড়ে মোদের মৃত্যুর নিষ্ঠুর নখর;
মৃত্যু- লোকের চোখ এড়িয়ে ফেরত কেহ আসলনা,
যে সব পথিক গেল সেথায় নিয়ে তাদের খোশ খবর।

রুবাইয়াত- ৭

রুবাইয়াত- ৬

যোগ্য হাতে জ্ঞানীর কাছে ন্যস্ত কর এই জীবন,
নির্বোধদের কাছ থেকে ভাই থাকবে তফাত দশ যোজন!
জ্ঞানী হাকিম বিষ যদি দেয় বরং তাহাই করবে পান,
সুধাও যদি দেয় আনাড়ি- করবে তাহাই বিসর্জন।

রুবাইয়াত-৫

দোষ দিও না মদ্যপায়ীর, তোমরা যারা খাওনা মদ;
ভালো করার থাকলে কিছু, মদ খাওয়া মোর হত রদ,
মদ না পিয়েও, হে নীতিবিদ, তোমরা যে- সব কর পাপ,
তাহার কাছে আমরাও শিশু, হই যতই মাতাল- বদ।

রুবাইয়াত-৪

আমার কাছে শোন- উপদেশ- কাউকে কভূ বলিসনে-
মিথ্যা ধরায় কাউকে প্রানের বন্ধু মেনে চলিসনে।
দুঃখ ব্যথায় টলিসনে তুই, খুঁজিসনে তার প্রতিষেধ,
চাসনে ব্যথার সমব্যথী, শির উঁচু রাখ ঢলিসনে।

রুবাইয়াত-৩

রহস্য শোন সেই সে লোকের আত্না যথা বিরাজে,
ওরে মানব। নিখিল সৃষ্টি লুকিয়ে আছে তোর মাঝে।
তুই-ই মানুষ, তুই-ই পশু, দেবতা-দানব স্বর্গদূত,
যখন হতে চাইবি রে যা হতে পারিস তুই তা যে।

রুবাইয়াত-২

প্রভাত হল! শরাব দিয়ে করব সতেজ হৃদয়- পুর,
যশোখ্যাতির ঠুনকো এ কাচ করব ভেঙ্গে চাখনাচুর।
অনেক দিনের সাধ অ আশা এক নিমিষে করব ত্যাগ,
পরব প্রিয়ার বেণী বাঁধন, ধরব বেণুর বিধুর সুর

রুবাইয়াত- ১

ঘুমিয়ে কেন জীবন কাটাস? কইল ঋষি স্বপ্নে মোর,
আনন্দ গুল প্রস্ফুটিত করতে পারে ঘুম কি তোর?
ঘুম মৃত্যুর যময ভ্রাতা, তার সাথে ভাব করিসনে,
ঘুম দিতে ঢের পাবি সময় কররে তর জনম ভোর।