যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে -

Tuesday, 31 May 2011

বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি

"বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি- আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম- সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম..."
 - কাজী নজরুল ইসলাম-

আমি হব সকাল বেলার পাখি

"আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম বাগে
উঠব আমি ডাকি।

"সুয্যি মামা জাগার আগে
উঠব আমি জেগে,
'হয়নি সকাল, ঘুমোও এখন',
মা বলবেন রেগে।


বলব আমি- 'আলসে মেয়ে
ঘুমিয়ে তুমি থাক,
হয়নি সকাল, তাই বলে কি
সকাল হবে নাক'?

আমরা যদি না জাগি মা
কেমনে সকাল হবে ?
তোমার ছেলে উঠবে মা গো
রাত পোহাবে তবে।

Monday, 30 May 2011

চল চল চল

কোরাসঃ
চল চল চল!
ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল
নিম্নে উতলা ধরণি তল,
অরুণ প্রাতের তরুণ দল
চল রে চল রে চল
চল চল চল।।

ঊষার দুয়ারে হানি' আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত,
আমরা টুটাব তিমির রাত,
বাধার বিন্ধ্যাচল।

নব নবীনের গাহিয়া গান
সজীব করিব মহাশ্মশান,
আমরা দানিব নতুন প্রাণ
বাহুতে নবীন বল!
চল রে নও-জোয়ান,
শোন রে পাতিয়া কা-
মৃত্যু-তরণ-দুয়ারে দুয়ারে
জীবনের আহবান।
ভাঙ রে ভাঙ আগল,
চল রে চল রে চল
চল চল চল।।

জীবন-বন্দনা

গাহি তাহাদের গান-
ধরণীর হাতে দিল যারা আনি' ফসলের ফরমান।
শ্রম-কিণাঙ্ক-কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি-তলে
ত্রস্তা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভ'রে ফুলে-ফলে!
বন্য শ্বাপদ-সঙ্কুল জরা-মৃত্যু-ভীষণা ধরা
যাদের শাসলে হল সুন্দর কুসুমিতা মনোহারা।
যারা বর্বর হেথা বাঁধে ঘর পরম অকুতোভয়ে
বনের ব্যাঘ্র ময়ূর সিংহ বিবরের ফণী ল'য়ে।
এল দুর্জয় গতি-বেগ-সম যারা যাযাবর-শিশু
-তারাই গাহিল নব প্রেম-গান ধরণী-মেরীর যিশু-
যাহাদের চলা লেগে
উল্কার মত ঘুরিছে ধরণী শূন্যে অমিত বেগে!

খেয়াল-খুশীতে কাটি' অরণ্য রচিয়া অমরাবতী
যাহারা করিল ধ্বংস সাধপ্ন পুনঃ চঞ্চলমতি,
জীবন-আবেগে রুধিতে না পারি' যারা উদ্ধত-শির
লঙ্ঘিতে গেল হিমালয়, গেল শুষিতে সিন্ধু-নীর।
নবীন জগৎ সন্ধানে যারা ছুটে মেরু অভিযানে,
পক্ষ বাঁধিয়া উড়িয়া চলেছে যাহারা ঊর্ধ্বপানে!
তবুও থামে না যৌবন বেগ, জীবনের উল্লাসে
চ'লেছে চন্দ্র-মঙ্গল-গ্রহে স্বর্গে অসীমাকাশে।
যারা জীবনের পসরা বহিয়া মৃত্যুর দ্বারে দ্বারে
করিতেছে ফিরি, ভীম রণভূমে প্রান বাজি রেখে হারে।
আমি-মরু-কবি-গাহি সেই বেদে বেদুঈনদের গান,
যুগে যুগে যারা করে অকারণ বিপ্লব-অভিযান।
জীবনের আতিশয্যে যাহারা দারুন উগ্রসুখে
সাধ করে নিল গরল-পিয়ালা, বর্শা হানিল বুকে!
আষাঢ়ের গিরি-নিঃস্রাব-সম কোনো বাধা মানিল না,
বর্বর বলি' যাহাদের গালি পাড়িল ক্ষুদ্রমনা,
কূপ-মন্ডুক 'অসংযমী'র আখ্যা দিয়াছে যারে,
তারি তরে ভাই গান রচে' যাই, বন্দনা করি তারে।

আমি গাই তারি গান

আমি গাই তারি গান-
দৃপ্ত-দম্ভে যে যৌবন আজ ধরি' অসি খরশান
হইল বাহির অসম্ভবের অভিযানে দিকে দিকে।
লক্ষ যুগের প্রাচীন মমির পিরামিডে গেল লিখে
তাদের ভাঙার ইতিহাস-লেখা। যাহাদের নিঃশ্বাসে
জীর্ণ পুঁথির শুষ্ক পত্র উড়ে গেল এক পাশে।
যারা ভেঙে চলে অপ-দেবতার মন্দির আস্তানা,
বক-ধার্মিক নীতি-বৃদ্ধের সনাতন তাড়িখানা।
যাহাদের প্রান স্রোতে ভেসে গেল পুরাতন জঞ্জাল,
সন্সকারের জগদল-শিলা, শাস্ত্রের কঙ্কাল।
মিথ্যা মোহের পূজা-মন্ডপে যাহারা অকূতোভয়ে
এল নির্মম-মোহ-মুগদর ভাঙনের গদা ল'য়ে
বিধি-নিষেধের চীনের প্রাচীরে অসীম দুঃসাহসে
দু'-হাতে চালাল হাতুড়ি শাবল। গরস্থানেরে চ'ষে
ছুঁড়ে ফেলে যত শব কঙ্কাল বসালো ফুলের মেলা,
যাহাদের ভিড়ে মুখর আজিকে জীবনের বালি-বেলা।
-গাহি তাহাদেরি গান
বিশ্বের সাথে জীবনের পথে যারা আজি আগুয়ান।

-সেদিন নিশীথ-বেলা
দুস্তর পারাবারে যে যাত্রী একাকী ভাসালো ভেলা,
প্রভাতে সে আর ফিরিল না কূলে। সেই দুরন্ত লাগি'
আঁখি মুছি আর রচি গান আমি আজিও নিশীথে জাগি'।
আজো বিনিদ্র গাহি গান আমি চেয়ে তারি পথ-পানে।
ফিরিল না প্রাতে যে জন সে-রাতে উড়িল আকাশ-যানে
নব জগতের শরসন্ধানী অসীমের পথ-চারী,
যার ভরে জাগে সদা সতর্ক মৃত্যু দুয়ারে দ্বারী!

সাগর গর্ভে, নিঃসীম নভে, দিগদিগন্তে জু'ড়ে
জীবনোদ্বেগে তাড়া ক'রে ফেরে নিতি যারা মৃত্যুরে,
মানিক আহরি' আনে যারা খুঁড়ি' পাতাল যক্ষপুরী;
নাগিনীর বিষ-জ্বালা সয়ে করে ফণা হ'তে মণি চুরি।
হানিয়া বজ্র-পানির বজ্র উদ্ধত শিরে ধরি'
যাহারা চপলা মেঘ-কন্যারে করিয়াছে কিঙ্করী।
পবন যাদের ব্যজনী দুলায় হইয়া আজ্ঞাবাহী,-
এসেছি তাদের জানাতে প্রণাম, তাহাদের গান গাহি।
গুঞ্জরি' ফেরে ক্রন্দন মোর তাদের নিখিল ব্যেপে-
ফাঁসির রজ্জু ক্লান্ত আজিকে যাহাদের টুঁটি চেপে!
যাহাদের কারাবাসে
অতীত রাতের বন্দিনী ঊষা ঘুম টুটি' ঐ হাসে!

বর্ষা-বিদায়

ওগো বাদলের পরী!
যাবে কোন দূরে, ঘাটে বাঁধা তব কেতকী পাতার তরী।
ওগো ক্ষনিকা, পুব-অভিসার ফুরাল কি আজি তব?
পহিল ভাদরে পড়িয়াছে মনে কোন দেশ অভিনব?


তোমার কপোল-পরশ না পেয়ে পান্ডুর কেয়া-রেণু,
তোমারে স্মরিয়া ভাদরের ভরা নদীতটে কাঁদে বেণু!
কুমারীর ভীরু বেদনা-বিধুর প্রণয়-অশ্রু সম
ঝ'রিছে শিশির-সিক্ত শেফালি নিশি-ভোরে অনুপম।

ওগো ও কাজল-মেয়ে,
উদাস আকাশ ছলছল চোখে তব মুখে আছে চেয়ে!
কাশফুল-সম শুভ্র ধবল রাশ রাশ শ্বেত মেঘে
তোমার তরী উড়িতেছে পাল উদাস বাতাস লেগে।

ওগো ও জলের দেশের কন্যা! তব ও বিদায়-পথে
কাননে কাননে কদম কেশর ঝ'রিছে প্রভাত হ'তে।
তোমার আদরে মুকুলিতা হ'য়ে উঠিল যে বল্লরী
তরুর কন্ঠে জড়াইয়া তারা কাঁদে দিবানিশি ভরি'।

'বৌ কথা-কও' পাখী
উড়ে গেছে কোথা, বাতায়নে বৃথা বউ করে ডাকাডাকি।
চাঁপার গেলাস গিয়াছে ভাঙিয়া, পিয়াসী মধুপ এসে'
কাঁদিয়া কখন গিয়াছে উড়িয়া কমল-কুমুদী-দেশে।
তুমি চ'লে যাবে দূরে,
ভাদরের নদী দু'কূল ছাপায়ে কাঁদে ছলছল সুরে!

যাবে যবে দূরে হিম-গিরি-শিরে ওগো বাদলের পরী,
ব্যথা ক'রে বুক উঠিবে না কভু সেথা কাহারেও স্মরি'?
সেথা নাই জল, কঠিন তুষার, নির্মম শুভ্রতা,-
কে জানে কী ভাল বিধুর ব্যথা-না মধুর পবিত্রতা!

সেথা মহিমার ঊর্ধ্ব শিখরে নাই তরুলতা হাসি,
সেথা রজনীর রজনীগন্ধা প্রভাতে হয় না বাসি।
সেথা যাও তব মুখর পায়ের বরষা-নুপুর খুলি'
চলিতে চকিতে চমকি' উঠ না, কবরী উঠে না দুলি'।
সেথা র'বে তুমি ধেয়ান-মগ্ন তাপসিনী অচপল,
তোমার আশায় কাঁদিবে ধরায় তেমনি 'ফটিক-জল'।

Sunday, 29 May 2011

ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এল রে দুনিয়ায়

ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এল রে দুনিয়ায়
আয় রে সাগর আকাশ বাতাস, দেখবি যদি আয়।।

ধুলির ধরা বেহেশ্ত আজ
জয় করিল, দিল রে লাজ,
আজকে খুশীর ঢল নেমেছে ধূসর সাহারায়।।

দেখ আমিনা মায়ের কোলে
দোলে শিশু ইসলাম দোলে,
কচি মুখের শাহাদাতের বানী সে শোনায়।।

আজকে যত পাপী তাপি
সব গুনাহের পেল মাফি
দুনিয়া হতে বে-ইনসাফী জুলুম নিল বিদায়।।

নিখিল দরুদ পড়ে ল'ইয়ে ও নাম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসাল্লাম
জীন পরী ফেরেশ্তা ছালাম জানায় নবীর পায়।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

এই সুন্দর ফুল সুন্দর ফল

এই সুন্দর ফুল সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি
খোদা তোমার মেহেরবানী।
শস্যশ্যামল ফসল ভরা মাটির ডালিখানি
খোদা তোমার মেহেরবানী।।

তুমি কতই দিলে রতন
ভাই বেরাদর পুত্র স্বজন,
ক্ষুধা পেলেই অন্ন জোগাও
মানি চাইনা মানি।।

খোদা! তোমার তোমার হুকুম তরক করি আমি অতি প্রায়,
তবু আলো দিয়ে বাতাস দিয়ে বাঁচাও এ বান্দায়।
শ্রেষ্ঠ নবী দিলে মোরে
তরিয়ে নিতে রোজ- হাশরে,
পথ না ভুলি তাই ত দিলে
পাক কোরানের বাণী।।
খোদা, তোমার মেহেরবানী।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

খোদা এই গরীবের শোন শোন মোনাজাত

খোদা এই গরীবের শোন শোন মোনাজাত
দিও তৃষ্ণা পেলে ঠান্ডা পানি, ক্ষুধা পেলে লবন- ভাত।।

মাঠে সোনার ফসল দিও
গৃহ ভরা বন্ধু প্রিয়;
আমার হৃদয় ভরা শান্তি দিও
সেই ত আমার আবে হায়াত।।

আমায় দিয়ে কারও ক্ষতি হয়না যেন দুনিয়ায়,
আমি কারো ভয় না করি, মোরেও কেহ যেন ভয় না পায়।

(যবে) মসজিদে যাই তোমারি টানে
(যেন) মন নাহি ধায় দুনিয়া- পানে,
(আমি) ঈদের চাঁদ দেখি যেন
আসলে দুঃখের আঁধার রাত।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

সাহারাতে ফুটলরে ফুল রঙ্গীন গুলে- লালা

সাহারাতে ফুটলরে ফুল রঙ্গীন গুলে- লালা
সেই ফুলেরই খোশবুতে আজ দুনিয়া মাতোয়ালা।।

সে ফুল নিয়ে কাড়াকাড়ি চাঁদ- সুরুয, গ্রহ- তারায়
ঝুঁকে পড়ে চুমে সে ফুল নীল গগন নিরালা।।

সেই ফুলেরই রওশনীতে আরশ কুর্শী রওশন,
সেই ফুলেরই রং লেগে আজ ত্রিভুবন উজালা।।

সেই ফুলেরই গুলিস্তানে আসে লাখো পাখী,
সে ফুলেরে ধরতে বুকে দোলে রে ডাল- পালা।।

চাহে সে ফুন জীন ও ইনসান হুর পরী ফেরেশতায়,
ফকীর দরবেশ বাদশাহ চাহে করতে গলে মালা।।

চেনে রসিক ভোমরা বুলবুল সেই ফুলের ঠিকানা,
কেউ বলে হযরত মোহাম্মদ কেউ বা কমলীওয়ালা।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

মোহাম্মদ নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে

মোহাম্মদ নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে।
তাই কি রে তোর কন্ঠের গান এমন মধুর লাগে।।
ওরে গোলাব নিরিবিলি
(বুঝি) নবীর কদম ছুঁইয়েছিলি
(তাই) তাঁর কদমের খোশবু আজ ও তোর আতরে জাগে।।

মোর নবীরে লুকিয়ে দেখে
তাঁর পেশানীর জ্যোতি মেখে
ওরে ও চাঁদ, রাঙ্গলী কি তুই গভীর অনুরাগে।।

ওরে ভ্রমর, তুই কি প্রথম
চুমেছিলি নবীর কদম,
আজও গুনগুনিয়ে সেই খুশী কি জানাস রে গুলবাগে।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

এ কোন মধুর শরাব দিলে আল আরাবী সাকী

এ কোন মধুর শরাব দিলে আল আরাবী সাকী
নেশায় হলাম দীওয়ানা যে, রঙ্গিন হল’ আঁখি।।

তৌহিদের সিরাজী নিয়ে
ডাকলে সবায়ঃ “যা রে পিয়ে।’’
নিখিল জগৎ ছুটে এল, রইল না কেউ বাকী।।

বসল তোমার মহফিল দূর মক্কা- মদীনাতে,
আল- কোরানের গাইলে গজল শবে কদর রাতে।

নরনারী বাদশাহ ফকির
তোমার রূপে হয়ে অধীর
যা ছিল নজরানা দিল রাঙ্গা পায়ে রাখি।।

তোমার কাসেদ খবর নিয়ে ছুটলো দিকে দিকে,
তোমার বিজয়- বার্তা গেল দেশে দেশে লিখে।

লা-শরীকের জলসাতে তাই
শরীক হল এসে সবাই
তোমার আজান- গান শুনালো হাজার বেলাল ডাকি।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

তৌহিদেরো মুর্শিদ আমার মোহাম্মদের নাম

তৌহিদেরো মুর্শিদ আমার মোহাম্মদের নাম
মুর্শিদ মোহাম্মদের নাম।
ঐ নাম জপলেই বুঝতে পারি, খোদায়ী কালাম
মুর্শিদ মোহাম্মদের নাম।।

ঐ নামেরই রশি ধরে যাই আল্লার পথে,
ঐ নামেরই ভেলায় চড়ে ভাসি নূরের স্রোতে,
ঐ নামের বাতি জ্বেলে দেখি আরশের মোকাম
মুর্শিদ মোহাম্মদের নাম।।

ঐ নামের দামন ধরে আছি আমার কিসের ভয়
ঐ নামের গুনে পাব আমি খোদার পরিচয়।
তাঁর কদম মোবারক যে আমার বেহেশতি তাঞ্জাম
মুর্শিদ মোহাম্মদের নাম।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

আল্লাহ কে যে পাইতে চায় হযরত কে ভালবেসে

আল্লাহ কে যে পাইতে চায় হযরত কে ভালবেসে
আরশ কুর্সী লওহ কালাম না চাইতেই পেয়েছে সে।।

রসুল নামের রশি ধ’রে
যেতে হবে খোদার ঘরে,
নদী তরঙ্গে যে পড়েছে, ভাই
দরিয়াতে সে আপনি মেশে।।

তর্ক করে দুঃখ ছাড়া কী পেয়েছিস অবিশ্বাসী,
কী পাওয়া যায় দেখনা বারেক হযরতেমোর ভালবাসি?

এই দুনিয়ায় দিবা- রাতি
ঈদ হবে তোর নিত্য সাথী;
তুই যা চাস তাই পাবি হেথায়, আহমদ চান যদি হেসে।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

নাম মোহাম্মদ বোল রে মন নাম মোহাম্মদ বোল

নাম মোহাম্মদ বোল রে মন, নাম মোহাম্মদ বোল
যে নাম নিয়ে চাঁদ সিতারা আসমানে খায় দোল।।

পাতায় ফুলে যে নাম আঁকা,
ত্রিভুবনে যে নাম মাখা,
যে নাম নিয়ে হাসীন ঊষার রাঙ্গে রে কপোল।।

যে নাম গেয়ে ধায়রে নদী,
যে নাম সদা গায় জলধি,
যে নাম বহে নিরবধি পবন হিল্লোল।।

যে নাম বাজে মরু সাহারায়,
যে নাম বাজে শ্রাবন- ধারায়,
যে নাম চাহে কাবার মসজিদ, মা আমিনার কোল।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে

তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে।
মধু পূর্ণিমার সেথা চাঁদ দোলে
যেন ঊষার কোলে রাঙ্গা রবি দোলে।।

কুল- মখলুকে আজ ধ্বনি ওঠে,- কে এলো ঐ,
কলেমা শাহাদাতের বাণী ঠোঁটে,- কে এলো ঐ,
খোদার জ্যোতি পেশানিতে ফোটে, -কে এলো ঐ,
আকাশ গোহ তারা পড়ে লুটে- কে এলো ঐ,
পড়ে দরুদ ফেরেশতা, বেহেশতে সব দুয়ার খোলে।।

মানুষে মানুষে অধিকার দিল যে জন,
“এক আল্লাহ ছাড়া প্রভু নাই”, কহিল যে জন,
মানুষের লাগি চির –দীন বেশ ধরিল যে জন,
বাদশাহ ফকিরের এক শামিল করিল যে জন,-
এল ধরায় ধরা দিতে সেই সে নবী,
ব্যথিত মানবের ধ্যানের ছবি
আজি মাতিল বিশ্ব- নিখিল মুক্তি- কলরোলে।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

হেরা হ’তে হেলে দুলে

হেরা হ’তে হেলে দুলে
নুরানী তনু ও কে আসে, হায়!
সারা দুনিয়ার হেরেমের পর্দা
খুলে খুলে যায়-
সে যে আমার কামলীওয়ালা
কামলিওয়ালা।।

তার ভাবে বিভোল রাংগা পায়ের তলে
পর্বত জংগল টলমল টলে,
খোরমা খেজুর বাদাম জাফরানী ফুল
ঝ’রে ঝ’রে যায়।।
সে যে আমার কামলিওয়ালা
কামলিওয়ালা।।

আসমানে মেঘ চলে ছায়া দিতে,
পাহাড়ের অঁসু গলে ঝর্ণার পানিতে,
বিজলী চায় মালা হ’তে
পূর্ণিমা চাঁদ তাঁর মুকুট হ’তে চায়।
সে যে আমার কামলীওয়ালা
কামলিওয়ালা।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

যাবি কে মদিনায়

যাবি কে মদিনায়, আয় ত্বরা করি।
তোর খেয়া- ঘাটে এল পুন্য- তরী।।

আবু বকর উমর খাত্তাব
আর উসমান, আলী হায়দা্
দাঁড়ি এ সোনার তরণীর,
পাপী সব নাই নাই আর ডর।

এ তরীর কান্দারী আহমদ,
পাকা সব মাঝি ও মাল্লা,
মাঝিদের মুখে সারি-গান
শোন ঐ “লা শরীক আল্লাহ!’’
মোরা পাপ দরিয়ার তুফানে আর নাহি ডরি।।

শাফায়ত- পাল ওড়ে তরীর
অনুকূল হাওয়ার ভরে,
ফেরেশতা টানিছে তার গুন,
ভিড়িবে বেহেশতী-চরে।।

ঈমানের পারানী কড়ি আছে যার
আয় এ সোনার নায়,
ধরিয়া দীনের রশি
কলেমার জাহাজ- ঘাটায়।
ফেরদৌস হ’তে ডাকে হুর পরী।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

হে মদিনার নাইয়া

হে মদিনার নাইয়া! ভব- নদীর তুফান ভারি
কর কর পার।
তোমার দয়ায় ত’রে গেল লাখো গুনাহগার
কর কর পার।।

পারের কড়ি নাই যে আমার হয়নি নামাজ রোযা
আমি কূলে এসে বসে, আছি নিয়ে পাপের বোঝা,
ইয়্যা রাসুল মোহাম্মদ বলে কাঁদি বারেবার।।

তোমার নাম গেয়েছি শুধু কেঁদে সুবহ শাম,
মোর তরিবার আর নাই ত পুঁজি বনা তোমার নাম।

আমি হাজারো বার দরিয়াতে ডু’বে যদি মরি
ছাড়বোনা মোর পারের আশা, তোমার চরন –ত্রী,
দেখো সবার শেষে পার যেন হয় এই খিদমতগার।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

যে দুর্দিনের নেমেছে বাদল

যে দুর্দিনের নেমেছে বাদল তাহারি বজ্র শিরে ধরি
ঝড়ের বন্ধু, আঁধার নিশীথে ভাসায়েছি মোরা ভাঙ্গা তরী।।

মোদের পথের উঙ্গিত ঝলে বাঁকা বিদ্যুতে কালো মেঘে,
মরু পথে জাগে নব অঙ্কুর মোদের চলার ছোঁওয়া লেগে,
মোদের মন্ত্রে গোরস্থানে আঁধারে ওঠে গো প্রান জেগে,
দীপ-শলাকার মত মোরা ফিরি ঘরে ঘরে আলো সঞ্চরি।।

নব জীবনের ‘ফোরাত’-কুলে গো কাঁদে ‘কারবালা’ তৃষ্ণাতুর,
উর্ধ্বে শোষন- সূর্য, নিম্নে তপ্ত বালুকা ব্যথা-মরুর।
ঘিরিয়া ইউরোপ- এজিদের সেনা এপার ওপার নিকট, দূর,
এরি মাঝে মোরা ‘আব্বাস’ সম পানি আনি প্রানপন করি।।

যখন জালিম ‘ফেরাউন’ চাহে ‘মুসা’ ও সত্যে মারিতে ভাই,
নীল দরিয়ার মোরা তরঙ্গ বন্যা আনিয়া তারে ডুবাই।
আজো নমরুদ ইসবরাহীমেরে মারিতে চাহিছে সর্বদাই,
আনন্দ- দূত মোরা সে আগুনে ফোটাই পুশপ- মঞ্জরী।।

ভরসার গান শুনাই আমরা ভয়ের ভুতের এই দেশে,
জরা- জীর্ণের যৌবনে দিয়া সাজাই নবীন বর- বেশে।
মোদের আশার ঊষার রঙ্গে গো রাতের অশ্রু যায় ভেসে,
মশাল জ্বালিয়া আলোকিত করি ঝড়ের নিশীথ- শর্বরী।।

নতুন দিনের নব জাত্রিরা চলিবে বলিয়া এই পথে
বিছাইয়া যাই আমাদের প্রান, সুখ, দুখ, সব আজি হতে।
ভবিশ্যতের স্বাধীন- পতাকা উড়ীবে যেদিন জয় রথে
আমরা হাসিব দূর তারা- লোকে অগো তোমাদের সুখ স্মরি।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

তওফিক দাও খোদা

তওফিক দাও খোদা
মুসলিম- জাহাঁ পুনঃ হক আবাদ।
দাও সেই হারানো সুলতানত,
দাও সেই বাহু, সেই দিল আযাদ।।

দাও সেই হামজা সেই বীর অলীদ
দাও সেই ওমর হারুন আল রশিদ
দাও সেই সালাহউদ্দিন আবার
পাপ দুনিয়াতে চলুক জেহাদ।।

দাও বে-দেরেগ তেগ জুলফিকার
খয়রব জয়ীশেরে- খেদার,
দাও সে খলিফা সে হাশমাত
দাও সে মদিনা সে বাগদাদ।।

দাও সেই হামজা সেই বীর অলীদ
দাও সেই ওমর হারুন আল রশিদ
দাও সেই সালাহউদ্দিন আবার
পাপ দুনিয়াতে চলুক জেহাদ।।

দাও সে রুমী সাদী হাফিজ
সেই জামী খৈয়াম সে তবরিজ;
দাও সে বাবর সেই শাহজাহান
সেই তাজমহলের স্বপ্ন সাধ।।

দাও ভায়ে ভায়ে সেই মিলন
সেই স্বার্থত্যাগ সেই দৃপ্ত মন,
হোক বিশ্ব- মুসলিম এক জামাত
উড়ুক নিশান ফের যুক্ত চাঁদ।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

বাজল কিরে ভোরের সানাই

বাজল কিরে ভোরের সানাই
নিঁদ মহলার আঁধার পুরে!
শুনছি আজান গগন তলে
অতীত রাতের মিনার চূড়ে।।

সরাই-খানার যাত্রিরা কি
“বন্ধু জাগো” উঠলো হাঁকি?
নীড় ছেড়ে ঐ প্রভাত পাখী
গুলিস্তানে চলল উড়ে।।

আজ কি আবার কাবার পথে
ভীড় জমেছে প্রভাত হ’তে;
নামল কি ফের হাজার স্রোতে
‘হেরার জ্যোতি জগত জুড়ে।।

আবার খালিদ তারিক মুসা
আনল কি খুন- রঙ্গিন ভূষা,
আসল ছুটে হাসী ঊষা
নও বিলালের শিরীন সুরে।।

তীর্থ পথিক দেশ বিদেশের
আরফাতে আজ জুতল কি ফের
“লা শরীক আল্লাহু”- মন্ত্রের
নাম্ল কি বান পাহাড় তুরে।।

আঁজলা ভ’রে আনল কি প্রান
কারবালাতে বির শহীদান,
আজকে রওশন জমীন আসমান
নও জাওয়ানির সুরখ নূরে।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

দেশে দেশে গেয়ে বেড়াই

দেশে দেশে গেয়ে বেড়াই তোমার নামের গান
হে খোদা, এ যে তোমার হুকুম, তোমারই ফরমান।।

এমনি তোমার নামের আছর
নামাজ রোজার নাই অবসর।
তোমার নামের নেশায় সদা মশগুল মোর প্রান।

তকদিরে মোর এই লিখেছ-
হাজার গানের সুরে
নিত্য দিব তমার আজান
আঁধার মিনার চূড়ে।

কাজের মাঝে হাটে পথে
রণ- ভূমে এবাদতে
আমি তোমার নাম শোনাব, করবো শক্তি দান।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

আমার যখন পথ ফুরাবে

আমার যখন পথ ফুরাবে,
আসবে গহীন রাতি-
তখন তুমি হাত ধরে মর
হয়ো পথের সাথী।।

অনেক কথা হয়নি বলা,
বলার সময় দিও ( খোদা),
আমার তিমির অন্ধ চোখে
দৃষ্টি দিও প্রিয় ( খোদা);
বিরাজ করো বুকে আমার
আরশখানি পাতি।।

সারা জীবন কাটলো আমার
বিরহে, বধুঁ
পিপাসিত কন্ঠে এসে
দিও মিলন মধু।

তুমি যেথায় থাকো প্রিয়,
সেথায় যেন যাই (খোদা)।
সখা বলে দেকো আমায়,
দীদার যেন পাই (খোদা);
সারা জনম দুঃখ পেলাম,
(যেনো) এবার সুখে মাতি।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

শোনো শোনো ইয়া এলাহী

শোনো শোনো ইয়া এলাহী
আমার মুনাজাত।
তোমারি নাম জপে যেন
হৃদয় দিবস- রাত।।

যেন শুনি কানে সদা
তোমারি কালাম, হে খোদা,
চোখে শুধু দেখি যেন
কোরানের আয়াত।।

মুখে যেন জপি আমি
কলমা তোমার দিবস- যামী,
(তোমার) মসজিদেরই ঝাড়ু- বর্দার
হোক আমার এ হাত।।

সুখে তুমি, দুখে তুমি,
চোখে তুমি, বুকে তুমি,
এই পিয়াসী প্রানের খোদা
তুমিই আবে- হায়াত।।

- কাজী নজরুল ইসলাম-

শোনো শোনো মোনাজাত

খোদা এই গরীবের শোনো শোনো মোনাজাত
দিও তৃষ্ণা পেলে ঠান্ডা পানি, ক্ষুধা পেলে লবন- ভাত।।

মাঠে সোনার ফসল দিও
গৃহ ভরা বন্ধু প্রিয়,
আমার হৃদয় ভরা শান্তি দিও
সেই ত আমার আবেহায়াত।।

আমায় দিয়ে কারো ক্ষতি হয় না যেন দুনিয়ায়
আমি কারুর ভয় না করি, মোরে কেহ ভয় না পায়।

(যাবে) মসজিদে যাই তোমার টানে
(যেন) মন নাহি যায় দুনিয়া - পানে,
(আমি) ঈদের চাঁদ দেখি যেন
আসলে দুখের আঁধার রাত।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

যেদিন তুমি হবে কাজী

যেদিন রোজ হাশরে করতে বিচার
তুমি হবে কাজী,
সেদিন তোমার দীদার আমি
পাব কি আল্লাজী

সেদিন নাকি তোমার ভীষোন কাহহার রূপ দেখে
পীর পয়গম্বর কাঁদবে ভয়ে 'ইয়া নাফসি' ডেকে।
সেই সুদিনের আশায় আমি নাচি এখন থেকে।
আমি তোমায় দেখে হাজার বার দোজখ যেতে রাজী।।

যে রূপে হোক বারেক যদি দেখে তোমায় কেহ,
দোজখ কি আর ছুঁতে পারে পবিত্র তার দেহ।
সে হোক না কেন হাজার পাপী হোক না বে- নামাজী।।

ইয়া আল্লাহ, তোমার দয়া কত, তাই দেখাবে ব'লে
রোজ হাশরে দেখা দেবে বিচার করার ছলে।
প্রেমিক বিনে কে বুঝিবে তোমার এ কারসাজী।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

আল্লাহ আমার করো না বিচার

রোজ হাশরে আল্লাহ আমার করো না বিচার।
বিচার চাহি না, তোমার দয়া চাহে এ গুনাহগার।।

আমি জেনে শুনে জীবন ভরে
দোষ করেছি ঘরে পরে,

আশা নাই যে ত'রে যাব বিচারে তোমার।।

বিচার যদি করবে কেন রহমান নাম নিলে।
ঐ নামের গুনেই তরে যাব, কেন এ জ্ঞান দিলে।।

দীন- ভিখারী ব'লে আমি
ভিক্ষা যখন চাইব, স্বামী,
শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিতে, পারবে না কো আর।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

দীন- দরিদ্র কাঙ্গালের তরে

দীন- দরিদ্র কাঙ্গালের তরে এই দুনিয়ায় আসি'
হে হযরত, বাদশাহ হ'য়ে ছিলে তুমি উপবাসী।।

তুমি চাহ নাই কেহ হইবে আমীর, পথের ফকীর কেহ,
কেহ মাথা গুঁজিবার পাইবে না ঠাঁই, কাহারো সোনার গেহ,
ক্ষুধার অন্ন পাইবে না কেহ, কারো শত দাস দাসী।।

আজ মানুষের ব্যথা অভাবের কথা ভাবিবার কেহ নাই,
ধনী মুসলিম ভোগ ও বিলাসে ডুবিয়া আছে সদাই,
তাই তোমারেই ডাকে যত মুসলিম গরীব শ্রমিক চাষী।
বঞ্চিত মোরা হইয়াছি আজ তব রহমত হ'তে,
সাহেবী গিয়াছে, মোসাহেবী করি' ফিরি দুনিয়ার পথে,
আবার মানুষ হব কবে মোরা মানুষেরে ভালোবাসি।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

নামে মোবারক মোহাম্মদ

ইসলামের ঐ সওদা লইয়ে এল নবীন সওদাগর।
বদনসীব আয়, আয় গুনাহগার নতুন ক'রে সওদা কর।।

জীবন ভরে করলি লোকসান আজ হিসাব তার খিতিয়ে নে,
বিনি মুলে দেয় বিলিয়ে সে যে বেহেশতি নজর।।

কোরানের ঐ জাহাজ বোঝাই হীরা মুক্তা পান্নাতে,
লুটে নে রে লুটে নে সব ভরে তোল তোর শূন্য ঘর।।

কালেমার ঐ কানাকড়ির বদলে দেয় এই বনিক
শাফায়াতের সাত রাজার ধন, কে নিবি আয় ত্বরা কর।।

কিয়ামতের বাজারে ভাই মুনাফা যে চাও বহুৎ,
এই ব্যাপারীর হও খরিদ্দার লও রে ইহার সীলমোহর।।

আরশ হ'তে পথ ভুলে এ এল মদীনা শহর,
নামে মোবারক মোহাম্মদ, পূঁজি আল্লাহু আকবর।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

নিখিল প্রেমাস্পদ

আসিছেন হাবীবে খোদা, আরশ পাকে তাই উঠেছে শোর,
চাঁদ পিয়াসে ছুটে' আসে আকাশ- পানে যেমন চকোর,
কোকিল যেমন গেয়ে উঠে ফাগুম আসার আভাস পেয়ে,
তেমনি করে হরষিত ফেরেশতা সব উঠলো গেয়ে,-
দেখ আজ আরশে আসেন মোদের নবী কামলীওয়ালা
হের সেই খুশীতে চাঁদ- সুরুজ আজ হল দ্বিগুন আলা।।

ফকির দরবেশ আউলিয়া যাঁরে
ধ্যানে জ্ঞানে ধরতে নারে,
যাঁর মহিমা বুঝতে পারে
এক সে আল্লাহতালা।।

বারেক মুখে নিলে যাঁহার নাম
চিরতরে হয় দোযখ হারাম,
পাপীর তরে দস্তে যাঁহার
কাওসারের পেয়ালা।।

মিম হরফ না থাকলে যে আহাদ
নামে মাখা যার শিরীন শহদ,
নিখিল প্রেমাস্পদ আমার মোহাম্মদ
ত্রিভুবন উজালা।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

রাহে কাবা

ইয়া রাসুলুল্লাহ! মোরে রাহা দেখাও সেই কাবার-
যে কাবা মসজিদে গেলে পাব আল্লার দীদার।।

দ্বীন- দুনিয়া এক হয়ে যায় যে কাবার ফজিলতে,
যে কাবাতে হাজী হলে রাজী হন পরওয়ারদিগার।।

যে কাবার দুয়ারে জামে- তৌহিদ দেন হযরত আলী,
যে কাবায় কুল- মাগফেরাতে কর তুমি ইন্তেজার।।

যে কাবাতে গেলে দেখি কুর্শী লওহ কালাম,
মরণে আর ভয় থাকেনা, হাসিয়া হয় বেড়া পার।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

বাদশার ও বাদশাহ

মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লেআলা
তুমি বাদশারও বাদশাহ কামলিওয়ালা।।

পাপে-তাপে পূর্ণ আঁধার দুনিয়া
হ'ল পূন্য বেহেশতী নূরে উজালা।।

গুনাহগার উম্মত লাগি' তব
আজো চয়ন নাহি, কাঁদিছ নিরালা।।

কিয়ামতে পিয়াসী উম্মত লাগি,
দাড়ায়ে র'বে লয়ে তহুরার পিয়ালা।।

জ্বলিবে হাশর দিনে দ্বাদশ রবি,
নফসি নফসি কবে সকল নবী
ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি একেলা তুমি,
কাঁদিবে খোদার পার আর্শ চুমি'-
পাপী উম্মত ত্রান তব জপমালা।।

করে আউলিয়া আম্বিয়া তোমারি ধ্যান,
তব গুণ গাহিল খোদ আল্লাহতায়ালা।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

আমার প্রিয় হযরত

আমার প্রিয় হযরত নবী কামলিওয়ালা।।
যাঁহার রওশনীতে দ্বীন- দুনিয়া উজালা।।

যাঁরে খুঁজে ফেরে কটি গ্রহ তারা,
ঈদের চাঁদে যাঁহার নামের ইশারা,
বাগিচায় গোলাব গুল গাঁথে যাঁর মালা।।

আউলিয়া আম্বিয়া দরবেশ যাঁর নাম
খোদার নামের পরে জপে অবিরাম,
কেয়ামতে যাঁর হাতে কাওসার পিয়ালা।।

পাপে মগ্ন ধরা যাঁর ফজিলতে
ভাসিল সুমধুর তৌহিদ- স্রোতে,
মহিমা যাঁহার জানেন এক আল্লাহতায়ালা।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

খোদার বন্ধু

সৈয়দে মক্কী মাদানী আমার নবী মোহাম্মদ।
করুনাসিন্ধু খোদার বন্ধু নিখিল মানব প্রেমাস্পদ।।

আদম নূহ ইবরাহীম দাউদ সলেমান মুসা আর ঈসা,
সাক্ষ্য দিল আমার নবীর, তা'দের কালাম হ'ল রদ।।

যাঁহার মাঝে দেখল জগৎ ইশারা খোদার নূরের,
পাপ দুনিয়ায় আনল যে রে পুণ্য বেহেশতী সনদ।।

হায় সেকান্দর খুঁজল বৃথাই আব হায়াত এই দুনিয়ায়
বিলিয়ে দিল আমার নবী সে সুধা মানব সবায়।।

হায় জুলেখা মজল বৃথাই ইউসুফের ওই রূপ দেখে,
দেখলে আমার নবীর সুরত যোগীন হত ভসম মেখে।
শুনলে নবীর শিরীন জবান, দাউদ মাগিত মদদ।।

ছিল নবীর নূর পেশানিতে তাই ডুবল না কিশতী নূহের,
পুড়ল না আগুনে হযরত ইবরাহিম সে নমরুদের,
বাঁচল ইউনুস মাছের পেটে স্মরণ ক'রে নবীর পদ;
দোযখ আমার হারাম হ'ল
পিয়ে কোরানের শিরীন শহদ।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

সুদূর মক্কা মদিনার পথে

সুদূর মক্কা মদিনার পথে আমি রাহি মুসাফির,
বিরাজে রওজা মোবারক যথা মোর প্রিয় নবীজীর।।
বাতাসে যেখানে বাজে অবিরাম
তৌহিদ বাণী খোদার কালাম,
জিয়ারতে যথা আসে ফেরেশতা শত আউলিয়া পীর।।

মা ফাতেমা আর হাসান হোসেন খেলেছে পথে যার
কদমের ধূলি পড়েছে যেথায় হাজার আম্বিয়ার,
সুরমা করিয়া কবে সে ধূলি
মাখিব নয়নে দুই হাতে তুলি,
কবে এ দুনিয়া হ'তে যাবার আগে রে কাবাতে লুটাব শির।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

সালাম

কাবার জিয়ারতে তুমি কে যাও মদিনায়?
আমার সালাম পৌঁছে দিও নবীজীর রওজায়।।

হাজীদের ওই যাত্রা পথে
দাঁড়িয়ে আছি সকাল হ'তে,
কেঁদে বলি, কেউ যদি মোর
সালাম নিয়ে যায়।।

পঙ্গু আমি, আরব সাগর লঙ্ঘি কেমন করে,
তাই নিশিদিন কা'বা যাওয়ার পথে থাকি পড়ে।

বলি, ওরে দরিয়ার ঢেউ,
(মোর) সালাম নিয়ে গেল না কেউ,
তুই দিস মোর সালামখানি
মরুর 'লু' হাওয়ায়।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

পাঠাও বেহেশত হতে

পাঠাও বেহেশত হতে, পুনঃ সাম্যের বাণী,
(আর) দেখিতে পারি না মানুষে মানুষে এই হীন হানাহানি।।

বলিয়া পাঠাও, হে হযরত,
যাহারা তোমার প্রিয় উম্মত,
সকল মানুষে বাসে তারা ভালো খোদার সৃষ্টি জানি।
সবারে খোদারই সৃষ্টি জানি।।

অর্ধেক পৃথিবী আনিল ঈমান যে উদারতা- গুনে
(তোমার) যে উদারতা- গুনে,
শিখিনি আমরা সে উদারতা, কেবলি গেলাম শুনে
কোরানে হাদিসে কেবলি গেলাম শুনে।
তোমার আদেশ অমান্য ক'রে
লাঞ্চিত মোরা ত্রিভুবন ভ'রে,
আতুর মানুষে হেলা ক'রে বলি, "আমরা খোদারে মানি"।।

- কাজী নজরুল ইসলাম-

দূর আরবের স্বপন দেখি

দূর আরবের স্বপন দেখি বাংলাদেশের কুটির হতে।
বেহুঁশ হ'য়ে চলেছি যেন কেঁদে কেঁদে কাবার পথে।
হায় গো খোদা, কেন মোরে
পাঠাইলে কাঙ্গাল ক'রে,
যেতে নারি প্রিয় নবীর মাজার শরিফ জিয়ারতে।।

স্বপ্নে শুনি নিতুই রাতে যেন কা'বার মিনার থেকে
কাঁদছে বেলাল ঘুমন্ত সব মুসলিমেরে ডেকে' ডেকে'।
ইয়া এলাহি! বল সে কবে
আমার স্বপন সফল হ'বে,
আমি গরীব ব'লে হব কি নিরাশ মদিনা দেখার নিয়ামতে।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

নূরের দরিয়ায় সিনান করিয়া

নূরের দরিয়ায় সিনান করিয়া
কে এলো মক্কায় আমিনার কোলে।
ফাগুন পূর্ণিমা- নিশীথে যেমন
আসমানের কোলে রাঙ্গা চাঁদ দোলে।।

কে এলো কে এলো গাহে কোয়েলিয়া,
পাপিয়া বুলবুল উঠিল মাতিয়া,
গ্রহ তারা ঝুঁকে করিছে কুর্নিশ,
হুরপরী হেসে পড়িছে ঢলে।।

জান্নাতের আজ খোলা দরওয়াজা পেয়ে
ফেরেশতা আম্বিয়া এসেছে ধেয়ে
তহরীমা বেঁধে ঘোরে দরুদ গেয়ে
দুনিয়া টলমল, খোদার আরশ টলে।।

এল রে চির- চাওয়া, এল আখেরী- নবী
সৈয়দে মক্কী মাদানী আল আরাবী,
নাজেল হয়ে সে যে ইয়াকুত- রাঙ্গা ঠোঁটে
শাহাদাতের বাণী আধো আধো বোলে।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

তুমি অনেক দিলে খোদা

তুমি অনেক দিলে খোদা,
দিলে অশেষ নেয়ামত।
আমি লোভী, তাইতো আমার
মিটেনা হসরতে।।

কেবলই পাপ করি আমি,
মাফ করিতে তাই, হে স্বামী!
দয়া করে শ্রেষ্ঠ নবীর করিলে উম্মত।
তুমি নানান ছলে করছ পূরণ ক্ষতির খেসারত।।

মায়ের বুকে স্তন্য দিলে, পিতার বুকে স্নেহ,
মাঠে শস্য- ফসল দিলে, আরাম লাগি গেহ।

কোরান দিলে পথ দেখাতে,
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শেখাতে,
নামায দিয়ে দেখাইলে মসজিদেরই পথ।
তুমি কেয়ামতের শেষে দিবে বেহেশতী দৌলত।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই

মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।।

আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজীরা যাবে,
পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে।
গোর - আজাব থেকে এ গুনাহগার পাইবে রেহাই।।

কত পরহেজগার খোদার ভক্ত নবীজীর উম্মত
ঐ মসজিদে করে রে ভাই, কোরান তেলাওয়াত।
সেই কোরান শুনে যেন আমি পরান জুড়াই।।

কত দরবেশ ফকির রে ভাই, মসজিদের আঙ্গিনাতে
আল্লার নাম জিকির করে লুকিয়ে গভীর রাতে,
আমি তাদের সাথে কেঁদে কেঁদে
(আল্লার নাম জপতে চাই) ।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

আল্লাহ আমার প্রভু

ভৈরবী- কার্ফা)

আল্লাহ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়।
আমার নবী মোহাম্মদ, যাঁহার তারিফ জগৎময়।।

আমার কিসের শঙ্কা,
কোরান আমার ডঙ্কা
ইসলাম আমার ধর্ম, মুসলিম আমার পরিচয়।।

কালেমা আমার তাবিজ, তৌহিদ আমার মুর্শিদ,
ঈমান আমার ধর্ম, হেলাল আমার খুর্শিদ।
'আল্লাহু আকবর' ধ্বনি
আমার জেহাদ- বাণী?
আখের মোকাম ফেরদৌস খোদার আরশ যেথায় রয়।।

আরব মেসের চীন হিন্দ মুসলিম- জাহান মোর ভাই,
কেহ নয় উচ্চ কেহ নীচ, এখানে সমান সবাই।
এক দেহ এক দিল এক প্রান,
আমীর ফকির এক সমান,
এক তকবীরে উঠি জেগে, আমার হবেই হবে জয়।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

উম্মত আমি গুনাহগার

(সুন্ধু ভৈরবী- কার্ফা)

উম্মত আমি গুনাহগার
তবু ভয় নাহি রে আমার
আহমদ আমার নবী
যিনি খোদ হাবিব খোদার।।

যাঁহার উম্মত হতে চাহে সকল নবী,
তাহারি দামন ধরি' পুলসিরাত হব পার।।

কাঁদিবে রোজ হাশরে সবে
যবে নাফসি ইয়া নাফসি রবে,
ইয়া উম্মতী বলে একা কাঁদিবেন আমার মোখতার।।

কাঁদিবেন সাথে মা ফাতিমা ধরিয়া আরশ আল্লার
হোসায়েনের খুনের বদলায় মাফী চাই পাপী সবাকার।।

দোযখ হয়েছে হারাম যে দিন পড়েছি কালেমা,
যেদিন হয়েছি আমি কোরানের নিশান- বর্দার।।

(গুল বাগিচা)- কাজী নজরুল ইসলাম-

অনুরোধ

পুবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া।
যাও রে বইয়া এই গরীবের সালামখানি লইয়া।।

কাবার জিয়ারতের আমার নাই সম্বল ভাই,
সারা জনম সাধ ছিল যে, মদিনাতে যাই ( রে ভাই)।
মিটল না সাধ, দিন গেল মোর দুনিয়ার বোঝা বইয়া।।

তোমার পানির সাথে লইয়া যাও রে আমার চোখের পানি,
লইয়া যাওরে এই নিরাশের দীর্ঘ নিশ্বাসখানি।
নবীজীর রওজায় কাঁদিও ভাই রে আমার হইয়া।।

মা ফাতেমা হযরত আলীর মাজার যেথায় আছে,
আমার সালাম দিয়া আইস তাঁদের পায়ের কাছে।
কাবায় মোজানাজাত করিও আমার কথা কইয়া।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

জাগো মুসাফির

ভোর হল, ওঠ জাগো মুসাফির, আল্লা - রাসুল বোল
গাফলিয়াতি ভোল রে অলস, আয়েশ আরাম ভোল।।

এই দুনিয়ার সরাইখানায়
(তোর) জনম গেল ঘুমিয়ে হায়!
ওঠ রে সুখশয্যা ছেড়ে, মায়ার বাঁধন খোল।।

দিন ফুরিয়ে এল যে রে দিনে দিনে তর
দিনের কাজে অবহেলা করলি জীবনভোর।।

যে দিন আজো আছে বাকী
খোদারে তুই দিসনে ফাঁকি
আখেরে পার হবি যদি পুলসিরাতের পোল।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

বক্ষে আমার কাবার ছবি

বক্ষে আমার কাবার ছবি,
চক্ষে মোহাম্মদ রাসুল।
শিরোপরি মোর খদার আরশ
গাই তারি গান পথ বেভুল।।

পাইলির প্রেমে মজনু পাগল,
আমি পাগল 'লা- ইলা'র,
প্রেমিক দরবেশ আমায় চিনে
অ-রসিকে কয় বাতুল।।

হৃদয়ে মোর খুশীর বাগান,
বুলবুলি তায় গায় সদাই-
ওরা খোদার রহম মাগে
আমি খোদার 'ইশক' চাই।।


আমার মনের মসজিদে দেয়
আজান হাজার 'মুয়াজ্জিন',
প্রানের 'লওহে' কোরান লেখা
'রুহ' পড়ে তা রাত্রিদিন।

খাতুনি জিন্নত আমার মা,
হাসান হোসেন চোখের জল,
ভয় করিনা রোজ- কিয়ামত
পুল- সিরাতের কঠিন পুল।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

কোথা সে মুসলমান

আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান, কোথা সে মুসলমান।
কোথা সে আরিফ, অভেদ যাহার জীবন- মৃত্য- জ্ঞান।।

যার মুখে শুনি তওহিদের কালাম
ভয়ে মৃত্যুও করিত সালাম;
যার দ্বীন দ্বীন রবে কাঁপিত দুনিয়া জ্বীন পরী ইনসান।।

স্ত্রী- পুত্ররে আল্লারে সঁপি জেহাদে যে নির্ভীক
সেহে কোরবানী দিত প্রান, হায়! আজ তারা মাগে বিখ।

কোথা সে শিক্ষা আল্লাহ ছাড়া
ত্রিভুবনে ভয় করিত না যারা,
আজাদ করিতে এসেছিল যারা সাথে ল'য়ে কোরান।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

তুইও ওঠ জেগে

দিকে দিকে পুনঃ জ্বলিয়া উঠেছে দীন ই ইসলামী লাল মশাল।
ওরে বে- খবর, তুইও ওঠ জেগে তুইও তোর প্রান প্রদ্বীপ জ্বাল।।

গাজী মুস্তাফা কামালের সাথে জেগেছে তুর্কী সুর্খ- তাজ,
রেজা পহলবী সাথে জাগিয়াছে বিরান মূলুক ইরানও আজ,
গোলামী বিসরি' জেগেছে মিসরী, জগলুল সাথে প্রান- মাতাল।।

ভুলি গ্লানি' লাজ জেগেছে হেজাজ নেজদ আরবে ইবনে সউদ,
আমানুল্লার পরশে জেগেছে কাবুলে নবীন আল- মাহ্মুদ,
মরা মরক্কো বাঁচাইয়া আজ বন্দী করিম রীফ- কামাল।

জাগে ফয়স্ম ইরাক আজম, জাগে নব হারুন -অল- রশীদ,
জাগে বায়তুল মোকাদ্দস রে, জাগে শাম দেখ টুটিয়া নিঁদ,
জাগো নাকো শুধু হিন্দের দশ কোটি মুসলিম বে- খেয়াল।।

মোরা আসহাব- কাহাফের মত হাজারো বছর শুধু ঘুমাই,
আমাদের কেহ ছিল বাদশাহ কোন কালে, তারি করি বড়াই,
জাগি যদি মোরা, দুনিয়া আবার কাঁপিবে চরণে টাল- মাটাল।।

(জুলফিকার) -কাজী নজরুল ইসলাম-

শহীদী ইদগাহ

শহীদী ঈদগাহ দেখ আজ জমায়েত ভারি।।
হবে দুনিয়াতে আবার ইসলামী ফরমান জারি।।
তুরান ইরান হেজাজ মেসের হিন্দ মরক্কো ইরাক,
হাতে হাত মিলিয়ে আজ দাঁড়ায়েছে সারি সারি।।

ছিল বেহুঁশ যারা আঁসু ও আফসোস লঁইয়ে,
চাহে ফেরদৌস তারা জেগেছে নও জোশ ল'ইয়ে।
তুইও আয় এই জমাতে ভুলে যা দুনিয়াদারী।।

ছিল জিন্দানে যারা আজকে তারা জিন্দা হয়ে
ছোটে ময়দানে দারাজ- দিন আজি শমশের লয়ে।
তকদীর বদলেছে আজ উঠিছে তকবির তারি।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

ফাতেমা দুলাল কাঁদে

ফোরাতের পানিতে নেমে ফাতেমা দুলাল কাঁদে
অঝোর নয়নে রে।
দু'হাতে তুলিয়া পানি ফেলিয়া দিলেন অমনি
পড়িল কি মনে রে।।

দুধের ছাওয়াল আসগর এই পানি ছাহিয়ে রে
দুষ্মনের তীর খেয়ে বুকে ঘুমাল খুন পিয়ে রে,
শাদীর নওশা কাসেম শহীদ এই পানি বহনে রে।।

এই পানিতে মুছিল রে হাতের মেহেদী সকীনার,
এই পানিরই ঢেউয়ে ওঠে তারি মাতম হাহাকার,
শহীদানের খুন মিশে আছে এই পানিরই সনে রে।।

বীর আব্বাসের বাজু শহীদ হলো এরি তরে রে,
এই পানি বিহনে জয়নাল খিমায় তৃষ্ণায় মরে রে,
শোকে শহীদ হলেন হোসেন জয়ী হয়েও রণে রে।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

চাষীর গীত (১)

চাষ কর দেহ- জমিতে।
হবে নানা ফসল এতে।।

নামাযে জমি 'উগালে',
রোজাতে জমি 'সামালে',
কলেমায় জমিতে মই দিরে
চিন্তা কি হে এই ভবেতে।।

লা- ইলাহা ইল্লাল্লাতে
বীজ ফেল তুই বিধি মতে,
পাবি 'ঈমান' ফসল তাতে
আর রইবি সুখেতে।।

নয়টা নালা আছে তাহার
অজুর পানি নিয়াত যাহার,
ফল পানি নানা প্রকার
ফসল জন্মিবে তাহাতে।।

যদি ভাল হয় হে জমি
হজ্জ জাকাত লাগাও তুমি,
আরো সুখে থাকবে তুমি-
কয় নজরুল ইসলামেতে।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

আল্লা রাসুল জপের গুণে

আল্লা রাসুল জপের গুণে কি হল দেখ চেয়ে
সদাই ঈদের দিনের খুশীতে তোর পরাণ আছে ছেয়ে।।

আল্লার রহমত ঝরে
ঘরে বাইরে তোর উপরে,
আল্লা রাসুল হয়েছেন তোর জীবন- তরীর নেয়ে।।

দুখে সুখে সমান খুশী, নাই ভাবনা ভয়,
(তুই) দুনিয়াদারী করিস, তবু আল্লাতে মন রয়।

মরণকে আর ভয় নাই তোর,
খোদার প্রেমে পরাণ বিভোর,
(এখন) তিনিই দেখেন তোর সংসার তোর ছেলেমেয়ে।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

আল্লাহ রাসুল তরু আর ফুল

আল্লা রাসুল তরু আর ফুল প্রেমিক হৃদয় জানে
কেহ বা তরু রে ভালবাসে ভাই, কেহ ফুল ধরে টানে।।

কেহ বা ফুলের মধু চায়, কেহ চায় সে গাছের ছায়া
গাছের ছায়ায় জুড়াইয়া পায় গুল সুবাসের মায়া।
তরু ছুঁইয়ে বোঝে আল্লা রাসুলে রসলীলা কোনখানে।।

কোন জন চাহে গুলের খুশবু কোন জন চাহে গুল,
খুশবুর সাথে ফুলেরেও চাহে প্রেমিক যে বুলবুল।
জালালের সাথে জামালেও চাহে, প্রেমিক যে বুলবুল।।

আল্লারে ভালবেসে যার গেছে সকল দ্বিধা ও ভয়
রাসুল তাহারে প্রেম দিয়ে কন, আল্লা যে প্রেমময়।
তিনি যে কেবল বিচারক নন, আল্লা যে প্রেমময়,
মজনুর মত দিওয়ানা সে যে লাইলার মধুপানে।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

তোমায় যেমন করে ডেকেছিল

তোমায় যেমন করে ডেকেছিল আরব মরুভূমি;
ওগো আমার নবী প্রিয় আল আরাবী,
তেমনি করে ডাকি যদি আসবে নাকি তুমি।।

যেমন কেঁদে দজলা ফোরাত নদী
ডেকেছিল নিরবধি,
হে মোর মরুচারী নবুয়তধারী,
তেমনি করে কাঁদি যদি আসবে নাকি তুমি।।

যেমন মদিনা আর হেরা পাহাড়
জেগেছিল আশায় তোমার
হে হযরত মম, হে মোর প্রিয়তম,
তেমনি করে জাগি যদি আসবে নাকি তুমি।।

মজলুমেরা কাবা ঘরে
কেঁদেছিল যেমন করে,
হে আমিনা- লালা, হে মোর কামলীওয়ালা,
তেমনি করে চাহি যদি আসবে নাকি তুমি।।

- কাজী নজরুল ইসলাম-

Wednesday, 25 May 2011

নজরুল প্রতিভাঃ বাবু রহমান

কাজী নজরুল ইসলামের সৌভাগ্য, তিনি যখন কর্মে মগ্ন তখন তিনি খ্যাতির শীর্ষে। আর যখন বাকরুদ্ধ হলেন- তখন প্রচারের বাইরে; এক সময় তা অন্ধবিবরে। কবির জীবিত অবস্থায় দিল্লী থেকে ১৯৩৮ সালে আখতার হোসেন রায়পুরী’র অনুবাদে ‘পীয়াম-ই-শাহাব’ শীর্ষক উর্দু ভাষায় নজরুল কাব্য প্রকাশিত হয়েছে। জানা যায়, ছান্দসিক আব্দুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪) তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী রচনা করেছেন কবির জীবদ্দশায়।



নজরুল চর্চার অন্ধকার যুগে–১৯৪৯ সালে, মহামানব কাজী আব্দুল ওদুদের (১৮৯৪-১৯৭০) কোলকাতার বর্মণ পাবলিশিং থেকে ‘নজরুল প্রতিভা’ নামে মূল্যায়নমূলক একটি চটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ১৯৫৩ সালে শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী রচিত ‘নজরুল সাহিত্যের ভূমিকা’ নামে ‘পাকিস্তান বুক স্টল’ থেকে আর একটি গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল। দীর্ঘদিন দুষ্প্রাপ্যের খাতায় নাম রেখে নজরুল জন্মশতবর্ষে নজরুল ইন্সটিটিউট থেকে এর ২য় সংস্করণ হয়। ১৯৬২ সালে শহীদ আমীর হোসেন চৌধুরী রচিত নজরুল কাব্যে রাজনীতি গ্রন্থটি বহুকাল পর ‘আন্তর্জাতিক নজরুল ফোরাম’ থেকে বের হয়।

আর নজরুলের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৪টি গীতিগ্রন্থ এবং ৩টি স্বরলিপি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কিন্তু ১৯৪৭ এর দেশ ভাগ এবং সাম্প্রদায়িক মানসিকতার কারণে দুই বাংলায় নজরুল প্রায় বিশ বছর অনুপস্থিত। অবশ্য তথাকথিত পাকিস্তানে (বাংলাদেশের নাম বদল করে) মানুষ নজরুলকে ভারত থেকে আগত এক শ্রেণীর মোহাজের মুসলিম নজরুল প্রয়োজনীয় ব্যস্ত। ভারতে কংগ্রেসী আমলে অবহেলিত নজরুলকে কমরেড মুজাফফর আহমদ (১৮৮৯-১৯৭৩), কমল দাশ গুপ্ত ১৯১২-১৯৭৪), আব্দুস সালাম, মজহারুল ইসলাম (নবজাতক প্রকাশনী), কল্পতরু সেনগুপ্ত (১৯৮৬)-সহ একদল নজরুল প্রেমিক মহান নজরুলকে সামনে আনার প্রাথমিক প্রয়াস পান। সে ধারা ষাটের দশকের প্রথম পাদে বিলম্বিত লয়ে শুরু হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে বেগবান হয়। পশ্চিমবঙ্গে ১৯৭৬ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসায় সেই গতি আরও গতিশীল হয়ে আজো বহমান। নজরুলী যুগের পর থেকে মহা অন্ধকার, তারপর আবার আলোর রেখা দেখা যায়। জগৎ ঘটক (১৯০২-১৯৮৯), নিতাই ঘটক, কমল দাশগুপ্ত, কাজী অনিরুদ্ধ (১৯৩১-১৯৭৪), ব্রহ্মমোহন ঠাকুর, মনোরঞ্জন সেন, নারায়ন চৌধুরী (১৯১২-১৯৯১) ও কল্পতরু সেনগুপ্ত (১৯১৬-২০০৩), নজরুলী নব জাগরণের প্রধান সৈনিক। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১৯৩০-১৯৯২) ও অঞ্জলি মুখোপাধ্যায় (১৯৩২-১৯৮৩) নব জাগরণের দুই প্রধান সুর শিল্পী। একজন আধুনিক গানের জগৎ ছেড়ে, আর একজন ডাক্তারী পেশাকে জলাঞ্জলি দিয়ে নজরুল সঙ্গীত প্রচার ও প্রসারে আমরণ যুদ্ধ করে গেছেন। নজরুল সঙ্গীতের নব ইতিহাসে এই দুই মহান কণ্ঠশিল্পীর অবদান বাঙালি জাতির জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এক কথায়, তারা নজরুল সঙ্গীতের পুনর্জন্ম দিয়েছেন। বহু গ্রামোফোন পিপাসু মানুষের হৃদয়ে স্পন্দিত হয়েছে। রেকর্ড, ক্যাসেট, সিডিতে তা ধারণ করে সুর হিন্দুস্তানী সঙ্গীতের শাস্ত্রীয় রাগ-রাগিনীর সুর লালিত্য বাংলা গানে কবি সার্থক ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। শিল্পের রূপ, রস ও গন্ধ নজরুল তাঁর রচিত বাণী ও সুরের মাধ্যমে তূরীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, যার অনেক গান এখনো অশ্রুত, স্বরলিপিহীন, শ্রুতিবদ্ধহীন, অসুরারোপিত এবং অনাবিষ্কৃত।

ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক যাঁতাকলে পরে নজরুলের অবস্থা ‘ত্রাহি মধুসূদন’। আজ পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশে প্রগতিশীলদের ভালবাসায় নজরুল সাহিত্য-সঙ্গীত স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত। বাংলা গানের নব জোয়ারে নজরুল সঙ্গীত এক বিশাল ক্যানভাস জুড়ে রয়েছে। নজরুলের স্বরচিত গ্রন্থ ছাড়া, তাঁর বন্ধুদের স্মৃতিকথায়, প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনায়, নতুন গবেষণায় এবং আদি সুরের মহিমায় বাংলা গান সর্বপ্লাবী। আজ অভিসন্দর্ভ রচনার সাথে সাথে বেশ কয়েকটি নজরুল বিষয়ক অভিধান প্রকাশিত হওয়ায় বিস্ময় জাগে–এতদিন কেন চাপা পড়েছিল এই সুর ভাণ্ডার। এক শ্রেণীর সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আর প্রগতিশীল রাজনীতিকদের নজরুল চর্চায় অবহেলার কারণে এ ধারা বাধাগ্রস্ত হয়েছে বার বার। কিন্তু বর্তমান চর্চায়, নিম্নলিখিত নজরুল সঙ্গীত বিষয়ক গ্রন্থগুলি দেখে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়–’বিশ্ব ব্যাপিয়া আছ তুমি।’

ভাবতে অবাক লাগে যারা নজরুলের প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করেনি, নজরুলকে কবি বলতে দ্বিধা করেছে, নজরুল সাহিত্যকে অবমূল্যায়ন করেছেন, নজরুলকে কাফের ফতোয়া দিয়েছেন–তারাই পরবর্তীকালে নজরুলকে সম্বর্ধনা দিয়েছেন; নজরুল তাদের চিনতে পারলে বিদ্রোহ করতেন এবং মেকি সম্বর্ধনায় রাজি হতেন না। এই উপমহাদেশের তথা সাড়া বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের জাতীয় কবিকে যখন সাম্প্রদায়িক শক্তি বাংলাদেশের জাতীয় কবি অভিধায় অভিষিক্ত করে নিজেরা গৌরবান্বিত হচ্ছেন, তখন শোষিতের বিশ্বকবিকে ছোট করছেন। তাদের অনেকেই নজরুল নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠানে, কেউ কেউ চেয়ারম্যান, কেউ কেউ নির্বাহী কর্মকর্তা সেজে ছড়ি ঘুরিয়েছেন। হায়রে বাংলাদেশের নব্য নজরুল প্রেমিক! পৃথিবী তোমাদের ক্ষমা করলেও, অশরীরী নজরুল কিছু করতে না পারলেও প্রকৃত নজরুল গবেষক, শিল্পীরা তোমাদের কখনোই ক্ষমা করবে না। তোমরা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। ট্রাজেডি এই–যারা নজরুল সম্বন্ধে দুটি লাইনও লেখেনি- তাদের কেউ কেউ নজরুলী প্রতিষ্ঠানের কর্তা সেজে বসে। তবে বর্তমানে অনেকেই নজরুলকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়েছেন। নিজের ভাগ্য ফেরাতে নজরুল গবেষক, স্বরলিপিকার সেজেছেন। তাতে এসব অযোগ্য নজরুল গবেষকদের হাতে পড়ে নজরুলচর্চা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন! নিচে নজরুল সঙ্গীত নিয়ে আজ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থগুলির একটি তালিকা দেওয়া হলো:

বই (প্রথম প্রকাশ)
বুলবুল, (প্রথম প্রকাশ- ১৯২৮) ৪৯টি
চোখের চাতক (প্রথম প্রকাশ- ১৯২৯) ৫৩টি
মহুয়ার গান (প্রথম প্রকাশ- ১৯৩০) ১৫টি
নজরুল গীতিকা (প্রথম প্রকাশ- ১৯৩০) ১২৭টি
চন্দ্রবিন্দু (প্রথম প্রকাশ- ১৯৩১) ৬১টি
সুরসাকী (প্রথম প্রকাশ- ১৯৩২) ৯৯টি
জুলফিকার (প্রথম প্রকাশ- ১৯৩২) ২৪টি
বনগীতি (প্রথম প্রকাশ- ১৯৩২) ৭১টি
গুল-বাগিচা (প্রথম প্রকাশ- ১৯৩৩) ৮৭টি
গীতি শতদল (প্রথম প্রকাশ- ১৯৩৪) ১০১টি
গানের মালা (প্রথম প্রকাশ- ১৯৩৪) ৯৫টি
নজরুল স্বরলিপি (প্রথম প্রকাশ- ১৯৩১) ৩৫টি
সুরলিপি (প্রথম প্রকাশ- ১৯৩৪) ৩১টি
সুরমুকুর (প্রথম প্রকাশ- ১৯৩৪) ২৮টি

পরবর্তিতে প্রকাশিত গানের সংকলন:

নজরুল সঙ্গীত সম্ভার: নজরুল হস্তলিপি- বাংলা একাডেমী, এপ্রিল ১৯৮২, গান- ১০৩।
নজরুল গীতি সন্ধানে সংগ্রহ- আব্দুস সাত্তার, শিল্পী কুটির, ১২ ফেব্রুয়ারি- ১৯৭০।
অপ্রকাশিত নজরুল, সম্পাদনা- আব্দুল আজীজ আল আমান, হরফ, (গান- ১৬৩), ১৭/১১/১৯৮৯, কোলকাতা।
জাগো সুন্দর চিরকিশোর, সম্পাদনা- ও সংগ্রহ- আসাদুল হক, নজরুল ইনস্টিটিউট, আগস্ট ১৯৯১।
অপ্রকাশিত নজরুল-২, সম্পাদনা- ব্রহ্মমোহন ঠাকুর (গান- ৫৬) হরফ প্রকাশনী, ২৫ মে ১৯৯২, কোলকাতা।
নজরুলের হিন্দী গান, সংগ্রহ- আসাদুল হক, জুন ১৯৯৫, গান- ৮১, ঢাকা।
নজরুলের হারানো গানের খাতা, সম্পাদনা- মুহম্মদ নূরুল হুদা, নজরুল ইনস্টিটিউট, (গান- ১৬০), জুন ১৯৯৭।
কার গানের তরী যায় ভেসে, সম্পাদনা- আসাদুল হক, নজরুল ইনস্টিটিউট, ১.৫.১৯৯৯, ঢাকা।
নজরুল সঙ্গীত সংগ্রহ, সংগ্রহ ও সম্পাদনা- রশিদুল নবী, নজরুল ইন্সটিটিউট, অক্টোবর-২০০৬, ঢাকা।
পাণ্ডুলিপি (নজরুল সঙ্গীত), সম্পাদনা- আব্দুল মান্নান সৈয়দ, নজরুল ইন্সটিটিউট, ফেব্রুয়ারি, ২০০৯।

প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গবেষণা ও মূল্যায়ন:

নজরুল কাব্যগীতি বৈচিত্র্য ও মূল্যায়ন- ৬, বাঁধন সেনগুপ্ত, (২০/০৭/১৯৭৬), নবজাতক প্রকাশনী।
নজরুল গীতির নানাদিক, শম্ভুনাথ ঘোষ, বেঙ্গল পাবলিশার্স প্রা.লি., মে ১৯৭৭, কলকাতা।
কাজী নজরুলের গান, নারায়ন চৌধুরী, এ মুখার্জী এ- কোম্পানী প্রা. লি., জুন ১৯৭৭, কোলকাতা।
নজরুল সঙ্গীতের সুর বিকৃতি ও সুর সংরক্ষণ- ব্রহ্মমোহন ঠাকুর, নবজাতক প্রকাশন, মে ১৯৯২।
নজরুলের গানের রাগ, আবুল আজাদ, প্রকাশক- নিজে, নভেম্বর ১৯৯৪, ঢাকা।
নজরুল গীতি আলোচনা, কল্পতরু সেনগুপ্ত, নজরুল একাডেমী, চুরুলিয়া, ১লা নভেম্বর, ১৯৯৫।
সঙ্গীত সংবিৎ, আব্দুশ শাকুর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, জুন ১৯৯৭।
ইসলামী ঐতিহ্যে নজরুল সঙ্গীত- আসাদুল হক, নজরুল ইনস্টিটিউট, জানুয়ারি ২০০০।
নজরুলের রাগভাবনা, ব্রহ্মমোহন ঠাকুর- নজরুল ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০০০।
রঙ্গমঞ্চে নজরুল, অনুপম হায়াৎ, নজরুল ইনস্টিটিউট, ডিসেম্বর ২০০০।
নজরুলের গান: কবিতার স্বাদ, সফিকুন্নবী সামাদী, জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন, জানুয়ারি ২০০১।
নজরুল ও মা’ রিফুন্নাসমাত, বাবু রহমান, নজরুল ইনস্টিটিউট, মে ২০০১।
নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপিতে রাগ দর্শন, কৃষ্ণপদ মণ্ডল, নজরুল ইনস্টিটিউট, একুশে গ্রন্থমেলা ২০০৪।
নব মূল্যায়নে নজরুল গীতি ও স্বরলিপি, সুকুমার মিত্র, পুনশ্চ, ২৬শে মে ২০০৫, কলকাতা।
নজরুল সঙ্গীতের নানা প্রসঙ্গ, বাবু রহমান, গতিধারা, ফেব্রুয়ারি ২০০৭।
নজরুল সঙ্গীতের বৈচিত্র্য ও বৈপরীত্য, মায়া রায়, ভাষা; আগরতলা, ত্রিপুরা, মার্চ ২০০৮।

সাক্ষাৎকার ও জীবন:

নজরুল গীতি অন্বেষা, কল্পতরু সেনগুপ্ত, এনবিএ প্রা. লি., জুলাই ১৯৭৭, কোলকাতা।
নজরুল সঙ্গীতের রূপকার, আসাদুল হক, নজরুল ইনস্টিটিউট, জুলাই ১৯৯০, ঢাকা।
চলচ্চিত্রে নজরুল, আসাদুল হক, বাংলা একাডেমী, মে ১৯৯৩, ঢাকা।
বাংলা নাটকে নজরুল ও তাঁর গান, ব্রহ্মমোহন ঠাকুর, পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি, নভেম্বর ১৯৯৫।
বেতারে নজরুল ও তার গান, ব্রহ্মমোহন ঠাকুর, নবজাতক প্রকাশনী, ২৬শে মে ১৯৯৮।
নজরুল যখন বেতারে, আসাদুল হক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, মার্চ ১৯৯৯, ঢাকা।
নজরুল সঙ্গীতের অবিস্মরণীয় শিল্পী, আসাদুল হক, নজরুল একাডেমী, মে ১৯৯৯, ঢাকা।
সুধীজনের দৃষ্টিতে নজরুল সঙ্গীত, আসাদুল হক, নজরুল ইনস্টিটিউট, মে ১৯৯৯, ঢাকা।
নজরুলের শ্রুতিধর ধীরেন দাস, আসাদুল হক, হাতে খড়ি, জানুয়ারি ২০০৪, ঢাকা।
কাজী নজরুল ইসলাম বিষয়ক সাক্ষাৎকার, সম্পাদনা- আব্দুল মান্নান সৈয়দ, নজরুল ইনস্টিটিউট, ২৭ আগস্ট ২০০৪, ঢাকা।

প্রাসঙ্গিক গ্রন্থ:

সঙ্গীত পরিক্রমা, নারায়ন চৌধুরী, এ মুখার্জী এন্ড কো. প্রা. লি., ১৯৫৫।
বাংলা গানের গতিপথ, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, ডি.এম. লাইব্রেরি, ১৯৫৫, কলকাতা।
আমার জীবনের কথা, আব্বাস উদ্দীন, হরফ প্রকাশনী, মাশহুদা বেগম, ২৪ পরগণা।
সবারে আমি নমি, কাননবালা (অনুলিখন-সন্ধ্যা সেন), এম.সি. সরকার এ- সন্স প্রা.লি., ১৯৭৩।
বাংলার বুলবুল আঙ্গুরবালা, প্রশান্ত দাঁ, ভারতী বুক স্টল, জুন-১৯৮৩, কলকাতা।
স্মরণ-বরণ, গোপাল দাস মজুমদার, ডি.এম. লাইব্রেরি, ১৮ জুন, ১৯৮১, কলকাতা।
ইন্দুবালা, ড. বাধন সেন গুপ্ত, মৌসুমী প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪, কলকাতা।
শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে, শ্রী জগন্ময় মিত্র, ইন্ডিয়ান এসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোং প্রা. লি., ৭/২/৮৫।
আমার সঙ্গীত জীবন ও আনুষঙ্গিক জীবন, সন্তোষ সেন গুপ্ত, এ মুখার্জী এন্ড কোম্পানী প্রা. লি., বইমেলা, ১৯৮৬।
সুরের আগুন, গোলাম কুদ্দুস, দীপায়ন, ১৯৮৭, কলকাতা।
তুলসী লাহিড়ী, বিজিত কুমার দত্ত, পশ্চিমবঙ্গ নাট্য একাডেমী, জুন ২০০৫, কলকাতা।
অন্তরঙ্গ অনিরুদ্ধ, কল্যাণী কাজী, সাহিত্যম, মে ১৯৯৮, কলকাতা।
কাজীদার সঙ্গে (জগৎ ঘটক ও নিতাই ঘটক), সম্পাদনা- কল্পতরু সেনগুপ্ত, নজরুল একাডেমী, চুরুলিয়া, এপ্রিল ১৯৯৭, ভারত।
বিস্মৃত সুরশিল্পী কে মল্লিক, সংগ্রহ, সম্পাদনা, ভূমিকা: আবুল আহসান চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, অক্টোবর ২০০১।
ফৈয়াজী আলোকে নজরুল গীতি- কাকলী সেন, আদি নাথ ব্রাদার্স, বৈশাখ ১৪১৫ (২০০৮)।
বিমানে বিমানে আলোকের গানে, সিতাংশু শেখর ঘোষ, যোগমায়া প্রকাশনী, জানুয়ারি ২০০৩।
দুখু মিয়ার লেটো গান, মুহাম্মদ আয়ুব হোসেন, নজরুল ফাউন্ডেশন, বিশ্বকোষ পরিষদ, ৬ ডিসেম্বর ২০০৩, কোলকাতা।

অভিধানসমূহ:

নজরুল সঙ্গীত কোষ (আংশিক), সুরবাণী পত্রিকা, বাবু রহমান, ১৯৮৪, ঢাকা।
নজরুল সঙ্গীত অভিধান, আঃ সাহাব, নজরুল ইনস্টিটিউট, প্রচ্ছদ: সমর মজুমদার, ২৫ মে ১৯৯৩।
নজরুল শব্দকোষ, আবুল কালাম মুস্তাফা, বাংলা একাডেমী, মে ১৯৯৩, প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী।
নজরুল গীতি সহায়িকা, কল্পতরু সেনগুপ্ত, প.রাজ্য.স.এ, জুন ১৯৯৭
নজরুল শব্দপঞ্জি, হাকিম আরিফ, নজরুল ইন্সটিটিউট, জুন ১৯৯৭, ঢাকা।
নজরুল সঙ্গীত কোষ, ব্রহ্মমোহন, বাণী প্রকাশ, জানুয়ারি ১৯৯৪।
নজরুল সঙ্গীত কোষ, ব্রহ্মমোহন ঠাকুর, নজরুল ইনস্টিটিউট, মে ২০০৯।
চাঁদেরে ঘিরি নাচে ধিরি ধিরি তারা অগণন, বাবু রহমান।

লেটো দলের ব্যাঙাচি থেকে বিদ্রোহী কবিঃ মোঃ মিন্টু হোসেন

ছোট্ট এক গ্রাম চুরুলিয়া। সেই গ্রামে একরাতে উৎসবের রোল উঠলো। সে এক দারুণ কাণ্ড। আশপাশের দশ গ্রামের লোক জমেছে সেখানে। তারা ‘লেটো’ গান শুনবে। গান দিয়ে দুই দলের লড়াই হবে, মজা করে সেই লড়াই দেখবে।যথাসময়ে লেটো গানের আসর শুরু হলো। দু’দলের লড়াই বেশ জমে উঠেছে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। একদল গান করে আরেকদলের জন্য প্রশ্ন রেখে যায়। আরেক দল গানের মধ্যেই যুক্তি-তক্কো দিয়ে তার উত্তর দেয়, আবার পাল্টা প্রশ্ন রেখে যায়। লড়াই ভারি জমে উঠেছে। ভিন গায়ের এক নামকরা দল আজ এসেছে আসরে। এই দলের খুবই নাম ডাক। আসর শুরু হবার কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা কোণঠাসা করে ফেললো বিপক্ষ দলকে।

বিপক্ষ দলের এই হেরে যায় যায় ভাব, এমন সময় সেই দলের এক ফুটফুটে চেহারার ছেলে উঠে এলো মঞ্চে। মঞ্চ সাজানো হয়েছিলো রকমারি বাতি দিয়ে। আলো পড়ে ছেলেটির মুখ আর চোখ যেনো ঝলকে উঠছিলো। তার চুলগুলো এ সময় বেশ লম্বা ছিলো। ছেলেটি মঞ্চে উঠে হাত পা নেড়ে, নাচের তালে তালে গাইতে লাগলো। যেমন তার মিষ্টি গলা তেমন তার অভিনয়। দেখেশুনে মুগ্ধ হয়ে গেলো আসরের সবাই। প্রায় হেরে যাওয়া দলে জাগলো খুশির জোয়ার।

এ সময় অবশ্য ছেলেদের মেয়ে সেজেই গান গাইতে হতো। তবে, এই কিশোরের লম্বা চুলে তো তাকে এমনিতেই মেয়ে বলে চালিয়ে দিয়েছিলো লেটোর দলের ওস্তাদজী।

ভিনগায়ের দল গানের ভেতর দিয়ে নানা রকম সওয়াল করছিলো। সওয়াল মানে প্রশ্ন। আর বালক কবি নাচতে নাচতে, কোমর দুলিয়ে, ঘাড় নেড়ে নেড়ে দুহাত ওপরে তুলে সুর করে তাদের সব সওয়ালের উত্তর দিয়ে দিলো। তারপর করে বসলো এক জবর প্রশ্ন।

ব্যস! আর যায় কোথায়? ভিন গাঁয়ের দল পড়লো মহা মুশকিলে। তারা কোনো জবাবই খুঁজে পেলো না। সবাই বসে রইলো মাথা নীচু করে। জয়ী হলো বালকের দল।



নিমশা গ্রামে রাখাল বালক আর নিষ্কর্মা ছেলেরা একটা গানের দল গড়ে তুলেছিলো। তবে, শখ করে তৈরি এই দলটিতে তেমন কোনো গায়ক ছিলো না যে নেচে গেয়ে তালে তালে পালাগান করতে পারবে। কিন্তু ছোটো এই বালকটিকে পেয়ে তো তারা ধন্য হয়ে গেলো।



পালা শেষ হলো। আসরের মধ্যেই বালক-কবিকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন দলের সরদার। বললেন-‘ওরে আমার ব্যাঙাচি, বড় হয়ে তুই একদিন নিশ্চয়ই গোখরো সাপ হবি।’



তার চাচা কাজী বজলে করিম চুরুলিয়া অঞ্চলের লেটো দলের বিশিষ্ট ওস্তাদ ছিলেন এবং আরবি, ফারসি ও উর্দূভাষায় তার দখল ছিল। এই ছেলেটি ওস্তাদ বজলে করিমের প্রভাবেই লেটো দলে যোগ দিয়েছিলো। এছাড়াও ঐ অঞ্চলের জনপ্রিয় আরেক ওস্তাদ ছিলেন লেটো কবি শেখ চকোর (গোদা কবি) এবং কবিয়াল বাসুদেব। এই দলের সঙ্গেই তিনি বিভিন্ন স্থানে যেতেন, তাদের সাথে অভিনয় শিখতেন এবং তাদের নাটকের জন্য গান ও কবিতা লিখতেন। লেটোর দলের অধিকাংশ শিল্পীরা ছিল মূলত কিশোর। লেটো গানের দলে কিশোরদের অংশগ্রহণ থাকতে হতো আর যে সব কিশোর লেটোর গানে অংশ নিতো তারা ব্যাঙাচি’ নামে পরিচিত হতো।



লেটো গানে কিশোররা মেয়ে সেজে নাচ করে। তাদের বলা হয় বাই, ছোকরা ও রাঢ়। রাজকন্যা বা রাণী সাজে যারা তাদের বলা হয় রাণী। পাঠক বলা হয় যারা রাজা, মন্ত্রী, রাজপুত্র ও সেনাপতি সাজে। আর যারা নাচ, গান, অভিনয় ও সংলাপ ইত্যাদির দ্বারা দর্শক-শ্রোতাদের হাসায় তাদের বলা হয় সংদার বা সঁংগাল। গানের আসরে বিপক্ষের গোদা কবিকে হারিয়ে দিতেন, তা দেখে তাঁর চাচা লেটো গুরু বজলে করীম বলতেন, দুখু ‘বেঙাচি নয় গোখরো’, তিনি লেটো গানের জন্যে উপাধি পান ‘ভ্রমর কবি বা ভোমর কবি’ হিসেবে।



একসময় সুযোগ বুঝে গ্রামের ‘লেটো’ দলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এতে তার নাম হয়েছিলো। তাছাড়া, সমাজের নানা ধরনের লোকের সঙ্গে মেশবার সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি। এটা-ওটা জানবার সুযোগও প্রচুর পাওয়া গিয়েছিলো। কিন্তু ছন্নছাড়া জীবন তাঁকে হাতছানি দিতে লাগলো-বড় কিছু করার জন্য।



এই লেটো দলে থাকার সময়ই তার কবিতা রচনায় হাতে খড়ি হয়েছিলো। তখন তার বয়স আর কতোই বা হবে, এই তোমাদেরই মতোই। হয়তো বারো কি তেরো, সেই বয়সেই তিনি এমন সব কবিতা রচনা করতেন যে, সকলের তাক লেগে যেতো। তার সে সময়কার একটি কবিতা শোনো-
চাষ করো দেহ জমিতে।

হবে নানা ফসল এতে।।
নামাজে জমি ‘উগালে’
রোজাতে জমি‘সামলে’
কলেমায় জমিতে মই দিলে
চিন্তা কি হে এই ভবেতে।।

চুরুলিয়া, নিমশা আর রাখাকুল-এই তিন গ্রামে তখন ছিলো তিনটি নামকরা লেটো দল। এসব দলের জন্য নাটক রচনার ভার পড়লো বালক নজরুলের ওপর। এতে তিনি দুটো পয়সার মুখ দেখলেন বটে, কিন্তু বাড়ির লোকেরা তার এসব গান-বাজনা করাটা মোটেই পছন্দ করলো না। কারণ তাদের কাছে এগুলো হলো বে-শরীয়তি কাজ।এর ওপর তার দুরন্তপনা তো আছে। গ্রামের লোকজনও শেষে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো।



নজরুলের নিজেরও আর কিছু ভালো লাগছিলো না। লেটো নিয়ে যতোই মেতে থাকুন, মনটা ছিলো তার উড়ু উড়ু। গাঁয়ের লোকের গঞ্জনা আর বাড়ির লোকের ‘ব্যাজার’ মুখ সেই মনকে করে দিলো একেবারে বিদ্রোহী। আর তার পরপরই বিদ্রোহী ছেলেটিই গ্রাম ছাড়লেন। গ্রাম ছেড়ে তিনি গেলেন আসানসোলের এক কয়লার খনিতে চাকরি করতে। চাকরি অবশ্য তার জুটলো না। শেষমেষ চাকরি জুটলো এক রুটির দোকানে। সেখানে খুব ভোরে উঠে তাকে রুটির জন্য আটা মাখাতে হতো। আর তারপর সারাদিন দোকানে বসে রুটি বিক্রি করতে হতো। মাইনে ছিলো মাসে মাত্র এক টাকা। তাতেই তিনি খুশি। কিন্তু তিনি নানান কথা ভাবতে থাকেন দোকানে বসেই। দোকানে বসেই আটা মাখতে মাখতে গা বেয়ে তার ঘাম ঝরতে থাকে। তিনি পেরেশান হয়ে পড়েন। এসময় তার মনটাতে চাংগা করে তুলতে নিজেই গান বেঁধে গাইতে থাকেন-

মাখতে মাখতে গমের আটা
ঘামে ভিজলো আমার গাটা।

তার এই গান শুনে সংগী-সাথীরা তো হেসেই খুন। নজরুল তখন গম্ভীর হয়ে বলতেন, ‘তোমরা আমাকে ঠাট্টা করছো! কিন্তু দেখো, যেমন করেই হোক, একদিন আমি এ দেশের মস্ত বড়ো কবি হবো।’

মনের জোর আর নিজের সাধনার জোরেই, নিজের বিদ্রোহী স্বপ্ন দেখার ফলেই লেটোর এই ব্যাঙাচি পরে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন। তিনি তো আর রুটির দোকানের সেই গায়কটি নন, বড়ো হয়ে তিনি হয়েছিলেন বিদ্রোহী কবি। তিনিই আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম/এমএইচ/এইচআর/মে ২৫/১১

আজ দুখু মিয়ার ১১২তম জন্মবার্ষিকী

আজ ১১ই জ্যৈষ্ঠ অবহেলিত,উপেক্ষিত,আমাদের চির দুঃখী দুখু মিয়ার ১১২তম জন্মবার্ষিকী। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়া গ্রামে বাঙালির এই প্রিয়কবির জন্ম। অসাম্য, অসুন্দর ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন অক্লান্ত বিদ্রোহী,চির উন্নত শির। বিদ্রোহে, প্রেমে, মানবিকতায় শ্রেষ্ঠতম পুরুষ নজরুল অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও প্রগতির এক উজ্জ্বল প্রেরণা। 'জ্যৈষ্ঠের ঝড়'হয়ে এসেছিলেন এই চির বিদ্রোহী-প্রেমিক কবি। বাংলা কাব্যে এক নতুন যুগের স্রষ্টা নজরুল পরাধীন ব্রিটিশ ভারতে মুক্তির বাণী বয়ে এনেছিলেন তার কাব্যে। সূচনা করেছিলেন এক নতুন যুগের। 'অগ্নিবীণা', 'বিষের বাঁশী' আর 'ভাঙ্গার গান' গেয়ে জাগিয়ে তুলেছিলেন তিনি গোটা উপমহাদেশের মানুষকে। উল্কার মতো এসে আবার উল্কার মতো মিলিয়ে গেলেন বাকশক্তি হারিয়ে। দীর্ঘায়ু পেলেও তার সাহিত্যজীবন মাত্র ২৩ বছরের। এ স্বল্প পরিসর জীবনে নজরুলের বিপুল সৃষ্টিকর্ম বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। ঘটনাবহুল কর্মময় যেমন তার জীবন,তেমনি বিচিত্র তার সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি। ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে উপমহাদেশের মুক্তির আন্দোলন এবং একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নজরুলের কবিতা ও গান ছিল অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। বাংলা গানের জগতে নজরুল সুর ও বাণীর ক্ষেত্রে ঘটিয়েছেন এক অনন্য বিপ্লব। এক অতুলনীয় ঐশ্বর্যে তিনি ঋদ্ধ করেছেন বাংলা গান। এখনও বাঙালি জীবনে নিরন্তর প্রেরণা জুগিয়ে চলেছেতার বিচিত্র রচনা। তাই তো তিনি বাঙালি তথা বাংলাদেশের জাতীয় কবি। বাংলা সাহিত্যে অনবদ্য অবদানের জন্য তাকে শত কোটি শ্রদ্ধা জানাই।

আমাদের জাতীয় কবি,বিদ্রোহী কবি,সাম্যের কবি হওয়ার পরেও কেন জানি খুবই খারাফ লাগছে ভাবতে যে, আজও তার প্রতিভার যথার্থ মুল্যায়ন অর্জন করতে পারেনি। কবিকে তার মর্যাদার আসনে বসাতে আজ আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
বছর ঘুরে আবার যখন এই দিনটি এলো। মিডিয়াতে, শ-খানেক ব্লগে, টুইটারে, ফেসবুকে ব্যতিক্রম কিছু দেখব আশা করেছিলাম। কিন্তু সে আশা হতাশায় রূপ নিল যখন দেখলাম কোথাও ফলাও করে চাপা হয়নি দুখু মিয়ার জন্মবার্ষিকী। লেখা হয়নি তাকে নিয়ে কোন বড় বড় ব্লগ পোস্ট। কেউ যেন মনে রেখেও মনে রাখেনি। দুই-এক জায়গায় হালকা আপডেট আর কিছু পোস্ট দেখলাম। ব্যস! আফসোস!

সব শেষে এক ব্লগারের এক লাইনের উক্তি দিয়ে শেষ করছিঃ "সবই এবং সবাই আছে, নেই শুধু চির দুখি আমাদের দুখু মিয়া"- অন্য হাওয়া

Tuesday, 24 May 2011

গানের আড়াল

তোমার কন্ঠে রাখিয়া এসেছি মোর কন্ঠের গান-
এইটুকু শুধু র'বে পরিচয়? আর সব অবসান?
অন্তরতলে অন্তরতর যে ব্যথা লুকায়ে রয়,
গানের আড়ালে পাও নাই তার কোনদিন পরিচয়?

হয়ত কেবলি গাহিয়াছি গান, হয়ত কহিনি কথা,
গানের বাণী সে শুধু কি বিলাস, মিছে তার আকুলতা?
হৃদয়ে কখন জাগিল জোয়ার , তাহারি প্রতিধ্বনি
কন্ঠের তটে উঠেছে আমার অহরহ রণরণি'-
উপকূলে ব'সে শুনেছ সে সুর, বোঝ নাই তার মানে?
বেঁধেনি হৃদয়ে সে সুর, দুলেছে দুল হ'য়ে শুধু কানে?

Wednesday, 18 May 2011

মুসলিম আমার নাম

চীন আরব হিন্দুস্থান, নিখিল ধরাধাম
জানে আমায়, চেনে আমার, মুসলিম আমার নাম।।

অন্ধকারে আজান দিয়ে ভাংলো ঘুমঘোর,
আলোর অধিক চাঁদ এনেছি, রাত করেছি ভোর,
এক সমান করেছি ভেঙ্গে উচ্চ- নীচ তামাম।।

চেনে মোরে সাহারা গোবি দুর্গম পর্বত,
মন্থন করেছি সাগর নহর সিন্ধু হ্রদ,
বয়েছি আফ্রিকা ইউরোপে আমারই তাঞ্জাম।।

পাক মুলুকে বসিয়েছি সোনার মসজিদ,
জগৎ শত্রু পাপীদেরকে পিইয়েছি তৌহিদ;
বিরান - বনে রচেছি যে হাজার নগর গ্রাম।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

Tuesday, 17 May 2011

এল শোকের মোহররম

(মর্সিয়া)
এল শোকের সেই মোহররম কারবালার স্মৃতি লয়ে।
আজি বে-তাব বিশ্বমুসলিম সেই শোকে রোয়ে রোয়ে।।

মনে পড়ে আসগরে আজ পিয়াসা দুশের বাচ্চায়
পানি চাহিয়া পেল শাহাদাত হোসেনের বক্ষে রয়ে।।

এক হাতে বিবাহের কাঙ্গন এক হাতে কাসেমের লাশ,
বেহুঁশ খিমাতে সকিনা অসহ বেদনা সয়ে।।

ঝরিছে আঁখিতে খুন হায় জয়নাল বেহুঁশ কেঁদে
মানুষ ব'লে সহে এত পাথরও যেত ক্ষয়ে।।

শূন্য পিঠে কাঁদে দুলদুল হযরত হোসেন শহীদ,
আসমানে শোকের বারেষ, মরে আজি খুন হয়ে।।

(গুল বাগিচা) - কাজী নজরুল ইসলাম-

কালেমা শাহাদাতে আছে

কালেমা শাহাদাতে আছে খোদার জ্যোতি।
ঝিনুকের বুকে লুকিয়ে থাকে যেমন মোতি।।

ঐ কালেমা জপে যে ঘুমের আগে,
ঐ কালেমা জপিয়া যে প্রভাতে জাগে,
দুখের সংসার সুখময় হয় তার-
মুসিবত আসে না কো, হয় না ক্ষতি।।

হরদম জপে মনে কালেমা যে জন
খোদায়ী তত্ত্ব তার রহে না গোপন,
দীলের আয়না তার হয়ে যায় পাক সাফ
সদা আল্লাহর রাহে তার রহে মতি।।

এসমে আজম হতে কদর ইহার,
পায় ঘরে বসে খোদা আর রাসুলের দিদার,
তাহার হৃদয়াকাশে সাত বেহেশত ভাসে
তার খোদার আরশে হয় আখেরে গতি।।

- কাজী নজরুল ইসলাম-

যে আল্লার কথা শোনে

যে আল্লার কথা শোনে
তারি কথা শোনে লোকে।
আল্লার নূর যে দেখেছে
পথ পায় লোক তার আলোকে।।

যে আপনার হাত দেয় আল্লায়
জুলফিকারের তেজ সে পায়,
যার চোখে আছে খোদার জ্যোতি
রাত্রি পোহায় তারি চোখে।।

ভোগের তৃষ্ণা মিটেছে যার
খোদার প্রেমের শিরনী পেয়ে,
যায় বাদশা নবাব গোলাম হয়ে
সেই ফকিরের কাছে যেয়ে।।

আসে সেই কওমের ইমাম সেজে
কওমকে পেয়েছে যে,
তারি কাছে খোদার দেওয়া
শান্তি আছে দুঃখে- শোকে।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

চল রে কাবার জেয়ারতে

চল রে কাবার জেয়ারতে, চল নবীজীর দেশ।
দুনিয়াদারী লেবাস খুলে পর রে হাজীর বেশ।।

আওকাত তোর থাকে যদি আরাফাতের ময়দান
চল আরাফাতের ময়দান,
এক জমাত হয় যেখানে ভাই নিখিল মুসলমান-
মুসলিম গৌরব দেকঘার যদি থাকে তার খাহেশ।।

যেথায় হযরত হলেন নাজেল মা আমিনার ঘরে,
খেলেছেন যার পথে ঘাটে মক্কার শহরে-
চল মক্কার শহরে;
সেই মাঠের ধূরা মাখবি যথা নবী চরাতেন মেষ।।

করে হিযরত কায়েম হলেন মদিনায় হযরত-
-যে মদিনায় হযরত,
সেই মদিনা দেখবি রে চল
মিটবে প্রানের হসরত;
সেথা নবীজীর ঐ রওজাতে তোর
আরজী করবি পেশ।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

Monday, 16 May 2011

এ মোর অহংকার

নাই বা পেলাম আমার গলায় তোমার গলার হার,
তোমায় আমি ক'রব সৃজন- এ মোর অহংকার!
এমনি চোখের দৃষ্টি দিয়া
তোমায় যারা দেখলো প্রিয়া,
তাদের কাছে তুমি তুমিই। আমার স্বপনে
তুমি নিখিল-রূপের রাণী- মানস-আসনে!

সবাই যখন তোমায় ঘিরে ক'রবে কলরব,
আমি দূরে ধেয়ান-লোকে র'চব তোমার স্তব।
র'চব সুরধুনী-তীরে
আমার সুরের উর্বশীরে,
নিখিল কন্ঠে দুলবে তুমি গানের কন্ঠ-হার-
কবির প্রিয়া অশ্রুমতী গভীর বেদনার!

পথচারী

কে জানে কোথায় চলিয়াছি ভাই মুসাফির পথচারি,
দু'ধারে দু'কুল দুঃখ-সুখের-মাঝে আমি স্রোত-বারি!
আপনার বেগে আপনি ছুটেছি জন্ম-শিখর হ'তে
বিরাম-বিহীন রাত্রি ও দিন পথ হ'তে আন পথে!
নিজ বাস হ'ল চির-পরবাস, জন্মের ক্ষন পরে
বাহিরিনি পথে গিরি-পর্বতে-ফিরি নাই আর ঘরে।
পলাতকা শিশু জন্মিয়াছিনু গিরি-কন্যার কোলে,
বুকে না ধরিতে চকিতে ত্বরিতে আসিলাম ছুটে চ'লে।

জননীরে ভুলি' যে-পথে পলায় মৃগ-শিশু বাঁশী শুনি',
যে পথে পলায় শশকেরা শুনি' ঝরনার ঝুনঝুনি,
পাখী উড়ে যায় ফেলিয়া কুলায় সীমাহীন নভোপানে,
সাগর ছাড়িয়া মেঘের শিশুরা পলায় আকাশ-যানে,-
সেই পথ ধরি' পলাইনু আমি! সেই হ'তে ছুটে চলি
গিরি দরী মাঠ পল্লীর বাট সজা বাঁকা শত গলি।

বাতায়ন-পাশে-গুবাক-তরুর-সারি

বিদায়, হে মর বাতায়ন-পাশে নিশীথ জাগার সাথী!
ওগো বন্ধুরা, পান্ডুর হয়ে এল বিদায়ের রাতি!
আজ হ'তে হ'ল বন্ধ আমাদের জানালার ঝিলিমিলি,
আজ হ'তে হ'ল বন্ধ মোদের আলাপন নিরিবিলি।

অস্ত-আকাশ-অলিন্দে তার শীর্ণ কপোল রাখি'
কাঁদিতেছে চাঁদ, 'মুসাফির জাগ, নিশি আর নাই বাকী!'
নিশীথিনী যায় দূর বন-ছায়, তন্দ্রায় ঢুলুঢুল,
ফিরে ফিরে চায়, দ'-হাতে জরায় আঁধারের এলোচুল।-

চমকিয়া জাগি, ললাটে আমার কাহার নিশাস লাগে?
কে করে ব্যজন তপ্ত ললাটে, কে মোর শিয়রে জাগে?
জেগে দেখি, মোর বাতায়ন-পাশে জাগিছে স্বপনচারী
নিশীথ রাতের বন্ধু আমার গুবাক-তরুর সারি!

ভীরু

আমি জানি তুমি কেন চাহ না ক' ফিরে।
গৃহকোন ছাড়ি আসিয়াছ আজ দেবতার মন্দিরে।
পুতুল লইয়া কাটিয়াছে বেলা
আপনারে ল'য়ে শুধু হেলা-ফেলা,
জানিতে না, আছে হৃদয়ের খেলা আকুল নয়ন-নীরে,
এত বড় দায় নয়নে নয়নে নিমেষের চাওয়া কি রে?
আমি জানি তুমি কেন চাহ না ক' ফিরে।।

আমি জানি তুমি কেন চাহ না ক' ফিরে।
জানিতে না আঁখি আঁখিতে হারায় ডুবে যায় বাণী ধীরে!
তুমি ছাড়া আর ছিল না ক' কেহ
ছিল না বাহির ছিল শুধু গেহ,
কাজল ছিল গো জল ছিল না ও উজল আঁখির তীরে।
সে-দিনও চলিতে ছলনা বাজেনি ও চরণ-মঞ্জীরে!
আমি জানি তুমি কেন চাহ না ক' ফিরে।।

চিরঞ্জীব জগলুল

প্রাচীর দুয়ারে শুনি কলরোল সহসা তিমির-রাতে,
মিসরের শের, শির শমশের-সব গেল এক সাথে!
সিন্ধুর গলা জড়ায়ে কাঁদিতে দু'তীরে ললাট হানি'
ছুটিয়া চ'লেছে মরু-বকৌলি 'নীল' দরিয়ার পানি!
আঁচলের তার ঝিনুক মানিক কাদায় ছিটায়ে পড়ে,
সোঁতের শ্যাওলা আলো কুন্তল লুটাইছে বালুচরে......
মরু-'সাইমুম'-তাঞ্জামে চড়ি' কোন পরীবানু আসে?
'লু'-হাওয়া ধরেছে ধ'রেছে বালুর পর্দা সম্ভ্রমে দুই পাশে!
সূর্য নিজেরে লুকায় টানিয়া বালুর আস্তরণ,
ব্যজনী দুলায় ছিন্ন পাইন-শাখায় প্রভঞ্জন।
ঘূর্ণি-বাঁদীরা নীল দরিয়ায় আ৬চল ভিজায়ে আনি'
ছিটাইছে বারি, মেঘ হ'তে মাগি' আনিছে বরফ-পানি।
ও বুঝি মিসর- বিজয়লক্ষো মূরছিতা তাঞ্চামে,
ওঠে হাহাকার ভগ্ন মিনার আঁধার দীওয়ান-ই-আমে!
কৃষানের গরু মাঠে মাঠে ফেরে, ধরেনি ক' আজ হাল,
গম-ক্ষেত ভেঙ্গে পানি ব'য়ে যায় তবু নাহি বাঁধে আ'ল,
মনের বাঁধেরে ভেঙ্গেছে যাহার চোখের সাঁতার পানি
মাঠের পানি ও আ'লেরে কেমনে বা৬ধিবে সে, নাহি জানি।
হৃদয়ে যখন ঘনায় শাঙন, চোখে নামে বরষাত,
তখন সহসা হয় গো মাথায় এমনি বজ্রপাত!
মাটিরে উজায়ে উপুড় হইয়া কাঁদিছে শ্রমিক কুলি,
বলে-"মা গো তোর উদিরে মাটির মানুষই হ'য়েছে ধূলি,
রতন মানিক হয় না তো মাটি, হীরা সে হীরাই থাকে,
মোদের মাথায় কোহিনূর মণি- কি করিব বল তাকে?
দুর্দিনে মা গো যদি ও-মাটির দুয়ার খুলিয়া খুঁজি,
চুরি করিবি না তুই এ মানিক? ফিরে পাব হারা পুঁজি?
লৌ পরশি' করিনু শপথ, ফিরে নাহি পাই যদি
নতুন করিয়া তর বুকে মোরা বহাব রক্ত-নদী!"

নওরোজ

রূপের সওদা কে করিবি তোরা আয় রে আয়,
নওরোজের এই মেলায়!
ডামাডোল আজি চাঁদের হাট,
লিট হ'ল রূপ হ'ল লোপাট!
খুলে ফেলে লাজ শরম-ঠাট!
রূপসীরা সব রূপ বিলায়
বিনি কিম্মতে হাসি-ইঙ্গিতে হেলাফেলায়!
নওরোজের এই মেলায়!

শা'জাদা উজির নওয়াব-জাদারা-রূপ-কুমার
এই মেলায় খরিদ-দার!
নও-জোয়ানীর জহুরী ঢের
খুঁজিছে বিপণি জহরতের,
জহরত নিতে-টেড়া আঁখের
জহর কিনিছে নির্বিকার!
বাহানা করিয়া ছোঁয় গো পিরান জাহানারার
নওরোজের রূপ-কুমার!

আয় বেহেশত কে যাবি আয়

আয় বেহেশতে কে যাবি আয়
প্রানের বুলন্দ দরওয়াজায়,
'তাজা-ব-তাজা'র গাহিয়া গান
চির-তরুণের চির-মেলায়।
আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।।

যুবা-যুবতীর সে-দেশে ভিড়,
সেথা যেতে নারে বুঢঢা পীর,
শাস্ত্র-শকুন জ্ঞান-মজুর
যেতে নারে সেই হুরী-পরীর
শরাব সাকীর গুলিস্তাঁয়।
আয় বেহেশ্তে কে যাবি আয়।।

ঈদ মোবারক

শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো,
কত বালুচরে কত আঁখি-ধারা ঝরায়ে গো,
বরষের পরে আসিলে ঈদ!
ভুখারীর দ্বারে সওগাত ব'ইয়ে রিজওয়ানের,
কন্টক-বনে আশ্বাস এনে গুল- বাগের,
সাকীরে "জা'মের দিলে তাগিদ!

খুশীর পাপিয়া পিউ পিউ গাহে দিগ্বিদিক
বধূ জাগে আজ নিশীথ-বাসরে নির্নিমিখ!
কোথা ফুলদানী, কাঁদিছে ফুল,
সুদূর প্রবাসে ঘুম নাহি আসে কার সখার,
মনে পড়ে শুধু সোঁদা-সোঁদা বাস এলো খোঁপার,
আকুল কবরী উলঝলুল!

ওগো কাল সাঁঝে দ্বিতীয়া চাঁদের ইশারা কোন
মুজদা এনেছে, সুখে ডগমগ মুকুলী মন!
আশাবরী- সুরে ঝুরে সানাই।
আতর-সুবাসে কাতর হ'ল গো পাথর-দিল,
দিলে দিলে আজ বন্ধকী দেনা-নাই দলিল,
কবুলিয়তের নাই বালাই।।

মিসেস এম রহমান

মোহররমের চাঁদ ওঠার তো আজিও অনেক দেরি,
কোন কারবালা-মাতম উঠিল এখনি আমায় ঘেরি'?
ফোরাতের মৌজ ফোঁপাইয়া ওঠে কেন গো আমার চোখে!
নিখিল-এতিম ভিড় ক'রে কাঁদে আমার মানিস-লোকে!
মর্সিয়া-খান! গা'সনে অকালে মর্সিয়া-শোকগীতি,
সর্বহারার অশ্রু-প্লাবনে সয়লাব হবে ক্ষিতি!......

আজ যবে হায় আমি
কুফার পথে গো চলিতে চলিতে কারবালা মাঝে থামি,
হেরি চারিধারে ঘিরিয়াছে মোরে মৃত্যু-এজিদ-সেনা,
ভায়েরা আমার দুশমন-খুনে মাখিতেছে হাতে হেনা,
আমি শুধু হায় রোগ শয্যায় বাজু কামড়ায়ে মরি!
দানা-পানি নাই পাতার খিমায় নির্জীব আছি পড়ি'।
এমন সময় এল 'দুলদুল' পৃষ্ঠে শূন্য জিন,
শূন্যে কে যেন কাঁদিয়া উঠিল- 'জয়নাল আবেদিন'!
শীর্ণ-পাঞ্জা দীর্ণ-পাঁজর পর্ণকুটীর ছাড়ি'
উঠিতে পড়িতে ছুটিয়া আসিনু, রুধিল দুয়ার দ্বারী!
বন্দিনী মা'র ডাক শুনি শুধু জীবন-ফোরাত-পারে,
'এজিদের বেড়া পারায়ে এসেছি, যাদু তুই ফিরে যারে!'
কাফেলা যখন কাঁদিয়া উঠিল তখন দুপুর নিশা!-
এজিদে পাইব, কোথা পাই হায় আজরাইলের দিশা?
জীবন ঘিরিয়া ধূ-ধূ করে আজ শুধু সাহারার বালি,
অগ্নি-সিন্ধু করিতেছি পান দোজখ করিয়া খালি!
আমি পুড়ি, সাথে বেদনাও পুড়ে, নয়নে শুকায় পানি,
কলিজা চাপিড়া তড়পায় শুধু বুক-ভাঙা কাৎরানি!
মাতা ফাতেমার লাশের ওপর পড়িয়া কাতর স্বরে
হাসান হোসেন কেমন করিয়া কেঁদেছিল, মনে পড়ে!

*******************************

অঘ্রানের সওগাত

ঋতুর খাঞ্চা ভরিয়া এল কি ধরণীর সওগাত?
নবীন ধানের আঘ্রানে আজি অঘ্রান হ'ল মাৎ।
'গিন্নি-পাগল' চা'লের ফিরনী
তশতরী ভ'রে নবীনা গিন্নী
হাসিতে হাসিতে দিতেছে স্বামীরে, খুশীতে কাঁপিছে হাত।
শিরনী রাঁধেন বড় বিবি, বাড়ী গন্ধে তেলেসমাত!

মিঞা ও বিবিতে বড় ভাব আজি খামারে ধরে না ধান।
বিছানা করিতে ছোট বিবি রাতে চাপা সুরে গাহে গান!
'শাশবিবি' কন, 'আহা, আসে নাই
কতদিন হ'ল মেজলা জামাই।'
ছোট মেয়ে কয়, 'আম্মা গো, রোজ কাঁদে মেজো বুবুজান!'
দলিজের পান সাজিয়া সাজিয়া সেজো-বিবি লবেজান!

হল্লা করিয়া ফিরিছে পারার দস্যি ছেলের দল!
ময়নামতীর শাড়ী-পরা মেয়ে গয়নাতে ঝলমল!
নতুন পৈঁচি বাজুবন্দ প'রে
চাষা-বৌ কথা কয় না গুমোরে,
জারী গান আর গাজীর গানেতে সারা গ্রাম চঞ্চল!
বৌ করে পিঠা 'পুর'-দেওয়া মিঠা, দেখে জিভে সরে জল!

কে বিদেশী বন-উদাসী

(ভৈরবী- আশাবরী- কাহারবা)

কে বিদেশী বন-উদাসী
বাঁশের বাঁশী বাজাও বনে,
সুর- সোহাগে তন্দ্রা লাগে
কুসুম- বাগে গুল- বদনে।।

ঝিমিয়ে আসে ভোমরা পাখা,
যূথীর চোখে আবেশ মাখা,
কাতর ঘুমে চাঁদিমা রাকা
(ভোর গগনের দর-দালানে)
দর-দালানের ভোর গগনে।।

লজ্জাবতীর ললিত লতায়
শিহর লাগে পুলক ব্যথায়,
মালিকা সম বঁধুরে জড়ায়
বালিকা-বধূ সুখ-স্বপন্ব।।

সহসা জাগি' আধেক রাতে
শুনি সে বাঁশি বাজে হিয়াতে,
বাহু সিথানে কেন কে জানে
কাঁদে গো পিয়া বাঁশীর সনে।।

বৃথাই গাঁথি, কথার মালা
লুকাস কবি বুকের জ্বালা,
কাঁদে নিরালা বনশীওয়ালা
তোরি উতলা বিরহী মনে।।

মৃদুল বায়ে বকুল ছায়ে

(সিন্ধু ভৈরবী- কাহারবা)

মৃদুল বায়ে বকুল ছায়ে
গোপন পায়ে কে ঐ আসে,
আকাশ- ছাওয়া চোখের চাওয়া,
উতল হাওয়া কেশের বাসে।।

ঊষার রাগে সাঁজের ফাগে
যুগল তাহার কপোল রাঙে,
কমল দুলে সূরুয শশী
নিশীথ-চুলে আঁধার রাশে।।

চরণ- ছোঁওয়ায় পাতার ঠোঁটে,
মুকুল কাঁপে কুসুম ফোটে,
আঁখির পলক- পতন-ছাঁদে
নিশীথ কাঁদে দিবস হাসে।।

গ্রহের মালা অলখ-খোঁপায়
কপোল শোভে তারার টোপায়,
কুসুম-কাঁটায় আঁচল -বাঁধে
রুমাল লুটায় সবুজ ঘাসে।।

সাঁঝের শাখায় কানন মাঝে
বালার বিহগ কাঁকন বাজে,
জীবন তাহার সোনার স্বপন
দোলায় ঘুমায় শিশুর পাশে।।

তোমার লীলা কমল করে,
নিখিল-রাণী! দুলাও মোরে।
ঢুলাও আমার সুবাসখানি
তোমার মুখের মদির শ্বাসে।।

কেন কাঁদে পরান কি বেদনায় কারে কহি

(মিশ্র বেহাগ-খাম্বাজ-দাদরা)
কেন কাঁদে পরান কি বেদনায় কারে কহি!
সদা কাঁপে ভীরু হিয়া রহি' রহি'।।

সে থাকে নীল নভে আমি নয়ন-জল-সায়রে,
সাতাশ তারার সতীন সাথে সে যে ঘুরে' মরে,
কেমনে ধরি সে চাঁদে রাহু নহি।।

কাজল করি' যারে রাখি গো আঁখি-পাতে
স্বপনে যায় যে ধুয়ে গোপন অশ্রু-সাথে!
বুকে তায় মালা করি' রাখিলে যায় সে চুরি,
বাঁধিলে বলয়-সাথে মলয়ায় যায় সে উড়ি',
কি দিয়ে সে উদাসীর মন মোহি'।।

ভুলি কেমনে আজো যে মনে বেদনা-সনে রহিল আঁকা

(পিলু-কাহারবা- দাদরা)
ভুলি কেমনে আজো যে মনে বেদনা-সনে রহিল আঁকা।
আজো সজনী দিন রজনী সে বিনে গণি তেমনি ফাঁকা।।

আগে মন ক'রলে চুরি, মর্মে শেষে হানলে ছুরি,
এত শঠতা এত যে ব্যথা তবু যেন তা' মধুর মাখা।।

চকোরী দেখলে চাঁদে দূর হ'তে সই আজো কাঁদে,
আজো বাদলে ঝুলন ঝোলে তেমনি জলে চলে বলাকা।।

বকুলের তলায় দোদুল কাজলা মেয়ে কুড়োয় লো ফুল,
চলে নাগরী কাঁখে গাগরী চরণ ভারী কোমর বাঁকা।।

তরুরা রক্ত-পাতা, আসলো লো তাই ফুল- বারতা,
ফুলেরা গ'কে ঝরেছে ব'লে ভ'রেছে ফলে বিটপী-শাখা।।

ডালে তোর হানলে আঘাত দিস রে কবি ফুল-সওগাত,
ব্যথা-মুকুলে অলি না ছুঁলে বনে কি দুলে ফুল-পতাকা।।

বসিয়া বিজনে কেন একা মনে

(ইমন-মিশ্র গজল- কাহারবা)

বসিয়া বিজনে কেন একা মনে
পানিয়া ভরণে চল লো গোরী।
চল জলে চল কাঁদে বনতল,
ডাকে ছল ছল জল-লহরী।।

দিবা চ'লে যায় বলাকা-পাখায়
বিহগের বুকে বিহগী লুকায়!
কেঁদে চখা-চখী মাগিছে বিদায়
বারোয়াঁর সুরে ঝুরে বাঁশরী।।

সাঁঝ হেরে মুখ চাঁদ-মুকুরে
ছায়াপথ-সিঁথি চরি' চিকুরে,
নাচে ছায়া-নটী কানন-পুরে,
দুলে লটপট লতা-কবরী।।

'বেলা গেল বধু' ডাকে ননদী,
'চলো জল নিতে যাবি লো যদি'
কালো হ'য়ে আসে সুদূর নদী,
নাগরিকা-সাজে সাজে নগরী।।

মাঝি বাঁধে তরী সিনান-ঘাটে
ফিরিছে পথিক বিজন মাঠে,
কারে ভেবে বেলা কাঁদিয়া কাটে
ভর আঁখি-জলে ঘট-গাগরী।।

ওগো বে-দরদী, ও রাঙা পায়ে
মালা হ'য়ে কে গো গেল জড়ায়ে,
তব সাথে কবি পড়িল দায়ে
পায়ে রাখি তারে না গলে পরি।।

আমারে চোখ ইশারায় ডাক দিলে হায় কে গো দরদী

(জৌনপুরী-আশাবরী-কাহারবা)

আমারে চোখ ইশারায় ডাক দিলে হায় কে গো দরদী,
খুলে দাও রং-মহলার তিমির-দুয়ার ডাকিলে যদি।।

গোপনে চৈতি হাওয়ায়, গুল-বাগিচায় পাঠালে লিপি,
দেখে তাই ডাকছে ডালে কূ-কূ ব'লে কোয়েলা-ননদী।।

পাঠালে ঘূর্ণি দূতি ঝড়-কপোতি বৈশাখে সখি,
বরষায় সেই ভরসায় মোর পানে চায় জল-ভরা নদী।।

তোমারি অশ্রু জলে শিউলি-তলে সিক্ত শরতে,
হিমানীর পরশ বুলাও ঘুম ভেঙে দাও দ্বার যদি রোধি।।

পউষের শূন্য মাঠে একলা বাটে চাও বিরহিণী,
দুঁহু হায় চাই বিষাদে মধ্যে কাঁদে তৃষ্ণা-জলধি।।

ভিড়ে যা ভোর বাতাসে ফুল-সুবাসে রে ভোমর-কবি,
ঊষসীর শিশ-মহলে আসতে যদি চাস নিরবধি।।

বুলুবুল (ভীমপলশ্রী-দাদরা)

(মিস ফজিলাতুন্নেসা, এম.এ.র বিলাত গমন উপলক্ষে)

জাগিলে 'পারুল' কিগো 'সাত ভাই চম্পা' ডাকে।
উদিলে চন্দ্র-লেখা বাদলের মেঘের ফাঁকে।

চলিলে সাগর ঘুরে
অলকার মায়ার পুরে,
ফোটে ফুল নিত্য যেথায়
জীবনের ফুল্ল-শাখে।।

আঁধারের বাতায়নে চাহে আজ লক্ষ তারা,
জাগিছে বন্দিনীরা, টুটে ঐ বন্ধ কারা!

থেকো না স্বর্গে ভুলে
এপারের মর্ত্য-কূলে
ভিড়ায়ো সোনার তরী
আবার এই নদীর বাঁকে।।

প্রভাতী

ভোর হোলো
দোর খোলো
খুকুমণি ওঠ রে!
ঐ ডাকে
জুঁই-শাখে
ফুল-খুকী ছোট রে!
খুকুমণি ওঠ রে!
রবি মামা
দেয় হামা
গায়ে রাঙা জামা ঐ,
দারোয়ান
গায় গান
শোনো ঐ, 'রামা হৈ'।
ত্যাজি' নীড়
ক'রে ভিড়
ওড়ে পাখী আকাশে,
এন্তার
গান তার
ভাসে ভোর বাতাসে!
চুলবুল
বুলবুল
খুকুমনি উঠবে!
খুলি'হাল
তুলি' পাল
ঐ তরী চ'ললো,
এইবার
এইবার
খুকু চোখ খুললো!
আলসে
নয় সে
ওঠে রোজ সকালে,
রোজ তাই
চাঁদা ভাই
টিপ দেয় কপালে।
উঠল
ছুটল
ঐ খোকাখুকী সব,
'উঠেছে
আহে কে'
ঐ শোনো কলরব।
নাই রাত
মুখ হাত
ধোও, খুকু জাগো রে!
জয়গানে
ভগবানে
তুষি'বর মাগো রে!

খুকী ও কাঠবিড়ালি

কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি নেবু? লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও?-

ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!
বাতাবি-নেবু সকল্গুলো
একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো!
তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস পাটুস চাও?
ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি আমার! যাও!

কাঠবেড়ালি! বাঁদরীমুখী! মারবো ছুঁড়ে কিল?
দেখনি তবে? রাঙাদা'কে ডাকবো? দেবে ঢিল!
পেয়ারা দেবে? যা তুই ওঁচা!
তাইতো তার নাকটি বোঁচা!
হুতমো-চোখী! গাপুস গুপুস!
একলাই খাও হাপুস হুপুস!
পেটে তোমার পিলে হবে! কুড়ি-কুষ্টি মুখে!
হেই ভগবান! একটা পোকা যাস পেটে ওর ঢুকে!

ইস। খেয়োনা মস্তপানা ঐ সে পাকাটাও!
আমিও খবই পেয়ারা খাই যে! একটি আমায় দাও!
কাঠবেড়ালি! তুমি আমার ছোড়দি' হবে? বৌদি হবে? হুঁ,
রাঙা দিদি? তবে একটা পেয়ারা দাও না! উঁঃ!


এ রাম! তুমি ন্যাংটা পুঁটো?
ফ্রকটা নেবে? জামা দু'টো?
আর খেয়ো না পেয়ারা তবে,
বাতাবি নেবুও ছাড়ুতে হবে!
দাঁত দেখিয়ে দিচ্ছ যে ছুট? অ-মা দেখে যাও!-
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!

ঝিঙে ফুল

ঝিঙে ফুল! ঝিঙে ফুল!
সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া ফিঙে-কুল-
ঝিঙে ফুল।

গুল্মে পর্ণ
লতিকার কর্ণে
ঢল ঢল স্বর্ণে
ঝলমল দোলে দুল-
ঝিঙে ফুল।

পাতার দেশের পাখী বাঁধা হিয়া বোঁটাতে,
গান তব শুনি সাঁঝে তব ফুটে ওঠাতে।
পউষের বেলা শেষ
পরি' জাফরানি বেশ
মরা মাচানের দেশ
ক'রে তোল মশগুল-
ঝিঙে ফুল।

শ্যামলী মায়ের কোলে সোনামুখ খুকু রে
আলুথালু ঘুমু যাও রোদে-গলা দুকুরে।

প্রজাপতি ডেকে যায়-
'বোঁটা ছিঁড়ে চ'লে আয়।'
আসমানের তারা চায়-
'চ'লে আয় এ অকূল!'
ঝিঙে ফুল।।

তুমি বল-'আমি হায়
ভালোবাসি মাটি-মায়,
চাই না ও অলকায়-
ভালো এই পথ-ভুল।'
ঝিঙে ফুল।।

রাজ-ভিখারী

কোন ঘর-ছাড়া বিবাগীর বাঁশি শুনে উঠেছিল জাগি'
ওগো চির-বৈরাগী!
দাঁড়ালে ধুলায় তব কাঞ্চন-কমল-কানন ত্যাগি'-
ওগো চির বৈরাগী।

ছিলে ঘুম-ঘোরে রাজার দুলাল,
জানিতে না কে সে পথের কাঙ্গাল
ফেরে পথে পথে ক্ষুধাতুর-সাথে ক্ষুধার অন্ন মাগি',
তুমি সুধার দেবতা 'ক্ষুধা ক্ষুধা' বলে কাঁদিয়া উঠিলে জাগি'-
ওগো চির-বৈরাগী!

আঙ্গিয়া তোমার নিলে বেদনার গৈরিক-রঙ্গে রেঙ্গে'
মোহ ঘুমপুরো উঠিল শিহরি' চমকিয়া ঘুম ভেঙ্গে!
জাগিয়া প্রভাতে হেরে পুরবাসী
রাজা দ্বারে দ্বারে ফেরে উপবাসী,
সোনার অঙ্গ পথের ধুলায় বেদনার দাগে দাগী!
কে গো নারায়ন নবরূপে এলে নিখিল-বেদনা-ভাগী-
ওগো চির-বৈরাগী!

'দেহি ভবিত ভিকষাম' বলি' দাঁড়ালে রাজ-ভিখারী,
খুলিল না দ্বার, পেলে না ভিক্ষা, দ্বারে দ্বারে ভয় দ্বারী!
বলিলে, 'দেবে না? লহ তবে দান-
ভিক্ষাপূর্ণ আমার এ প্রান!'-
দিল না ভিক্ষা, নিল না ক' দান, ফিরিয়া চলিলে যোগী।
যে-জীবন কেহ লইল না তাহা মৃত্যু লইল মাগি'।।

ইন্দ্র-পতন

তখনো অস্ত যায়নি সূর্য, সহসা হইল শুরু
অম্বরে ঘন ডম্বরু-ধ্বনি গুরু-গুরু-গুরু!
আকাশে আকাশে বাজিছে এ কোন ইন্দ্রের আগমনী?
শুনি, অন্দুব-কম্বু- নিনাদে ঘন বৃঙ্ঘিত- ধ্বনি।
বাজে চিক্কুর- হ্রেষা- হর্ষণ মেঘ- মন্দুরা- মাঝে,
সাজিল প্রথম আষাঢ় আজিকে প্রলয়ংকর সাজে।

ঘনায় অশ্রু-বাষ্প- কুহেলি ঈশান- দিগঙ্গনে,
স্তব্ধ- বেদনা দিগ-বালিকারা কী যে কাঁদুনী শোনে!
কাঁদিছে ধরার তরু-লতা-পাতা, কাঁদিছে পশু-পাখী,
ধরার ইন্দ্র স্বর্গে চলেছে ধূলির মহিমা মাখি'।
বাজে আনন্দ- মৃদং গগনে, তড়িৎ-কুমারী নাচে,
মর্ত্য- ইন্দ্র বসিবে গো আজ স্বর্গ- ইন্দ্র কাছে।
সপ্ত- আকাশ- সপ্তস্বরা হানে ঘন করতালি,
কাঁদিছে ধরায় তাহারি প্রতিধ্বনি-খালি, সব খালি!

হায় অসহায় সর্বংসহা মৌনা ধরণী মাতা,
শুধু দেব- পূজা তরে কি মা তর পুষ্প হরিৎমাতা?
তোর বুকে কি মা চির-অতৃপ্ত রবে সন্তান-ক্ষুধা?
তোমার মাটির পাত্রে কি গো মা ধরে না অমৃত-সুধা?
জীবন- সিন্ধু মথিয়া যে-কেহ আনিবে অমৃত-বারি
অমৃত-অধিপ দেবতার রোষ পড়িবে কি শিরে খাঁটি
তারে স্বর্গের আছে প্রয়োজন, যারে ভালোবাসে মাটি।

কাঁটার মৃণালে উঠেছিল ফুটে যে চিত্ত- শতদিল
শোভেছিল যাহে বাণী কমলার রক্ত-চরণ-তল,
সম্ভ্রম-নত পূজারী মৃত্যু ছিঁড়িল সে শতদলে-
শ্রেষ্ঠ অর্ঘ্য অর্পিবে বলি' নারায়ণ-পদতলে!
জানি জানি মোরা, শংখ-চক্র-গদা যাঁর হাতে শোভে-
পায়ের পদন হাতে উঠে তাঁর অমর হইয়া র'বে।
কত শান্ত্বনা- আশা-মরিচিকা কত বিশ্বাস-দিশা
শোক- সাহারায় দেখা দেয় আসি, মেটে না প্রানের তৃষা!

দুলিছে বাসুকি মণীহারা ফণী, দুলে সাথে বসুমতী,
তাহার ফনার দিন-মণি আজ কোন গ্রহে দেবে জ্যোতি!
জাগিয়া প্রভাতে হেরিনু আজিকে জগতে সুপ্রভাত,
শয়তানও আজ দেবতার নামে করিছে নান্দীপাঠ!
হে মহাপুরুষ, মহাবিদ্রোহী, হে ঋষি, সোহম-স্বামী!
তব ইঙ্গিতে দেখেছি সহসা সৃষ্টি গিয়াছে থামি',
থমকি গিয়াছে গতির বিশ্ব চন্দ্র- সূর্য- তারা,
নিয়ম ভুলেছে কঠোর নিয়তি, দৈব দিয়াছে সাড়া!

যখনি স্রষ্ঠা করিয়াছে ভুল, ক'রেছ সংস্কার,
তোমারি অগ্রে স্রষ্টা তোমারে ক'রেছে নমস্কার!
ভৃগুর মতন যখনি দেখেছ অচেতন নারায়ণ,
পদাঘাতে তাঁর এনেছ চেতনা, জেগেছে জগজ্জন!
ভারত-ভাগ্য-বিধাতা বক্ষে তব পদ-চিন ধরি'
হাঁকিছেন, 'আমি এমন করিয়া সত্য স্বীকার করি!
জাগাতে সত্য এত ব্যাকুলতা এত অধিকার যার,
তাহার চেতন- সত্যে আমার নিযুত নমস্কার!'

আজ শুধু জাগে তব অপরূপ সৃষ্টি- কাহিনী মনে,
তুমি দেখা দিলে অমিয়-কন্ঠ বাণীর কমল-বনে!
কখন তোমার বীণা ছেয়ে গেল সোনার পদন-দলে,
হেরিনু সহসা ত্যাগের তপন তোমার ললাট-তলে!
লক্ষী দানিল সোনার পাপড়ি, বীণা দিল করে বাণী,
শিব মাখালেন ত্যাগের বুভূতি কন্ঠে গরল দানি',
বিষ্ণু দিলেন ভাঙ্গনের গদা, যশোদা-দুলাল বাঁশি,
দিলেন অমিত তেজ ভাস্কর, মৃগাঙ্ক দিল হাসি।

চির গৈরিক দিয়া আশিসিল ভারত-জননী কাঁদি',
প্রতাপ শিবাজী দানিল মন্ত্র, দিল উষ্ণীষ বাঁধি'।
বুদ্ধ দিলেন ভিক্ষাভান্ড, নিমাই দিলেন ঝুলি,
দেবতারা দিলেন মন্দার-মালা, মানব মাখালো ধূলি।
নিখিল-চিত্ত-রঞ্জন তুমি উদিলে নিখিল ছানি'-
মহাবীর, কবি, বিদ্রোহী, ত্যাগী, প্রেমিক, কর্মী, জ্ঞানী!
হিমালয় হ'তে বিপুল বিরাট উদার আকাশ হ'তে,
বাধা-কুঞ্জর তৃণ-সম ভেসে গেল তব প্রান-স্রোতে!

ছন্দ গানের অতীত হে ঋষি, জীবনে পারিনি তাই
বন্দিতে তোমা',আজ আনিয়াছি চিত্ত-চিতার ছাই!
বিভূতি-তিলক! কৈলাস হ'তে ফিরেছ গরল পি'ইয়া,
এনেছি অর্ঘ্য শ্মশানের কবি ভস্ম বিভূতি নিয়া!
নাও অঞ্জলি, অঞ্জলি নাও, আজ আনিয়াছি গীতি
সারা জীবনের না-কওয়া কথার ক্রন্দন-নীরে তিতি'!
এত ভালো মোরে বেসেছিলে তুমি, দাওনি ক' অবসর
তোমারেও ভালোবাসিবার, আজ তাই কাঁদে অন্তর!

আজিকে নিখিল-বেদনার কাছে মোর ব্যথা যতটুক,
ভাবিয়া ভাবিয়া স্বান্ত্বনা খুঁজি, তবু হা হা করে বুক~
আজ ভারতের ইন্দ্র-পতন,বিশ্বের দুর্দিন,
পাষান বাংলা প'ড়ে এককোনে স্তব্ধ অশ্রুহীন!
তারি মাঝি হিয়া থাকিয়া গুমরি' গুমরি' ওঠে,
বক্ষের বাণী চক্ষের জলে ধুয়ে যায়, নাহি ফোটে!
দীনের বন্ধু, দেশের বন্ধু, মানব-বন্ধু তুমি,
চেয়ে দেখ আজ লুটায় বিশ্ব তোমার চরণ চুমি'।
গগনে তেমনি ঘনায়েছে মেঘ, তেমনি ঝরিছে বারি,
বাদলে ভিজিয়া শত স্মৃতি তব হ'ইয়ে আসে ঘন ভারি।


পয়গম্বর ও অবতার- যুগে জন্মিনি মোরা কেহ,
দেখিনি ক' মোরা তাঁদের, দেখিনি দেবের জ্যোতির্দেহ,
কিন্তু যখনি বসিতে পেয়েছি তোমার চরণ-তলে
না জানিতে কিছু না বুঝিতে কিছু নয়ন ভ'রেছে জলে!
সারা প্রান যেন অঞ্জলি হ'য়ে ও-পায়ে প'ড়েছে লুটি',
সকল গর্ব উঠেছে মধুর প্রণাম হইয়া ফুটি'!
বুদ্ধের ত্যাগ শুনেছি মহান, দেখিনি ক' চোখে তাহে,
নাহি আফসোস, দেখেছি আমরা ত্যাগের শাহানশাহে;
নিমাই লইল সন্ন্যাস প্রেমে, দিইনি ক' তারে ভেট,
দেখিয়াছি মোরা 'রাজা-সন্ন্যাসী', প্রেমের জগৎ- শেঠ!

শুনি, পরার্থে প্রান দিয়া দিল অস্থি বনের ঋষি;
হিমালয় জানে, দেখেছি দধীচি গৃহে ব'সে দিবানিশি!
হে নবযুগের হরিশ্চন্দ্র! সাড়া দাও, সাড়া দাও!
কাঁদিছে শ্মশানে সুত-কোলে সতী, রাজর্ষি ফিরে চাও!
রাজকুলমান পুত্র-পত্নী সকল বসর্জিয়া
চন্ডাল-বেশে ভারত-শ্মশান ছিলে একা আগুলিয়া,
এস সন্ন্যাসী, এস সম্রাট, আজি সে শ্মশান-মাঝে,
ঐ শোনো তব পুন্য জীবন- শিশুর কাঁদন বাজে!

দাতাকর্ণের সম নিজ সুতে কারাগার-যূপে ফেলে
ত্যাগের করাতে কাটিয়াছ বীর বারে বারে অবহেলে।
ইবরাহিমের মত বাচ্চার গলে খঞ্জর দিয়া
কোরবানী দিলে সত্যের নামে, হে মানব নবী-হিয়া।
ফেরেশতা সব করিছে সালাম, দেবতা নোয়ায় মাথা,
ভগবান-বুক মানবের তরে শ্রেষ্ঠ আসন পাতা!

প্রজা-রঞ্জন রাম-রাজা দিল সীতারে বিসর্জন,
তাঁরও হয়েছিল যজ্ঞে স্বর্ণ-জানকীর প্রয়োজন,
তব ভান্ডার- লক্ষীরে রাজা নিজ হাতে দিলে তুলি'
ক্ষুধা-তৃষাতুর মানবের মুখে, নিজে দিলে পথ-ধূলি,
হেম-লক্ষীর তোমারও জীবন-যাগে ছিল প্রয়োজন,
পুড়িলে যজ্ঞে, তবু নিলে না ক' দিলে যা বিসর্জন!
তপোবলে তুমি অর্জিলে তেজ বিশ্বামিত্র-সম,
সারা বিশ্বের ব্রাম্মন তাই বন্দিছে নমো নমো!

হে যুগ- ভীষ্ম! নিন্দার শরশয্যায় তুমি শুয়ে
বিশ্বের তরে অমৃত-মন্ত্র বীর-বাণী গেলে থুয়ে!
তোমার জীবনে বলে গেলে- ওগো কল্কি আসার আগে
অকল্যানের কুরুক্ষেত্রে আজো মাঝে মাঝে জাগে
চির-সত্যের পাঞ্চজন্য, কৃষ্ণের মহাগীতা,
যুগে যুগে কুরু-মেদ-ধূমে জ্বলে অত্যাচারের চিতা!
তুমি নব ব্যাস, গেলে নবযুগ-জীবন-ভারত চরি'
তুমিই দেখালে-ইন্দ্রেরই তরে পারিজাত-মালা শচী!
আসিলে সহসা- অত্যাচারীর প্রাসাদ-স্তম্ভ টুটি'
নব-নৃসিংহ-অবতার তুমি, পড়িল বক্ষে লুটি'
আর্ত-মানব-হৃদি-প্রহ্লাদ, পাগল মুক্তি-প্রেমে!
তুমি এসেছিলে জীবন গঙ্গা তৃষাতুর তরে নেমে!
দেবতারা তাই স্তম্ভিত হের' দাঁড়ায়ে গগন তলে
নিমাই তোমারে ধরিয়াছে বুকে, বুদ্ধ নিয়াছে কোলে!

তোমারে দেখিয়া কাহারো হৃদয়ে জাগেনি ক' সন্দেহ
হিন্দু কিম্বা মুসলিম তুমি অথবা অন্য কেহ।
তুমি আর্তের, তুমি বেদনার, ছিলে সকলের তুমি,
সবারে যেমন আল দেয় রবি, ফুল দেয় সবে ভূমি!
হিন্দুর ছিলে আকবর তুমি মুসলিমের আরংজিব,
যেখানে দেখেছ জীবের বেদনা, সেখানে দেখেছ শিব!
নিন্দা-গ্লানির পঙ্ক মাখিয়া, পাগল, মিলন-হেতু
হিন্দু- মুসলমানের পরানে তুমিই বাঁধিলে-সেতু!
জানিনা আজি কে অর্ঘ্য দেবে হিন্দু-মুসলমান,
ঈর্ষা-পঙ্কে পঙ্কজ হ'য়ে ফুটুক এদের প্রান!
হে অরিন্দম, মৃত্যুর তীরে ক'রেছ শত্রু জয়,
প্রেমিক! তোমার মৃত্যু-শ্মশান আজিকে মিত্রময়!
তাই দেখি, যারা জীবনে তোমায় দিল কন্টক-হুল,
আজ তাহারাই এনেছে অর্ঘ্য নয়ন-পাতার ফুল!
কি যে ছিলে তুমি জানি না ক' কেহ, দেবতা কি আওলিয়া,
শুধু এই জানি, হেরি আর কারে ভরেনি এমন হিয়া।

আজি দিকে দিকে বিপ্লব-অহিদল খুঁজে ফেরে ডেরা,
তুমি ছিলে এই নাগ-শিশুদের ফণী-মনসার বেড়া!
তুমিই রাজার ঐরাবতের পদতল হ'তে তুলে
বিষ্ণু-শ্রীকর-অরবিন্দরে আবার শ্রীকরে থুলে!
তুমি দেখিছিলে ফাঁসির গোপীতে বাঁশির গোপীমোহন,
রক্ত-যমুনা-কূলে রচে' গেলে প্রেমের বৃন্দাবন!
তোমার ভগ্ন চাকায় জরায়ে চালায়েছে এরা রথ,
আপন মাথার মানিক জ্বালায়ে দেখায়েছে রাতে পথ,
আজ পথহারা আশ্রয়হীন সাপুড়ে মারণ- মন্ত্র সুরে!

যেদিকে তাকাই কূল নাহি পাই, অকূল হতাশ্বাস,
কোন শাপে ধরা স্বরাজ-রথের চক্র করিল গ্রাস?
যধিষ্ঠিরের সম্মুখে রণে পড়িল সব্যসাচী,
ঐ হের' দূরে কৌরব-সেনা উল্লাসে ওঠে নাচি'।
হিমালয় চিরে আগ্নেয়-বাণ চীৎকার করি' ছুটে,
শত ক্রন্দন-গঙ্গা যেন গো পড়িছে পিছনে টুটে!
স্তব্ধ- বেদনা গিরিরাজ ভয়ে জলদে লুকায় কায়-
নিখিল অশ্রু সাগর বুঝি বা তাহারে ডুবাতে চায়!
টুটিয়াছে আজ গর্ব তাহার, লাজে নত উঁচু শির,
ছাপি' হিমাদ্রি উঠিছে প্রণাম সমগ্র পৃথিবীর!
ধূর্জটি-জটা-বাহিনী গঙ্গা কা৬দিয়া কাঁদিয়া চলে,
তারি নিচে চিতা- যেন গো শিবের ললাটে অগ্নি জ্বলে!

মৃত্যু আজিকে হইল অমর পরশি' তোমার প্রান,
কালো মুখ তার হ'ল আলোময়, শ্মশানে উঠিছে গান।
অগুরু- পুষ্প-চন্দন পুড়ে হল সুগন্ধতর,
হ'ল শুচিতর অগ্নি আজিকে, শব হ'ল সুন্দর!
ধন্য হইল ভাগীরথী-ধারা তব চিতা-ছাই মাখি',
সমিধ হইল পবিত্র আজি কোলে তব দেহ রাখি'!
অসুর নাশিনী জগন্মাতার অকাল উদ্বোধনে
আঁখি উপাড়িতে গেছিলেম রাম, আজিকে পড়িছে মনে;
রাজর্ষি! আজি জীবন উপাড়ি দিলে অঞ্জলি তুমি,
দনুজ- দলনী জাগে কিনা-আছে চাহিয়া ভারত-ভূমি!

সান্তনা

চিত্ত- কুঁড়ি- হাস্না- হানা মৃত্যু- সাঁঝে ফুটলো গো!
জীবন- বেড়ায় আড়াল ছাপি' বুকের সুবাস টুটলো গো!
এই ত কারার প্রাকার টুটে'
বন্দী এল বাইরে ছুটে,
তাই ত নিখিল আকুল- হৃদয় শ্মশান- মাঝে জুটল গো!
ভবন- ভাঙ্গা আলোর শিখায় ভূবন রেঙ্গে উঠলো গো।

স্ব-রাজ দলের চিত্ত- কমল লুটল বিশ্বরাজের পায়,
দলের চিত্ত উঠলো সুটে শতদলের শ্বেত আভায়।
রূপে কুমার আজকে দোলে
অপরূপের শীশ- মহলে,
মৃত্যু- বাসুদেবের কোলে কারার কেশব ঐ গো যায়,
অনাগত বৃন্দাবনে মা যশদা শাঁখ বাজায়।

আজকে রাতে যে ঘুমুলো, কালকে প্রাতে জাগবে সে।
এই বিদায়ের অস্ত আঁধার উদয়-ঊষার রাংবে রে!
শোকের নিশির শিশির ঝরে
ফলবে ফসল ঘরে ঘরে,
আবার শীতের রিক্ত শাখায় লাগবে ফুলেল রাগ এসে।
যে মা সাঁঝে ঘুম পাড়াল, চুম দিয়ে ঘুম ভাংবে সে।

না ঝ'রলে তাঁর প্রান- সাগরে মৃত্যু- রাতের হিম- কণা
জীবন- শুক্তি ব্যররথ হ'ত, মুক্তি- মুক্তা ফ'লত না।
নিখিল আঁখির ঝিনুক মাঝে
অশ্রু- মাণিক ঝলত না যে!
রোদের উনুন না নিবিলে চাঁদের সুধা গ'লত না।
গগন- লোকে আকাশ বধুর সন্ধ্যা- প্রদীপ জ্ব'লত না।

মরা বাঁশে বাজবে বাঁশি কাটুক না আজ কুঠার তায়,
এই বেনুতেই ব্রজের বাঁশি হয়ত বাজবে এই হেথায়।
হয়ত এবার মিলন- রাসে
বংশীধারী আসবে পাশে,
চিত্ত- চিতার ছাই মেখে শিব সৃষ্টি- বিষান ঐ বাজায়!
জন্ম নেবে মেহেদী ঈসা ধরার বিপুল এই ব্যথায়।

কর্মে যদি বিরাম না রয়,শান্তি তবে আসত না!
ফ'লবে ফসল- নইলে নিখিল নয়ন- নীরে ভাসত না!
নেই ক' দেহের খোসার মায়া,
বীজ আনে তাই তরুর ছায়া,
আবার যদি না জন্মাত, মৃত্যুতে সে হাসত না।
আসবে আবার- নৈলে ধরায় এমন ভালো বাসত না!

চাঁদনীরাতে

কোদালে মেঘের মউজ উঠেছে গগনের নীল গাঙ্গে,
হাবুডুবু খায় তারা- বুদ্বুদ, জোছনা সোনায় রাঙ্গে।
তৃতীয়া চাঁদের 'শাম্পানে' চড়ি' চলিছে আকাশ- প্রিয়া,
আকাশ- দরিয়া উতলা হল গো পুতলায় বুকে নিয়া।
তৃতীয়া চাঁদের বাকী 'তের কলা' আবছা কালোতে আঁকা,
নীলিম প্রিয়ার নীলা 'গুল রুখ' অব- গুন্ঠনে ঢাকা।
সপ্তর্ষির তারা পালঙ্কে ঘুমায় আকাশ- রাণী,
সেহেলী 'লায়লী' দিয়ে গেছে চূপে কুহেলী- মশারি টানি'।
দিক- চক্রের ছায়া- ঘন ঐ সবুজ তরুর সারি,
নীহার- নেটের কুয়াসগা- মশারি- ও কি বর্ডার তারি?
সাতাশ তারার ফুল তোড়া হাতে আকাশ নিশুতি রাতে
গোপনে আসিয়া তারা পালঙ্কে শুইল প্রিয়ার সাথে।
উহু উহু করি কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠে নীলা হুরী,
লুকিয়ে দেখে তা 'চোখ গেল' ব'লে চেচাঁইয় পাপিয়া ছুঁড়ি!
'মঙ্গল' তারা মঙ্গল- দীপ জ্বালিয়া প্রহর জাগে,
ঝিকিমিকি করে মাঝে মাঝে- বুঝি বধুঁর নিশাস লাগে।
উল্কা- জ্বালায় সন্ধানী- আলো লইয়া আকাশ- দ্বারী
'কাল-পুরুষ' সে জাগি' বিনিদ্র করিতেছে পায়চারী।
সেহেলীরা রাতে পালায়ে এসেছে উপবনে কোন আশে,
হেথা হোথা ছোটে- পিকের কন্ঠে ফিক ফিক ক'রে হাসে!
আবেগে সোহাগে আকাশ প্রিয়ার চিবুক বাহিয়া ও কি
শিশিরের রূপে ঘর্মবিন্দু ঝ'রে ঝ'রে পড়ে সখি,
নবমী চাঁদের 'সসারে' কলঙ্ক- ফুল আনমনে যায় আঁকি!...
ফরহাদ-শিরী, লাইলি-মজনু মগজে ক'রেছে চিড়,
মস্তানা শ্যামা দধিয়াল টানে বায়ু- বেয়ালার মীড়!

আনমনা সাকী! অমনি আমারো হৃদয়- পেয়ালা- কোণে
কলঙ্ক- ফুল আনমনে সখি লিখো মুছো খনে খনে!

রাখীবন্ধন

সই পাতালো কি শরতে আজিকে স্নিগ্ধ আকাশ ধরণী?
নীলিমা বাহিয়া সওগাত নিয়া নামিছে মেঘের তরণী!

অল্কার পানে বলাকা ছুটিছে মেঘ-দূত- মন মোহিয়া
চঞ্চুতে রাঙ্গা কলমীর কুঁড়ি- মরতের ভেট বহিয়া।

সখীর গাঁইয়ের সেঁউতি- বোঁটার ফিরোজায় রেঙ্গে পেশোয়াজ
আসমানী আর মৃন্ময়ী সখী মিশিয়াছে মেঠো পথ- মাঝ।

আকাশ এনেছে কুয়াশা- উড়ুনী, আসমানী- নীল- সাঁচুলী,
তারকার টিপ, বিজলীর হার, দ্বিতীয় - চাঁদের হাঁসুলী।

ঝরা বৃষ্টির ঝরঝর আর পাপিয়া শ্যামার কূজনে
বাজে নহবত আকাশ ভূবনে- সই পাতিয়েছে দু-জনে!

আকাশের দাসী সমীরণ আনে শ্বেত পেঁজা- মেঘ ফেনা ফুল,
হেথা জলে থলে কুমুদে আলুথালু ধরা বেয়াকুল।
আকাশ০ গাঙ্গে কি বান ডেকেছে গো, গান গেয়ে চলে বরষা,
বিজুরীর গুণ টেনে টেনে চলে মেঘ- কুমারীরা হরষা।

হেথা মেঘ পানে কালো চোখ হানে মাটির কুমার মাঝিরা,
জল ছুড়ে মারে মেঘ-বালা দল, বলে- 'চাহে দেখ পাজীরা!'

কহিছে আকাশ, 'ওলো সই, তোর চকোরে পাঠাস নিশিথে,
চাঁদ ছেনে দেবো জোছনা- অমৃত তোর ছেলে যত তৃষিতে।
আমারে পাঠাস সোঁদা- সোঁদা- বাস তোর ও-মাটির সুরভি,
প্রভাত ফুলের পরিমল মধু, সন্ধ্যাবেলার পুরবী!'

হাসিয়া উঠিল আলোকে আকাশ, নত হ'ইয়ে এল পুলকে,
লতা-পাতা-ফুলে বাঁধিয়া আকাশে ধরা কয়, 'সই, ভূলোকে
বাঁধা প'লে আজ', চেপে ধরে বুকে লজ্জায় ওঠে কাঁপিয়া,
চুমিল আকাশ নত হ'ইয়ে মুখে ধরণীরে বুকে ঝাঁপিয়া।

বধূ- বরণ

এতদিন ছিলে ভুবনের তুমি
আজ ধরা দিলে ভবনে,
নেমে এলে আজ ধরার ধুলাতে
ছিলে এতদিন স্বপনে!
শুধু শোভাময়ী ছিলে এত দিন
কবির মানসে কলিকা নলিন,
আজ পরশিলে চিত্ত- পুলিন
বিদায় গোধূলি- লগনে।
ঊষার ললাট- সিন্দুর- টিপ
সিথিঁতে উড়াল পবনে।।

প্রভাতে ঊষা কুমারী, সেজেছে
সন্ধ্যায় বধূ ঊষসী,
চন্দন- টোপা- তারা- কলঙ্কে
ভ'রেছে বে-দাগ- মু'শশী।
মুখর মুখ আর বাচাল নয়ন
লাজ সুখে আজ যাচে গুন্ঠন,
নোটন- কপোতি কন্ঠে এখন
কূজন উঠিছে উছসি'।
এতদিন ছিলে শুধু রূপ- কথা,
আজ হলে বধূ রূপসী।।

দোলা চঞ্চল ছিল এই গেহ
তব লটপট বেণী ঘা'য়,
তারি সঞ্চিত আনন্দে ঝলে
ঐ ঊর- হার মনিকায়।
এ ঘরের হাসি নিয়ে যাও চোখে,
সে গৃহ- দ্বীপ জ্বেলো এ আলোকে,
চোখের সলিল থাকুক এ-লোকে-
আজি এ মিলন মোহানায়
ও- ঘরের হাসি বাশিঁর বেহাগ
কাঁদুক এ ঘরে সাহানায়।।

বিবাহের রঙ্গে রাঙ্গা আজ সব,
রাঙ্গা মন, রাঙ্গা আভরণ,
বলো নারী- 'এই রক্ত- আলোকে
আজ মম নব জাগরণ!'
পাপে নয় পতি পুণ্যে সুমতি
থাকে যেন, হ'ইয়ো পতির সারথি।
পতি যদি হয় অন্ধ, হে সতী,
বেঁধো না নয়নে আবরণ;
অন্ধ পতিরে আঁখি দেয় যেন
তোমার সত্য আচরণ।।

Wednesday, 11 May 2011

সুরা আদ-দুহা

সূরা আদ দুহা
শপথ প্রথম দিবস- বেলার শপথ রাতের তিমির- ঘন,
করেন নি প্রভু বর্জন তোমা', করেন নি দুশমনী কখনো।
পরকাল সে যে উত্তমতর, হইকাল আর দুনিয়া হ'তে,
অচিরাত তব প্রভু দানিবেন (সম্পদ) খুশী হইবে যাতে।
পিতৃহীন সে তোমারে তিনি কি করেন নি পরে শরন দান?
ভ্রান্ত পথে তোমারে পাইয়া তিনিই না তোমা পথ দেখান?
তিনি কি পাননি অভাবী তোমারে আভাব সব করেন মোচন?
করিয়ো না তাই পিতৃহীনের উপরে কখনো উতপীড়ন।
যে জন প্রার্থী--- তাহারে দেখিও করো না তিরস্কার কভু,
বক্ত করহ নিয়ামত যাহা দিলেন তোমারে তব প্রভু।

(পদ্যানুবাদঃ কাজী নজরূল ইসলাম, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪০)

সুরা কাফেরুন

সুরা কাফেরুন
শুরু করিলাম নামে সেই আল্লার,
আকর যে সব দয়া কৃপা করুণার।

বল, হে বিধর্মীগন, তোমরা যাহার
পূজা কর, - আমি পূজা করি না তাহার।
তোমরা পূজ না তাঁরে আমি পূজি যাঁরে,
তোমরা যাহারে পূজ - আমিও তাহারে
পূজিতে সম্মত নই। তোমরাও নহ
প্রস্তুত পূজিতে, যাঁরে পূজি অহরহ।
তোমার ধর্ম যাহা তোমাদের তরে,
আমার যে ধর্ম র'বে আমারি উপরে।


(পদ্যানুবাদঃ কাজী নজরূল ইসলাম, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪০)

সুরা কাওসার

সুরা কাওসার
শুরু করিলাম পূত নামেতে খোদার
কৃপা করুণার যিনি অসীম পাথার।

অনন্ত কল্যাণ তোমা' দিয়াছি নিশ্চয়,
অতএব তব প্রতিপালক যে হয়
নাসাজ পড় ও দাও কোরবাণী তাঁরেই,
বিদ্বেষ তোমারে যে, অপুত্রক সে-ই।


(পদ্যানুবাদঃ কাজী নজরূল ইসলাম, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪০)

সুরা লাহাব

সুরা লাহাব
(শুরু করিলাম) ল'য়ে নাম আল্লার
করুণা ও দয়া যাঁর অশেষ অপার।

ধ্বংস হোক্ আবু লাহাবের বাহুদ্বয়,
হইবে বিধ্বস্ত তাহা হইবে নিশ্চয়।
করেছে অর্জ্জন ধন সম্পদ সে যাহা
কিছু নয়, কাজে তার লাগিবে না তাহা।
শিখাময় অনলে সে পশিবে ত্বরায়
সাথে তার সে অনল-কুন্ডে যাবে হায়
জায়া তার - অপবাদ-ইন্ধন বাহিনী,
তাহার গলায় দড়ি বহিবে আপনি।


(পদ্যানুবাদঃ কাজী নজরূল ইসলাম, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪০)

সুরা নসর

সুরা নসর্
(শুরু করিলাম) ল'য়ে নাম আল্লার
করুণা ও দয়া যাঁর অশেষ অপার।

আসিয়াছে আল্লার শুভ সাহায্য বিজয়!
দেখিবে - আল্লার ধর্মে এ জগৎময়
যত লোক দলে দলে করিছে প্রবেশ,
এবে নিজ পালক সে প্রভুর অশেষ
প্রচার হে প্রসংশা কৃতজ্ঞ অন্তরে,
কর ক্ষমা প্রার্থনা তাঁহার গোচরে।
করেন গ্রহন তিনি সবার অধিক
ক্ষমা আর অনুতাপ-যাচ্ঞা সঠিক।


(পদ্যানুবাদঃ কাজী নজরূল ইসলাম, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪০)

সুরা ইখলাস

সুরা ইখলাস্
(শুরু করিলাম) ল'য়ে নাম আল্লার
করুণা ও দয়া যাঁর অশেষ অপার।

বল, আল্লাহ এক! প্রভু ইচ্ছাময়,
নিষ্কাম নিরপেক্ষ, অন্য কেহ নয়।
করেন না কাহারেও তিনি যে জনন,
কাহারও ঔরস-জাত তিনি নন।
সমতুল তাঁর
নাই কেহ আর।


(পদ্যানুবাদঃ কাজী নজরূল ইসলাম, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪০)

সুরা ফালাক

সুরা ফা্লাক্
(শুরু করিলাম) ল'য়ে নাম আল্লার
করুণা ও দয়া যাঁর অশেষ অপার।

বল, আমি শরণ যাচি ঊষা-পতির,
হাত হতে তার - সৃষ্টিতে যা আছে তির।
আঁধার-ঘন নিশীথ রাতের ভয় অপকার-
এ সব হ'তে অভয় শরণ যাচি তাঁহার।
যাদুর ফুঁয়ে শিথিল করে (কঠিন সাধন)
সংকল্পের বাঁধন, যাচি তার নিবারণ।
ঈর্ষাতুরের বিদ্বেষ যে ক্ষতি করে-
শরণ যাচি, পানাহ্ মাগি তাহার তরে।


(পদ্যানুবাদঃ কাজী নজরূল ইসলাম, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪০)

সুরা নাস

সুরা নাস
(শুরু করিলাম) ল'য়ে নাম আল্লার
করুণা ও দয়া যাঁর অশেষ অপার।

বল, আমি তাঁরি কাছে মাগি গো শরণ
সকল মানবে যিনি করেন পালন।
কেবল তাঁহারি কাছে - ত্রিভুবন মাঝ
সবার উপাস্য যিনি রাজ- অধিরাজ।
কুমন্ত্রণা দানকারী "খান্নাস" শয়তান
মানব দানব হ'তে চাহি পরিত্রাণ।


(পদ্যানুবাদঃ কাজী নজরূল ইসলাম, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪০)

সুরা ফাতেহা

সুরা ফাতেহা
(শুরু করিলাম) ল'য়ে নাম আল্লার
করুণা ও দয়া যাঁর অশেষ অপার।

সকলি বিশ্বের স্বামী আল্লার মহিমা,
করুণা কৃপার যাঁর নাই নাই সীমা।
বিচার-দিনের বিভু! কেবল তোমারি
আরাধনা করি আর শক্তি ভিক্ষা করি।
সহজ সরল পথে মোদেরে চালাও,
যাদের বিলাও দয়া সে পথ দেখাও।
অভিশপ্ত আর পথভ্রষ্ট যারা, প্রভু,
তাহাদের পথে যেন চালায়ো না কভু।


(পদ্যানুবাদঃ কাজী নজরূল ইসলাম, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪০)

কাব্য-আমপারা

"আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাধ ছিল পবিত্র "কোরআন" শরীফের বাঙলা পদ্যানুবাদ করা। সময় ও জ্ঞানের অভাবে সময়মতো তা করে উঠতে পারি নি"
-কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম পবিত্র "কোরআন" শরীফের আমপারার অন্তর্গত ৩৮টি ছোট ছোট সুরার বাঙলা পদ্যানুবাদ করেন। তার অনুবাদ পরীক্ষা ও সত্যায়িত করে তৎকালীন সময়ের খ্যাতনামা আলেম দ্বারা গঠিত একটি কমিটি।
১৯৩৩ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলামের 'কাব্য-আমপারা' প্রকাশিত হয়।
(কৃতজ্ঞতাঃ স্যামহোয়ার ইন ব্লগের ব্লগারঃ "মাধবী")


(পদ্যানুবাদঃ কাজী নজরূল ইসলাম, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪০)