যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে -

Sunday 20 November 2011

গুল-বাগিচার বুলবুলি

গুল-বাগিচার বুলবুলি আমি
রঙিন প্রেমের গাই গজল (হায়)
অনুরাগের লাল শারাব মোর
চক্ষে ঝলে ঝলমল (হায়)।

আমার গানের মদির ছোঁয়ায়
গোলাপ কুঁড়ির ঘুম টুটে যায়
সে গান শুনে প্রেম-দীওয়ানা
কবির আঁখি ছলছল (হায়)।

লাল শিরাজীর গেলাস হাতে
তন্নী সাকী পড়ে ঢুলে
আমার গানের মিঠা পানির
লহর বহে নহর-কুলে।
ফুটে ওঠে আনারকলি
নাচে ভ্রমর রং-পাগল (হায়)।

সে সুর শুনে দিশেহারা
ঝিমায় গগন ঝিমায় তারা
চন্দ্র জাগে তন্দ্রাহারা
বনের চোখে শিশির-জল (হায়)।।

যাও মেঘদূত, দিও প্রিয়ার হাতে

যাও মেঘদূত,
দিও প্রিয়ার হাতে
আমার বিরহলিপি লেখা কেয়া পাতে।
আমার প্রিয়ার দীর্ঘ নিশাসে
থির হয়ে আছে মেঘ যে দেশেরই আকাশে
আমার প্রিয়ার ম্লান মুখ হেরি
ওঠে না চাঁদ আর যে দেশে রাতে
পাইবে যে দেশে কুন্তল-সুরভি বকুল ফুলে
আমার প্রিয়া কাঁদে এলায়ে কেশ সেই মেঘনা কুলে
স্বর্ণলতার সম যার ক্ষীণ করে
বারে বারে কঙ্কণ-চুড়ি খুলে পড়ে
মুকুল-বাসে যথা বরষার ফুলদল
বেদনায় মূর্চ্ছিয়া আছে আঙিনাতে।।

নিশি ভোর হল জাগিয়া

নিশি ভোর হল জাগিয়া, পরাণ পিয়া
ডাকে পিউ কাঁহা পাপিয়া, পরাণ পিয়া।
ভুলি বুলবুলি সোহাগে, কত গুলবদনী জাগে
রাতি গুলশনে যাপিয়া, পরাণ পিয়া।

জেগে রয় জাগার সাথী
দূরে চাঁদ, শিয়রে বাতি
কাঁদি ফুলশয়ন পাতিয়া
পরাণ পিয়া।

গেয়ে গান কে কাহারে
জেগে রয় কবি এ পারে
দিলি দান কারে এ হিয়া
পরাণ পিয়া।।

তোমারেই আমি চাহিয়াছি প্রিয়

তোমারেই আমি চাহিয়াছি প্রিয় শতরূপে শতবার
জনমে জনমে তাই চলে মোর অনন্ত অভিসার।
বনে তুমি যবে ছিলে বনফুল
গেয়েছিনু গান আমি বুলবুল
ছিলাম তোমার পূজার থালায় চন্দন ফুলহার।

তব সংগীতে আমি ছিনু সুর, নৃত্যে নূপুরছন্দ
আমি ছিনু তব অমরাবতীতে পারিজাত ফুলগন্ধ।
কত বসন্তে কত বরষায়
খুঁজেছি তোমায় তারায় তারায়
আজিও এসেছি তেমনই আশায় লয়ে স্মৃতি সম্ভার।।

কত যুগ যেন দেখিনি তোমার

কত যুগ যেন দেখিনি তোমারে, দেখি নাই কতদিন
তুমি যে জীবন, তোমারে হারায়ে হয়েছিনু প্রাণহীন।
তুমি যেন বায়ু; বায়ু যবে নাহি বয়
আমি ঢুলে পড়ি আয়ু মোর নাহি রয়
তুমি যেন জল, বাঁচিতে পারিনা জল বিনা আমি মীন।
তুমি জানোনা গো তব আশ্রয় বিনা
আমি কত অসহায়
তুমি না ধরিলে আমার এ তনু বাতাসে মিশায়ে যায়।
তাই মোর দেহ লতার প্রায়
তোমারেই শুধু জড়াইতে চায়
তাই এ বিরহী তনু মোর হের
দিনে দিনে হয় ক্ষীণ।।

বুকে তোমায় নাইবা পেলাম

বুকে তোমায় নাইবা পেলাম রইবে আমার চোখের জলে
ওগো বধুঁ! তোমার আসন, গভীর ব্যথায় হিয়ার তলে
আসবে যখন তিমির রাতি রইবেনা কেউ জাগার সাথি
আসবে সেদিন জ্বালব বাতি, মুছব নয়ন জল আঁচলে
নাইবা হলাম প্রিয় তোমার, বন্ধু হতে দোষ কি বধুঁ
মুখের মধুর তৃষ্ণা শেষে আমি দিব বুকের মধু
আমি ভালবাসিনি ত' ভালবাসা পাবার ছলে
বাহুর পাশে প্রিয়ায় বেঁধে আমার তরে উঠবে কেঁদে
সেইতো আমার প্রিয় জয় গো,
প্রিয়, অন্তরে রই, রইনা গলে

Saturday 19 November 2011

শিউলি মালা গেঁথে ছিলাম তোমায় দেবো বলে

শিউলি মালা গেঁথে ছিলাম তোমায় দেবো বলে
না নিয়ে সে মালা নিঠুর তুমি গেলে চলে
প্রনাম করে উদ্দেসে তাই সেই মালিকা জলে ভাসাই
তোমার ঘাটে লাগে যদি নিও চরন তলে
এল শুভদিন যবে মোর দুখের রাতির শেষে
তোমার তরি গেল ভেসে সুদুর নিরুদ্দেশে
দিন ফুরাবে শিউলি ফুটার
মোর শুভদিন আসবেনা আর
ভরল বিফল পুজার থালা
নীরব চোখের জলে।।

গভীর নিশিথে ঘুম ভেঙ্গে যায়

গভীর নিশীথে ঘুম ভেঙ্গে যায়
কে যেন আমারে ডাকে
সে কি তুমি, সে কি তুমি?

কার স্মৃতি বুকে পাষাণের মত ভার হয়ে যেন থাকে
সে কি তুমি, সে কি তুমি?

কাহার ক্ষুধিত প্রেম যেন হায়
ভিক্ষা চাহিয়া কাঁদিয়া বেড়ায়
কার সকরুণ আঁখি দুটি যেন রাতের তারার মত
মুখপানে চেয়ে থাকে
সে কি তুমি, সে কি তুমি?

নিশির বাতাস কাহার হুতাশ দীরঘ নিশাস সম
ঝড় তোলে এসে অন্তরে মোর, ওগো দুরন্ত মম
সে কি তুমি, সে কি তুমি?

মহাসাগরের ঢেউয়ের মতন
বুকে এসে বাজে কাহার রোদন?
পিয়া পিয়া নাম ডাকে অবিরাম বনের পাপিয়া পাখি
আমার চম্পা শাখে
সে কি তুমি, সে কি তুমি?

বুলবুলি নীরব নার্গিস বনে

বুল্‌বুলি নীরব নার্গিস বনে
ঝরা বনগোলাপের বিলাপ শোনে।
শিরাজের নওরোজে ফাল্গুন মাসে
যেন তার প্রিয়ার সমাধির পাশে
তরুণ ইরাণ-কবি কাঁদে নির্জনে।

উদাসীন আকাশ থির হয়ে আছে
জল-ভরা মেঘ লয়ে বুকের কাছে
সাকীর শরাবের পেয়ালার পরে
সকরুণ অশ্রুর বেল ফুল ঝরে
চেয়ে আছে ভাঙা চাঁদ মলিন-আননে।।

চোখের নেশার ভালবাসা সে কি কভু থাকে গো

চোখের নেশার ভালবাসা সে কি কভু থাকে গো
জাগিয়া স্বপনের স্মৃতি স্মরণে কে রাখে গো?
তোমরা ভোল গো যারে, চির-তরে ভোল তারে
মেঘ গেলে ছায়া আবছায়া থাকে কি আকাশে গো?
পুতুল লইয়া খেলা খেলিছ বালিকা বেলা
খেলিছ পরাণ লয়ে তেমনি পুতুল খেলা
ভাঙ্গিছ গড়িছ নিতি হৃদয়-দেবতাকে গো।
চোখের ভালোবাসা গলে শেষ হয়ে যায় চোখের জলে
বুকের ছলনা সে কি আঁখিজলে ঢাকে গো?

Friday 18 November 2011

আমি ময়নামতীর শাড়ি দেব

আমি ময়নামতীর শাড়ি দেব, চল আমার বাড়ি
তোরে সোনাল ফুলের বাজু দেবো, চুড়ি বেলোয়ারী
তোরে বৈঁচী ফুলের পৈঁচী দেবো, কল্‌মিলতার বালা
গলায় দেবো টাট্‌কা তোলা ভাঁট ফুলেরই মালা
রক্ত-শালুক দিব পায়ে, পরবে আল্‌তা তারি।

হলুদ-চাঁপার বরণ কন্যা এস আমার নায়
সরষে ফুলের সোনার রেণু মাখাব ওই গায়
ঠোঁটে দিব রাঙা পলাশ, মহুয়া ফুলের মউ
বকুল ডালে দাকবে পাখি, বউ গো কথা কও
আমি সব দিব গো, যা পারি আর যা না দিতে পারি।।

আমার নয়নে নয়ন রাখি

আমার নয়নে নয়ন রাখি
পান করিতে চাহ কোন অমিয়
আছে এ আঁখিতে উষ্ণ আঁখিজল
মধুর সুধা নাই পরাণ প্রিয়।

ওগো ও শিল্পী গলাইয়া মোরে
গড়িতে চাহ কোন মানস প্রতিমারে
ওগো ও পূজারী কেন এ আরতি
জাগাতে পাষাণ প্রণয় দেবতারে
এ দেহ ভৃঙ্গারে থাকে যদি মদ
ওগো প্রেমাস্পদ পিও হে পিও।

আমারে কর গুণী তোমার বীণা
কাঁদিব সুরে সুরে কণ্ঠলীনা
আমার মনের মুকুরে কবি
হেরিতে চাহ কোন মানসীর ছবি
চাহ যদি মোরে কর গো চন্দন
তপ্ত তনু তব শীতল করিয়ো।।

আমার আপনার চেয়ে আপন

আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন
খুঁজি তারে আমি আপনায়
আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি
আমারি পিয়াসী বাসনায়।

আমার মনের তৃষিত আকাশে
ফেরে সে চাতক আকুল পিয়াসে
কভু সে চকোর সুধাচোর আসে
নিশীথে স্বপনে জোছনায়।

আমার মনের পিয়াল তমালে
হেরি তারে স্নেহ মেঘশ্যাম
অশনি আলোতে হেরি তারে থির
বিজুলি উজল অভিরাম।

আমারি রচিত কাননে বসিয়া
পরাণ প্রিয়ারে মালিকা রচিয়া
সে মালা সহসা দেখিনু জাগিয়া
আপনারই গলে দোলে হায়।।

অনেক কথা বলার মাঝে

অনেক কথা বলার মাঝে
লুকিয়ে আছে একটি কথা।
বলতে নারি সেই কথাটি
তাই এ মুখর ব্যাকুলতা।।
সেই কথাটি ঢাকার ছলে
অনেক কথা যাই গো ব’লে
ভাসি আমি নয়ন-জলে
বল্‌তে গিয়ে সেই বারতা।।
অবকাশ দেবে কবে
কবে সাহস পাব প্রাণে
লজ্জা ভুলে সেই কথাটি
বল্‌ব তোমায় কানে কানে।
মনের বনে অনুরাগে
কত কথার মুকুল জাগে
সেই মুকুলে বুকে জাগাও
ফুটে উঠার ব্যাকুলতা।।

আধো-আধো বোল

আধো-আধো বোল, লাজে বাধো-বাধো বোল
ব’লো কানে কানে
যে কথাটি আধো রাতে মনে জাগায় দোল
ব’লো কানে কানে।

যে কথার কলি সখি আজও ফুটিল না
শরমে মরম-পাতে দোলে আন্‌মনা
যে কথাটি ঢেকে রাখে বুকের আঁচল
ব’লো কানে কানে।

যে কথা লুকায়ে রাখ লাজ নত চোখে
না বলিতে যে কথাটি জানাজানি লোকে
যে কথাটি ধরে রাখে অধরের কোল
ব’লো কানে কানে।

যে কথা বলিতে চাহ বেশভূষার ছলে
যে কথা দেয় বলে তব তনু পলে পলে
যে কথাটি বলিতে সই গালে পড়ে টোল
ব’লো কানে কানে।।

ব্রজ গোপী খেলে হরি

ব্রজ গোপী খেলে হরি
খেলে আনন্দ নবঘন শ্যাম সাথে।
রাঙা অধরে ঝরে হাসির কুম্‌কুম্‌
অনুরাগ-আবীর নয়ন-পাতে।
পিরীতি-ফাগ মাখা গৌরীর সঙ্গে
হরি খেলে হরি উন্মাদ রঙ্গে।
বসন্তে এ কোন কিশোর দুরন্ত
রাধারে যে নিতে এলো পিচকারী হাতে।।
গোপীনীরা হানে অপাঙ্গ খর শর
ভ্রুকুটি ভঙ্গ অনঙ্গ আবেশে
জর জর থর থর শ্যামের অঙ্গ।
শ্যামল তনুতে হরিত কুঞ্জে
অশোক ফুটেছে যেন পুঞ্জে পুঞ্জে
রঙ-পিয়াসী মন ভ্রমর গুঞ্জে
ঢালো আরো ঢালো রঙ
প্রেম-যমুনাতে।।

ঝিলের জলে কে ভাসালো নীল শালুকের ভেলা

ঝিলের জলে কে ভাসালো
নীল শালুকের ভেলা
মেঘ্‌লা সকাল বেলা।
বেণু-বনে কে খেলে রে
পাতা-ঝরার খেলা।
মেঘ্‌লা সকাল বেলা।।
কাজল-বরণ পল্লী মেয়ে
বৃষ্টি ধারায় বেড়ায় নেয়ে,’
ব’সে দীঘির ধারে মেঘের পানে
রয় চেয়ে একেলা।
মেঘ্‌লা সকাল বেলা।।
দুলিয়ে কেয়া ফুলের বেণী
শাপ্‌লা মালা প’রে
খেল্‌তে এলো মেঘ পরীরা
ঘুম্‌তী নদীর চরে।
বিজলীতে কে দূরে বিমানে
সোনার চুড়ির ঝিলিক্‌ হানে,
বনে বনে কি বসালী
যুঁই-চামেলীর মেলা,
মেঘ্‌লা সকাল বেলা।।

তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী

তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী
কৃষ্ণ মুরারী আগত ঐ
টুটিয়া আগল নিখিল পাগল
সর্বসহা আজি সর্বজয়ী।।
বহিছে উজান অশ্রু-যমুনায়
হৃদি-বৃন্দাবনে আনন্দ ডাকে, ‘আয়’,
বসুধা যশোদার স্নেহধার উথলায়
কাল্‌-রাখাল নাচে থৈ-তা-থৈ।।
বিশ্ব ভরি’ ওঠে স্তব নমো নমঃ
অরির পুরী-মাঝে এলো অরিন্দম।
ঘিরিয়া দ্বার বৃথা জাগে প্রহরী জন
বন্ধ কারায় এলো বন্ধ-বিমোচন,
ধরি’ অজানা পথ আসিল অনাগত
জাগিয়া ব্যথাহত ডাকে, মাভৈঃ।।

অয়ি চঞ্চল-লীলায়িত-দেহা, চির-চেনা

অয়ি চঞ্চল-লীলায়িত-দেহা, চির-চেনা
ফোটাও মনের বনে তুমি বকুল হেনা। চির-চেনা।।
যৌবন-মদ গর্বিতা তন্বী
আননে জ্যোৎস্না, নয়নে বহ্নি,
তব চরণের পরশ বিনা
অশোক তরু মুঞ্জরে না, চির-চেনা।।
নন্দন-নন্দিনী তুমি দয়িতা চির-আনন্দিতা,
প্রথম কবির প্রথম লেখা তুমি কবিতা।
নৃত্য শেষের তব নূপুরগুলি হায়
রয়েছে ছড়ানো আকাশের তারকায়
সুর-লোক-ঊর্বশী হে বসন্ত-সেনা! চির-চেনা।।

অঞ্জলি লহ মোর সংগীতে

অঞ্জলি লহ মোর সংগীতে
প্রদীপ-শিখা সম কাঁপিছে প্রাণ মম
তোমায়, হে সুন্দর, বন্দিতে!
সঙ্গীতে সঙ্গীতে।।
তোমার দেবালয়ে কি সুখে কি জানি
দু’লে দু’লে ওঠে আমার দেহখানি
আরতি-নৃত্যের ভঙ্গীতে।
সঙ্গীতে সঙ্গীতে।।
পুলকে বিকশিল প্রেমের শতদল
গন্ধে রূপে রসে টলিছে টলমল।
তোমার মুখে চাহি আমার বাণী যত
লুটাইয়া পড়ে ঝরা ফুলের মতো
তোমার পদতলে রঞ্জিতে।
সঙ্গীতে সঙ্গীতে।।

ভীরু এ মনের কলি ফোটালে না কেন ফোটালে না

ভীরু এ মনের কলি
ফোটালে না কেন ফোটালে না-
জয় করে কেন নিলে না আমারে,
কেন তুমি গেলে চলি।।
ভাঙ্গিয়া দিলে না কেন মোর ভয়,
কেন ফিরে গেলে শুনি অনুনয়;
কেন সে বেদনা বুঝিতে পার না
মুখে যাহা নাহি বলি।।
কেন চাহিলে না জল
নদী তীরে এসে,
সকরুণ অভিমানে চলে গেলে
মরু-তৃষ্ণার দেশে।।
ঝড়ো হাওয়া ঝরা পাতারে যেমন
তুলে নেয় তার বক্ষে আপন
কেন কাড়িয়া নিলে না তেমনি করিয়া
মোর ফুল অঞ্জলি।।

বেল ফুল এনে দাও চাই না বকুল

বেল ফুল এনে দাও চাই না বকুল
চাই না হেনা, আনো আমের মুকুল।।
গোলাপ বড় গরবী
এনে দাও কবরী
চাইতে যুথী আনো টগর-কি ভুল।।
কি হবে কেয়া, দেয়া নাই গগনে;
আনো সন্ধ্যামালতী গোধুলী-লগনে।
গিরি-মল্লিকা কই’
চামেলী পেয়েছে সই
চাঁপা এনে দাও, নয় বাঁধব না চুল।।

কে বিদেশী বন উদাসী

কে বিদেশী বন উদাসী
বাঁশের বাঁশী বাজাও বনে।
সুর-সোহাগে তন্দ্রা লাগে
কুসুম-বাগের গুল-বদনে।।
ঝিমিয়ে আসে ভোমরা-পাখা
যুঁথীর চোখে আবেশ মাখা
কাতর ঘুমে চাঁদিমা রাকা
ভোর গগনের দর্‌-দালানে
দর্‌-দালানে ভোর গগনে।।
লজ্জাবতীর লুলিত লতায়
শিহর লাগে পুলক-ব্যথায়
মালিকা সম বঁধুরে জড়ায়
বালিকা বঁধু সুখ-স্বপনে।।
বৃথাই গাঁথি, কথার মালা
লুকাস্‌ কবি বুকের জ্বালা,
কাঁদে নিরালা বন্‌শীওয়ালা
তোরই উতালা বিরহী মনে।।

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার
পাপ দরিয়াতে ডুবে মরি কান্ডারী
নাই কড়ি নাই তরী প্রভু পারে তরিবার।।
থির নহে চিত পাপ-ভীত সদা টলমল
পুণ্যহীন শূণ্য মরু সম হৃদি-তল
নাহি ফুল নাহি ফল,
পার কর হে পার কর ডাকি কাঁদি অবিরল
পার কর হে পার কর
নাহি সঙ্গী নাহি বন্ধু নাহি পথেরই সম্বল।
সাহারায় নাহি জল
শাওন বরিষা সম তব করুণার ধারা
ঝরিয়া পড়ুক পরানে আমার।।

যায় ঝিলমিল ঝিলমিল ঢেউ তুলে

যায় ঝিলমিল ঝিলমিল ঢেউ তুলে
দেহের কূলে কে চঞ্চলা দিগঞ্চলা
মেঘ-ঘন-কুন্তলা।
দেয় দোলা পূব-সমীরণে
বনে বনে দেয় দোলা।।
চলে নাগরী দোলে ঘাগরী
কাঁখে বরষা-জলের গাগরী
বাজে নূপুর-সুর-লহরী
রিমি ঝিম্‌, রিম্‌ ঝিম্‌, রিম্‌ ঝিম্‌ চল-চপলা।।
দেয়ারী তালে কেয়া কদম নাচে
ময়ূর-ময়ূরী নাচে তমাল-গাছে।
এলায়ে মেঘ-বেণী কাল-ফণী
আসিল কি দেব-কুমারী
নন্দন-পথ-ভোলা।।

ওরে নীল যমুনার জল!

ওরে নীল যমুনার জল!
বল রে মোরে বল কোথায় ঘনশ্যাম-
আমার কৃষ্ণ ঘনশ্যাম।
আমি বহু আশায় বুক বেঁধে যে এলাম-
এলাম ব্রজধাম।।
তোর কোন্‌ কূলে কোন্‌ বনের মাঝে
আমার কানুর বেণু বাজে,
আমি কোথায় গেলে শুনতে পাব
‘রাধা রাধা’ নাম।।
আমি শুধাই ব্রজের ঘরে ঘরে-
কৃষ্ণ কোথায় বল্‌;
কেন কেউ কহে না কথা,
হেরি সবার চোখে জল।
বল্‌ রে আমার শ্যামল কোথায়,
কোন্‌ মথুরায় কোন দ্বারকায়-
বল্‌ যমুনা বল।
বাজে বৃন্দাবনের কোন্‌ পথে তাঁর
নূপুর অভিরাম।।

স্নিগ্ধ শ্যামবেণী-বর্ণা এস মালবিকা!

স্নিগ্ধ শ্যামবেণী-বর্ণা এস মালবিকা!
অর্জুন-মঞ্জুরী কর্ণে, গলে নীপ-মালিকা, / মালবিকা।।
ক্ষীণা তন্বী জল-ভার-নমিতা
শ্যাম জম্বু-বনে এস অমিতা!
আনো, কুন্দ মালতী-যুঁই ভরি’ থালিকা,- মালবিকা।।
ঘন নীল বাসে অঙ্গ ঘিরে
এস অঞ্জনা বেবা-নদী তীরে!
পরি’ হংস-মিথুন-আঁকা শাড়ি ঝিল্‌মিল্‌
এস ডাগর চোখে মাখি’ সাগরের নীল।
ডাকে বিদ্যুৎ-ইঙ্গিতে দিগ্‌-বালিকা– মালবিকা।।

মহাকালের কোলে এসে গৌরী হ’ল মহাকালী

মহাকালের কোলে এসে
গৌরী হ’ল মহাকালী,
শ্মশান-চিতার ভস্ম মেখে
ম্লান হ’ল মার রূপের ডালি।।
তবু মায়ের রূপ কি হারায়
সে যে ছড়িয়ে আছে চন্দ্র তারায়,
মায়ের রূপের আরতি হয়
নিত্য সূর্য্য-প্রদীপ জ্বালি’।।
উমা হ’ল ভৈরবী হায়
বরণ ক’রে ভৈরবেরে,
হেরি’ শিবের শিরে জাহ্নবীর
শ্মশানে মশানে ফেরে।
অন্ন দিয়ে ত্রি-জগতে
অন্নদা মোর বেড়ায় পথে,
ভিক্ষু শিবের অনুরাগে
ভিক্ষা মাগে রাজদুলালী।।

সন্ধ্যামালতী যবে ফুলবনে ঝুরে

সন্ধ্যামালতী যবে ফুলবনে ঝুরে
কে আসি’ বাজালে বাঁশী ভৈরবী সুরে।
সাঁঝের পূর্ণ চাঁদে অরুণ ভাবিয়া,
পাপিয়া প্রভাতী সুরে উঠিল গাহিয়া
ভোরের কমল ভেবে সাঁঝের শাপলা ফুলে
গুঞ্জরে ভ্রমর ঘুরে ঘুরে।।
বিকালের বিষাদে ঢাকা ছিল বনভুমি,
সকালের মল্লিকা ফুটাইলে তুমি,
রাঙিল উষার রঙে গোধুলি লগন,
শোনালে আশার বাণী বিরহ-বিধুরে।।

মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে নেচে যায়

মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে নেচে যায়
বিহবল চঞ্চল পায়।।
খর্জুর-বীথির ধারে
সাহারা মরুর পারে
বাজায় ঘুমুর ঝুমুর ঝুমুর মধুর ঝঙ্কারে।
উড়িয়ে ওড়না ‘লু’ হাওয়ায়
পরী-নটিনী নেচে যায়
দুলে দুলে দূরে সুদূর।।
সুর্মা-পরা আঁখি হানে আস্‌মানে,
জ্যোৎস্না আসে নীল আকাশে তার টানে।
ঢেউ তুলে নীল দরিয়ায়
দিল-দরদী নেচে যায়
দুলে দুলে দূরে সুদূর।।

রিম্‌ ঝিম্‌ রিম্‌ ঝিম্‌ ঝিম্‌ ঘন দেয়া বরষে

রিম্‌ ঝিম্‌ রিম্‌ ঝিম্‌ ঝিম্‌ ঘন দেয়া বরষে
কাজরী নাচিয়া চল পুরনারী হরষে।।
কদম তমাল ডালে দোলনা দোলে,
কুহু পাপিয়া ময়ূর বোলে,
মনের বনের মুকুল খোলে,
নটশ্যাম সুন্দর-মেঘ পরশে।।
হৃদয়-যমুনা আজ কূল জানে না গো,
মনের রাধা আজ বাধা মানে না গো।
ডাকিছে ঘর ছাড়া ঝড়ের (শ্যামের) বাঁশী,
অশনি আঘাত হানে দুয়ারে আসি’।
গরজাক্‌ গুরুজন ভবন-বাসী
আমরা বাহিরে যাব-শ্যাম-মেঘ দরশে।।

যখন আমার গান ফুরাবে তখন এসো ফিরে

যখন আমার গান ফুরাবে তখন এসো ফিরে।
ভাঙবে সভা, বসব একা রেবা-নদীর তীরে–
তখন এসো ফিরে।।
গীত শেষে গগন-তলে
শ্রান্ত তনু পড়’বে ঢ’লে
ভালো যখন লাগবে না আর সুরের সারেঙ্গীরে,
তখন এসো ফিরে।।
মোর কন্ঠের জয়ের মালা তোমার গলায় নিও
ক্লান্তি আমার ভুলিয়ে দিও, প্রিয় হে মোর প্রিয়।
ঘুমাই যদি কাছে থেকো
হাতখানি মোর হাতে রেখো
জেগে যখন খুঁজব তোমায় আকুল অশ্রু-নীরে–
তখন এসো ফিরে।।

মোরে ভালোবাসায় ভুলিও না

মোরে ভালোবাসায় ভুলিও না
পাওয়ার আশায় ভুলিও
মোরে আদর দিয়ে তুলিও না
আঘাত দিয়ে তুলিও।।
হে প্রিয় মোর একি মোহ
এ প্রাণ শুধু চায় বিরহ
তুমি কঠিন সুরে বেঁধে আমায়
সুরের লহর দুলিও।।
প্রভু শান্তি চাহে পুরাতে সাধ
আমি চাহি পুড়িতে
সুখের ঘরে আগুন জ্বেলে’
(বঁধু) পথে পথে ঝুরিতে;
নগ্ন দিনের আলোকেতে
চাহি না তোমায় ব’ক্ষে পেতে
তুমি ঘুমের মাঝে স্বপনেতে
হৃদয়-দুয়ার খুলিও।।

মেঘ-বিহীন খর বৈশাখে

মেঘ-বিহীন খর বৈশাখে
তৃষায় কাতর চাতকী ডাকে।।
সমাধি-মগ্না উমা তপতী
রৌদ্র যেন তার তেজ জ্যোতিঃ
ছায়া মাগে ভীতা ক্লান্ত কপোতী
কপোত-পাখায় শুষ্ক শাখে।।
শীর্ণা তটিনী বালুচর জড়ায়ে
তীর্থে চলে যেন শ্রান্ত পায়ে।
দগ্ধ ধরণী যুক্তপাণি
চাহে আষাঢ়ের আশীষ-বাণী,
যাপিয়া নির্জ্জলা একাদশীর তিথি
পিপাসিত আকাশ যাচে কাহাকে।।

দাও শৌর্য, দাও ধৈর্য্য,

দাও শৌর্য, দাও ধৈর্য্য,
হে উদার নাথ, দাও প্রাণ।
দাও অমৃত মৃত জনে,
দাও ভীত-চিত জনে,
শক্তি অপরিমাণ।
হে সর্বশক্তিমান।।
দাও স্বাস্থ্য, দাও আয়ু,
স্বচ্ছ আলো, মুক্ত বায়ু,
দাও চিত্ত অনিরুদ্ধ,
দাও শুদ্ধ জ্ঞান।
হে সর্বশক্তিমান।।
দাও দেহে দিব্য কান্তি,
দাও গেহে নিত্য শান্তি,
দাও পুণ্য প্রেম ভক্তি, মঙ্গল কল্যাণ।
ভীতি নিষেধের ঊর্ধে স্থির,
রহি যেন চির-উন্নত শির
যাহা চাই যেন জয় করে পাই
গ্রহণ না করি দান।
হে সর্বশক্তিমান।।

ভোরে ঝিলের জলে শালুক পদ্ম তোলে

ভোরে ঝিলের জলে
শালুক পদ্ম তোলে
কে ভ্রমর-কুন্তলা কিশোরী।
ফুল দেখে বেভুল সিনান্‌ বিসরি।।
একি নূতন লীলা আঁখিতে দেখি ভুল
কমল ফুল যেন তোলে কমল ফুল
ভাসায়ে আকাশ গাঙে অরুণ-গাগরি।।
ঝিলের নিথর জলে আবেশে ঢল ঢল
গ’লে পড়ে শত সে তরঙ্গে,
শারদ আকাশে দলে দলে আসে
মেঘ, বলাকার খেলিতে সঙ্গে।
আলোক-মঞ্জুরী প্রভাত বেলা
বিকশি’ জলে কি গো করিছে খেলা
বুকের আঁচলে ফুল উঠিছে শিহরি।।

হে পার্থসারথী! বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ

হে পার্থসারথী! বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ
চিত্তের অবসাদ দূর কর কর দূর
ভয়-ভীত জনে কর হে নিঃশঙ্ক।।
ধনুকে টংকার হানো হানো,
গীতার মন্ত্রে জীবন দানো;
ভোলাও ভোলাও মৃত্যু-আতংক।।
মৃত্যু জীবনের শেষ নহে নহে-
শোনাও শোনাও-অনন্ত কাল ধরি’
অনন্ত জীবন প্রবাহ বহে।
দুর্দম দুরন্ত যৌবন-চঞ্চল
ছাড়িয়া আসুক মা’র স্নেহ-অঞ্চল;
বীর সন্তানদল করুক সুশোভিত মাতৃ-অঙ্ক।।

বসন্ত মুখর আজি

বসন্ত মুখর আজি
দক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনে
বনে বনে বিহ্বল বাণী ওঠে বাজি’।।
অকারণ ভাষা তা’র ঝর ঝর ঝরে
মুহু মুহু কুহু কুহু পিয়া পিয়া স্বরে,
পলাশ বকুলে অশোক শিমুলে
সাজানো তাহার কল-কথার সাজি।।
দোয়েল, মধুপ বন-কপোত-কূজনে
ঘুম ভেঙে দেয় ভোরে বাসর শয়নে।
মৌনী আকাশ সেই বাণী-বিলাসে
অস্ত-চাঁদের মুখে মৃদু মৃদু হাসে।
বিরহ শীর্ণা গিরি-ঝরণার তীরে
পাহাড়ী বেণু হাতে ফেরে সুর ভাঁজি।।

পরদেশী মেঘ যাও রে ফিরে

পরদেশী মেঘ যাও রে ফিরে।
বলিও আমার পরদেশী রে।।
সে দেশে যবে বাদল ঝরে
কাঁদে না কি প্রাণ একেলা ঘরে,
বিরহ-ব্যাথা নাহি কি সেথা
বাজে না বাঁশী নদীর তীরে।।
বাদল রাতে ডাকিলে “পিয়া পিয়া পাপিয়া”
বেদনায় ভ’রে ওঠে না কি রে কাহারো হিয়া?
ফোটে যবে ফুল ওঠে যবে চাঁদ
জাগে না সেথা কি প্রাণে কোন সাধ?
দেয় না কেহ গুরু গঞ্জনা
সে দেশে বুঝি কুলবতী রে।।

মনে পড়ে আজ সে কোন্‌ জনমে বিদায় সন্ধ্যাবেলা

মনে পড়ে আজ সে কোন্‌ জনমে
বিদায় সন্ধ্যাবেলা-
আমি দাঁড়ায়ে রহিনু এপারে
তুমি ওপারে ভাসালে ভেলা।।
সেই সে বিদায় ক্ষণে
শপথ করিলে বন্ধু আমার
রাখিবে আমারে মনে,
ফিরিয়া আসিবে খেলিবে আবার
সেই পুরাতন খেলা।।
আজো আসিলে না হায়,
মোর অশ্রুর লিপি বনের বিহগী
দিকে দিকে লয়ে যায়,
তোমায়ে খুঁজে না পায়।
মোর গানের পাপিয়া ঝুরে
গহন কাননে তব নাম লয়ে
আজো পিয়া পিয়া সুরে;
গান থেমে যায়, হায় ফিরে আসে পাখী
বুকে বিঁধে অবহেলা।।

নিশি নিঝুম ঘুম নাহি আসে

নিশি নিঝুম ঘুম নাহি আসে,
হে প্রিয়, কোথা তুমি দূর প্রবাসে।।
বিহগী ঘুমায় বিহগ-কোলে,
শুকায়েছে ফুল-মালা শ্রান্ত আঁচলে।
ঢুলিছে রাতের তারা চাঁদের পাশে।।
ফুরায় দিনের কাজ ফুরায় না রাতি,
শিয়রের দীপ হায়, অভিমানে নিভে যায়
নিভিতে চাহে না নয়নের বাতি।
কহিতে নারি কথা তুলিয়া আঁখি
বিষাদ-মাখা মুখ গুন্ঠনে ঢাকি।
দিন যায় দিন গুণে নিশি যায় নিরাশে।।

সোনার হিন্দোলে কিশোর-কিশোরী

সোনার হিন্দোলে কিশোর-কিশোরী
দোলে ঝুলনের উৎসব রঙ্গে
বিন্দু বিন্দু বারি অবিরত পড়ে ঝরি’
বাজে তাল জলদ মৃদঙ্গে।।
জড়াইয়া শ্যামে দোলে ভীরু রাধা
থির বিজুরি ডোরে মেঘ যেন বাঁধা
পল্লব কোলে ফুলদলে দোলে
(যেন) গোপীদল গোপীবল্লভ সঙ্গে।।
উল্লাসে থরথর খরতর বহে বায়
পুলকে ডালে ডালে কদম্ব শিহরায়।
দৃষ্টিতে গোপীদের বৃষ্টির লাবনী
আনন্দ উতরোল গাহে বৃন্দাবনী
নূপুর মধুর বাজে যমুনা তরঙ্গে
ঝুলনের উৎসব রঙ্গে।।

ধুলি-পিঙ্গল জটাজুট মেলে

ধুলি-পিঙ্গল জটাজুট মেলে-
আমার প্রলয়-সুন্দর এলে।।
পথে পথে ঝরা- কুসুম ছড়ায়ে,
রিক্ত শাখায় কিশলয় জড়ায়ে,
গৈরিক উত্তরী গগনে উড়ায়ে-
রুদ্ধ-ভবনের দুয়ার ঠেলে।।
বৈশাখী পূর্নিমা চাঁদের তিলক
তোমারে পরাব,
মোর অঞ্চল দিয়া তব জটা নিঙাড়িয়া
সুরধুনি ঝরাব।
যে মালা নিলেনা আমার ফাগুনে,
জ্বালাব তারে তব রূপের আগুনে,
মরণ দিয়া তব চরণ জড়াব
হে মোর উদাসীন, যেওনা ফেলে।।

শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চির-নির্মল

শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চির-নির্মল
শান্ত অচঞ্চল ধ্রুব-জ্যোতি
অশান্ত এ চিত কর হে সমাহিত
সদা আনন্দিত রাখো মতি।।
দুঃখ-শোক সহি অসীম সাহসে
অটল রহি যেন সম্মানে যশে
তোমার ধ্যানের আনন্দ-রসে
নিমগ্ন রহি হে বিশ্বগতি।।
বহে তব ত্রিলোক ব্যাপিয়া, হে গুণী,
ওঙ্কার-সংগীত-সুর-সুরধুনী,
হে মহামৌনী, যেন সদা শুনি
সে সুরে তোমার নীরব আরতি।।

দক্ষিণ সমীরণ সাথে বাজো বেণুকা

দক্ষিণ সমীরণ সাথে বাজো বেণুকা।      
মধুমাধবী সুরে চৈত্র পূর্নিমা রাতে
বাজো বেণুকা।।          
বাজো শীর্ণা-স্রোত নদী-তীরে,                          
বাজো ঘুম যবে নামে বন ঘিরে,              
যবে, ঝরে এলোমেলো বায়ে ধীরে,                     
বাজো বেণুকা।।
মধুমালতী-বেলা-বনে ঘনাও নেশা;
স্বপন আনো জাগরণে মদিরা মেশা।
মন যবে রহে না ঘরে
বিরহ-লোকে সে বিহরে,
যবে নিরাশার বালুচরে
ওড়ে বালুকা।
বাজো বেণুকা, বাজো বেণুকা।।

কুহু কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া

কুহু কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া
কুহরিল মহুয়া বনে।
চমকি’ জাগিনু নিশীথ শয়নে।।
শূন্য-ভবনে মৃদুল সমীরে
প্রদীপের শিখা কাঁপে ধীরে ধীরে।
চরণ-চিহ্ন রাখি’ দলিত কুসুমে
চলিয়া গেছ তুমি দূরে বিজনে।।
বাহিরে ঝরে ফুল আমি বুঝি ঘরে
বেণু-বনে সমীরণ হাহাকার করে,
ব’লে যাও কেন গেলে এমন ক’রে
কিছু নাহি ব’লে সহসা গোপনে।।

দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে

দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে!
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।।
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ-
ছিঁড়িয়াছে পাল কে ধরিবে হাল, কার আছে হিম্মত।
কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত,
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।।
তিমির রাত্রি, মাতৃ-মন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান-
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া ওঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদেরে পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।।
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ-
কান্ডারী, আজি দেখিব তোমার মাতৃ-মুক্তি-পণ।
হিন্দু না ওরা মুসলিম-ওই জিজ্ঞাসে কোন্‌ জন,
কান্ডারী, বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র।।
গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গরজায় গুরু বাজ-
পশ্চাৎ পথ যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ।
কান্ডারী, তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চল টানি’-নিয়েছ যে মহাভার।।
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান-
আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা দিবে কোন বলিদান!
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতেরে করিবে ত্রাণ,
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুঁশিয়ার।।

ওর নিশীথ সমাধি ভাঙিও না

ওর নিশীথ সমাধি ভাঙিও না।
মরা-ফুলের সাথে ঝরিল যে ধুলিপথে
সে আর জাগিবে না, তারে ডাকিও না।।
তাপসিনী-সম তোমারি ধ্যানে
সে চেয়েছিল তব পথের পানে,
জীবনে যাহার মুছিলে না আঁখি ধার -
আজি তাহার পাশে কাঁদিও না।।
মরণের কোলে সে গভীর শান্তিতে
পড়েছে ঘুমায়ে,
তোমারি তরে গাঁথা শুক্‌নো মালিকা
বক্ষে জড়ায়ে।
যে মরিয়া জুড়ায়েছে -
ঘুমাতে দাও তারে আগিও না।।

শ্যামলা বরণ বাংলা মায়ের রূপ দেখে যা আয় রে আয়

শ্যামলা বরণ বাংলা মায়ের রূপ দেখে যা আয় রে আয়
গিরি-দরী, বনে-মাঠে, প্রান্তরে রূপ ছাপিয়ে যায়।।
ধানের ক্ষেতে, বনের ফাঁকে, দেখে যা মোর কালো মাকে
ধূলি-রাঙা পথের বাঁকে বৈরাগিনী বীণ বাজায়।।
ভীরু মেয়ে পালিয়ে বেড়ায় পল্লীগ্রামে একলাটি
বিজনমাঠে গ্রাম সে বসায় নিয়ে কাদা, খড়, মাটি
কালো মেঘের ঝারি নিয়ে করুণা-বারি ছিটায়।।
কাজলা-দীঘির পদ্মফুলে যায় দেখা তার পদ্ম-মুখ
খেলে বেড়ায় ডাকাত-মেয়ে বনে লয়ে বাঘ-ভালুক
ঝড়ের সাথে নৃত্যে মাতে বেদের সাথে সাপ নাচায়।।
নদীর স্রোতে পাথর নুড়ির কাঁকন চুড়ি বাজে তার
সাঁঝের বারান্দাতে দাঁড়ায় টীপ প’রে সন্ধ্যা-তারার।
ধূসর গাঙে ঘট ভরিতে যায় সে মেয়ে ভোর বেলায়।।
হরিত শস্যে লুটায় আঁচল ঝিল্লীতে নূপুর বাজে
ভাটিয়ালী গায় ভাটির স্রোতে গায় বাউল মাঠের মাঝে।
গঙ্গা তীরে শ্মশান ঘাটে কেঁদে কভু বুক ভাসায়।।

এল বনান্তে পাগল বসন্ত

(পরজ-বসন্ত / ত্রিতাল)

এল বনান্তে পাগল বসন্ত।
বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে, চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।
বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর পরজ বসন্তের সুর,
পান্ডু-কপোলে জাগে রং নব অনুরাগে
রাঙা হল ধূসর দিগন্ত।।
কিশলয়ে-পর্ণে অশান্ত ওড়ে তা’র অঞ্চল প্রাস্ত।
পলাশ-কলিতে তা’র ফুল-ধনু লঘু-ভার,
ফুলে ফুলে হাসি অফুরন্ত।
এলো মেলো দখিনা মলয় রে প্রলাপ বকিছে বনময় রে।
অকারণ মন মাঝে বিরহের বেণু বাজে।
জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত।।

কানন গিরি সিন্ধু পার ফিরনু পথিক দেশ-বিদেশ

কানন গিরি সিন্ধু পার ফিরনু পথিক দেশ-বিদেশ।
ভ্রমিনু কতই রূপে এই সৃজন ভুবন অশেষ।।
তীর্থ পথিক এই পথের ফিরিয়া এল না কেউ,
আজ এ পথে যাত্রা কর, কাল নাহি তার চিহ্ন লেশ।।
রাত্রি-দিবার রঙমহল চিত্রিত চন্দ্রতাপ,
দু’দিনের এ পান্থবাস এই ভুবন-এ সুখ-আবেশ।।
ভোগ-বিলাসী “জমশেদের” জলসা ছিল এই যে দেশ,
আজ শ্মশান, ছিল যেথায় “বাহরামের” আবাশ আয়েশ।।

আমি পথ-মঞ্জুরী ফুটেছি আঁধার রাতে

(পঠমঞ্জরী-ঢিমা ত্রিতাল)
আমি পথ-মঞ্জুরী ফুটেছি আঁধার রাতে,
গোপন অশ্রু-সম রাতের নয়ন-পাতে।
দেবতা চাহেনা মোরে,
গাঁথে না মালার ডোরে,
অভিমানে তাই ভোরে শুকাই শিশির-সাথে।।
মধুর সুরভি ছিল আমার পরাণ ভরা,
আমার কামনা ছিল মালা হয়ে ঝরে পড়া।
ভালবাসা পেয়ে যদি
কাঁদিতাম নিরবধি,
সে বেদনা ছিল ভাল সুখ ছিল সে কাঁদাতে।

আজি মনে মনে লাগে হরি

আজি মনে মনে লাগে হরি
আজি বনে বনে জাগে হরি।।
ঝাঁঝর করতাল খরতালে বাজে
বাজে কংকন চুড়ি মৃদুল আওয়াজে
লচকিয়া আসে মুচকিয়া হাসে
প্রেম-উল্লাসে শ্যামল গৌরী।।
কদম্ব তমাল রঙ্গে লালে লাল
লাল হলো কৃষ্ণ ভ্রমর ভ্রমরী
রঙ্গের উজান চলে কালো যমুনার জলে
আবীর রাঙ্গা হলো ময়ূর-ময়ূরী।।
মোর হৃদি বৃন্দাবন যেন রাঙে
রাধা শ্যাম যুগল চরণ রাগে
ও চরণ ধূলি যেন ফাগ হ’য়ে মেশে রে
অন্তরে পড়ে মোর ঝরি’।।

আজো কাঁদে কাননে কোয়েলিয়া

(হাস্বৗর-ত্রিতাল)
আজো কাঁদে কাননে কোয়েলিয়া।
চম্পা কুঞ্জে আজি গুঞ্জে ভ্রমরা-কুহরিছে পাপিয়া।।
প্রেম-কুসুম শুকাইয়া গেল হায়!
প্রাণ-প্রদীপ মোর হের গো নিভিয়া যায়,
বিরহী এসে ফিরিয়া।।
তোমারি পথ চাহি হে প্রিয় নিশিদিন
মালার ফুল মোর ধুলায় হ’ল মলিন
জনম গেল ঝুরিয়া।।

বউ কথা কও, বউ কথা কও

বউ কথা কও, বউ কথা কও
কও কথা অভিমানী।
সেধে সেধে কেঁদে কেঁদে
যাবে কত যামিনী।।
সে কাঁদন শুনি হের নামিল নভে বাদল
এলো পাতার বাতায়নে যুঁই চামেলী কামিনী।।
আমার প্রাণের ভাষা শিখে
ডাকে পাখি ‘পিউ কাঁহা,’
খোঁজে তোমায় মেঘে মেঘে
আঁখি মোর সৌদামিনী।।

অরুণকান্তি কেগো যোগী ভিখারী

আহীর ভৈরব / ত্রিতাল

অরুণকান্তি কেগো যোগী ভিখারী।
নীরবে হেসে দাঁড়াইলে এসে
প্রখর তেজ তব নেহারিতে নারি।।
রাস-বিলাসিনী আমি আহিরিণী
শ্যামল-কিশোর-রূপ শুধু চিনি
অম্বরে হেরি আজ একি জ্যোতি-পুঞ্জ?
হে গিরিজাপতি! কোথা গিরিধারী।।
সম্বর সম্বর মহিমা তব
হে ব্রজেশ ভৈরব! আমি ব্রজবালা,
হে শিব সুন্দর! বাঘছাল পরিহর-
ধর নটবর বেশ পর নীপমালা।
নব-মেঘ-চন্দনে ঢাকি’ অঙ্গগজ্যোতি
প্রিয় হ’য়ে দেখা দাও ত্রিভুবন-পতি,
পার্ব্বতী নহি আমি, আমি শ্রীমতী,
বিষাণ ফেলিয়া হও বাঁশরী-ধারী।।

মোদের এই শিকল পরা ছল

মোদের এই শিকল পরা ছল
এই শিকল পরেই
শিকল তোদের করব রে বিকল।।
তোদের বন্ধ কারায় আসা
মোদের বন্দী হতে নয়
ওরে ক্ষয় করতে আসা
মোদের সবার বাঁধন ভয়
এই বাঁধন পরেই বাঁধন ভয়কে
করব মোরা জয়
এই শিকল বাঁধা পা নয়
এ শিকল ভাঙ্গা কল।।
ওরে ক্রন্দন নয় বন্ধন
এই শিকল ঝনঝনা
এ যে মুক্তিপথের অগ্রদূতের
চরণ বন্দনা।
এই লাঞ্ছিতেরাই অত্যাচারকে
হানছে লাঞ্ছনা
ওদের অস্থি দিয়েই জ্বলবে দেশে
আবার বজ্রানল।।

ভরিয়া প্রাণ শুনিতেছি গান

ভরিয়া প্রাণ শুনিতেছি গান
আসিবে আজ বন্ধু মোর।
স্বপন মাখিয়া সোনার পাখায়
আকাশে উধাও চিত-চকোর।
আসিবে আজই বন্ধু মোর।।
হিজল বিছানো বন পথ দিয়া
রাঙায়ে চরণ আসিবে গো প্রিয়া।
নদীর পারে বন কিনারে
ইঙ্গিত হানে শ্যাম কিশোর।
আসিবে আজই বন্ধু মোর।।
চন্দ্রচূড় মেঘের গায়
মরাল-মিথুন উড়িয়া যায়,
নেশা ধরে চোখে আলো-ছায়ায়
বহিছে পবন গন্ধ চোর।
আসিবে আজই বন্ধু মোর।।

ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি

ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি
ভোরের হাওয়ায় কান্না পাওয়ায় তব ম্লান ছবি
নীরব কেন কবি।।
যে বীণা তোমার পায়ের কাছে
বুক ভরা সুর লয়ে জাগিয়া আছে
তোমার পরশে ছড়াক হরষে
আকাশে বাতাসে তার সুরের সুরভি
নীরব কেন কবি।।
তোমার যে প্রিয়া
গেল বিদায় নিয়া
অভিমানে রাতে
গোলাপ হয়ে ফুটুক তাহারই কামনা
উদাস প্রাতে
ফিরে যে আসবে না ভুলো তাহারে
চাহ তাহার পানে দাঁড়ায় যে দ্বারে
অস্ত চাঁদের বাসনা ভুলাতে
অরুণ অনুরাগে উদলি রবি
নীরব কেন কবি।।

নয়ন ভরা জল গো তোমার আঁচল ভরা ফুল

নয়ন ভরা জল গো তোমার আঁচল ভরা ফুল
ফুল নেব না অশ্রু নেব ভেবে হই আকুল।।
ফুল যদি নিই তোমার হাতে
জল রবে গো নয়ন পাতে
অশ্রু নিলে ফুটবে না আর প্রেমের মুকুল।।
মালা যখন গাঁথ তখন পাওয়ার সাধ যে জাগে
মোর বিরহে কাঁদ যখন আরও ভালো লাগে।
পেয়ে তোমায় যদি হারাই
দূরে দূরে থাকি গো তাই
ফুল ফোটায়ে যায় গো চলে চঞ্চল বুলবুল।।

যাবার বেলা ফেলে যেয়ো একটি খোঁপার ফুল

যাবার বেলা ফেলে যেয়ো একটি খোঁপার ফুল।
আমার চোখে চেয়ে চেয়ো একটু চোখের ভুল।।
অধর কোণের ঈয়ৎ হাসির ক্ষণিক আলোকে
রাঙ্গিয়ে যেয়ো আমার নব গ্রহণ কালোকে,
যেতে যেতে মুখ ফিরিয়া দুলিয়ে যেও দুল।।
একটি কথা’ ক’য়ে যেয়ো একটি নমস্কার,
সেই কথাটি গানের সুরে গাইব বারে বার,
হাত ধরে মোর বন্ধু ভুলো একটু মনের ভুল।।

গানগুলি মোর আহত পাখির সম

গানগুলি মোর আহত পাখির সম
লুটাইয়া পড়ে তব পায় প্রিয়তম।।
বাণ বেধা মোর গানের পাখিরে
তু’লে নিও প্রিয় তব বুকে ধীরে,
লভিবে মরণ চরণে তোমার
সুন্দর অনুপম।।
তারা সুখের পাখায় উড়িতেছিল গো নভে,
তব নয়ন শায়কে বিঁধিলে তাহাদের কবে।
মৃত্যু আহত কন্ঠে তাহার
একি এ গানের জাগিল জোয়ান,
মরণ বিষাদে অমৃতের স্বাদ
আনিলে বিষাদ মম।।

বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজই দোল

বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজই দোল।
আজো তা’র ফুল কলিদের ঘুম টুটেনি, তন্দ্রাতে বিলোল।
আজো হায় রিক্ত শাখায় উত্তরী বায় ঝুরছে নিশিদিন,
আসেনি, যখন’ হাওয়া গজল গাওয়া, মৌমাছি বিভোল।।
কবে সে ফুল কুমারী ঘোমটা চিরি’ আসবে বাহিরে,
গিশিরের স্পর্শমুখে ভাঙ্গবে, রে ঘুম রাঙবে, রে কপোল।।
ফাগুনের মুকুল জাগা দুকুল ভাঙ্গা আসবে ফুলের বান,
কুঁড়িদের ওষ্ঠপুটে লুটবে হাসি, ফুটবে গালে টোল।।
কবি তুই গন্ধে ভু’লে ডুবলি জলে কূল পেলিনে আর,
ফুলে তোর বুক ভরেছিল, আজকে জলে ভরবে আঁখির কোল।।

খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে

খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে
ছেড়ে মসজিদ আমার মুর্শিদ এল যে এই পথ ধরে।।
দুনিয়াদারীর শেষে আমার নামাজ বদলাতে
চাই না বেহেশত খোদার কাছে নিত্য মোনাজার ক’রে।।
কায়েস যেমন লায়লী লাগি’ লভিল মজনু খেতাব,
যেমন ফরহাদ শিরীর প্রেমে হ’ল দিওয়ানা বেতাব,
বে-খুদীতে মশগুল আমি তেম্‌ খোদার তরে।।
পুড়ে মরার ভয় না রাখে, পতঙ্গ আগুনে ধায়,
সিন্ধুতে মেটে না তৃষ্ণা চাতক বারি বিন্দু চায়,
চকোর চাহে চাঁদের সুধা, চাঁদ সে আসমানে কোথায়
সুরুয থাকে কোন্‌ সুদূরে সূর্যমুখী তারেই চায়,
তেমনি আমি চাহি খোদায়, চাহিনা হিসাব ক’রে।।

শূণ্য এ বুকে পাখি মোর আয়

শূণ্য এ বুকে পাখি মোর আয়
ফিরে আয় ফিরে আয়।
তোরে না হেরিয়া সকালের ফুল
অকালে ঝরিয়া যায়।।
তুই নাই বলে ওরে উন্মাদ
পান্ডুর হলো আকাশের চাঁদ
কেঁদে নদী হলো করুণ বিষাদ
ডাকে আয় তীরে আয়।।
আকাশে মেলিয়া শত শতকর
খোঁজে তোরে তবু ওরে সুন্দর
তোর তরে বনে উঠিয়াছে ঝড়
লুটায় লতা ধূলায়।।
তুই ফিরে এলে ওরে চঞ্চল
আবার ফুটিবে বন ফুল দল
ধূসর আকাশ হইবে সুনীল
তোর চোখের চাওয়ায়।।

আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রিয়

আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রিয়
আমার কথার ফুল গো আমার গানের মালা গো
কুড়িয়ে তুমি নিও

আমার সুরের ইন্দ্রধনু
রচে আমার ক্ষনিক তনু
জড়িয়ে আছে সেই রংয়ে মোর অনুরাগ অমিয়
মোর আখি পাতায় নাই দেখিলে আমার আঁখিজল
মোর কন্ঠের সুর অশ্রুভারে করে টলমল
আমার হৃদয় -পদ্ম ঘিরে
কথার ভ্রমর কেদে ফিরে
সেই ভ্রমরের কাছে আমার মনের মধু পিও

আমায় নহে গো ভালোবাসো

আমায় নহে গো ভালোবাসো শুধু
ভালোবাসো মোর গান
বনের পাখিরে কে চিনে রাখে
গান হলে অবসান ।

চাঁদেরে কে চায় জোসনা সবাই যাচে
গীত শেষে বীণা পড়ে থাকে ধূলি মাঝে
তুমি বুঝিবে না
আলো দিতে কত পোড়ে
কত প্রদীপের প্রাণ ।
যে কাটা লতার আখিঁজল
ফুল হয়ে উঠে ফুটে
ফুল নিয়ে তার দিয়েছো কি কিছু
শূন্য পত্র পুটে ।
সবাই তৃষ্ণা মেটায় নদীর জলে
কি তৃষা জাগে সে নদীর হিয়া তলে
বেদনার মহা সাগরের কাছে করো সন্ধান ।

কেন আনো ফুলোডোর

কেন আনো ফুলোডোর
আজি বিদায়ও বেলা
মোছো মোছো আঁখিলোর
যোগী ভাঙ্গিলো মেলা

কেন মেঘেরো স্বপন
আনো মরূরও চোখে
ভুলে দিও না কুসুম
যারে দিয়েছো হেলা
যবে শুকালো কানন
এলে বিঁধুর পাখি
লয়ে কাঁটা ভরা প্রান
একি নিঠুরও খেলা
যদি আকাশ কুসুম
পেলি চকিতে কবি
চলো চলো মুসাফির
ডাকে পারেরও বেলা
আছে বাহুরও বাঁধন
তব শয়ন সাথি
আমি এসেছি একা
আমি চলি একেলা

মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দ্যম

মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দ্যম
মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল,
মোরা বিধাতার মত নির্ভয়
মোরা প্রকৃতির মত স্বচ্ছল।।
মোরা আকাশের মত বাঁধাহীন
মোরা মরু সঞ্চার বেদুঈন,
বন্ধনহীন জন্ম স্বাধীন
চিত্তমুক্ত শতদল।।
মোরা সিন্ধু জোঁয়ার কলকল
মোরা পাগলা জোঁয়ার ঝরঝর।
কল-কল-কল, ছল-ছল-ছল
মোরা দিল খোলা খোলা প্রান্তর,
মোরা শক্তি অটল মহীধর।
হাসি গান শ্যাম উচ্ছল
বৃষ্টির জল বনফল খাই-
শয্যা শ্যামল বনতল।।

পদ্মার ঢেউ রে

পদ্মার ঢেউ রে–
মোর শূণ্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা যারে
এই পদ্মে ছিল রে যার রাঙ্গা পা
আমি হারায়েছি তা’রে ॥

মোর পরান বঁধু নাই,
পদ্মে তাই মধু নাই–নাই রে–
বাতাস কাঁদে বাইরে–
সে সুগন্ধ নাই রে–
মোর রূপের সরসীতে আনন্দ-মৌমাছি
নাহি ঝঙ্কারে ॥
ও পদ্মা রে ঢেউয়ে তোর ঢেউ ওঠায় যেমন চাঁদের আলো
মোর বঁধুয়ার রূপ তেমনি ঝিল্‌মিল ঝিল্‌মিল করে কৃষ্ণ-কালো
সে প্রেমের ঘাটে ঘাটে বাঁশী বাজায়
যদি দেখিস্‌ তারে–দিস্‌ এই পদ্ম তার পায়
বলিস্‌ কেন বুকে আশার দেয়ালী জ্বালিয়ে
ফেলে গেল চির-অন্ধকারে ।।
পদ্মার ঢেউ রে
মোর শূণ্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা যারে ॥
এই পদ্মে ছিল রে যার রাঙ্গা পা
আমি হারায়েছি তারে ॥

চোখ গেল চোখ গেল

চোখ গেল চোখ গেল কেন ডাকিস রে
চোখ গেল পাখি রে
তোর চোখে কাহারো চোখ পড়েছে নাকি রে
চোখ গেল পাখি রে ।

তোর চোখের বালির জ্বালা জানে সবাই রে
জানে সবাই
চোখে যার চোখ পড়ে তার ওষুধ নাইরে
তার ওষুধ নাই
কেঁদে কেঁদে অন্ধ হয় কাহার আঁখিরে
চোখ গেল পাখি রে ।
তার চোখের জ্বালা বুঝি
নিশি রাতে বুকে লাগে
চোখ গেল ভুলে রে পিউ কাহা পিউ কাহা
বলে তাই ডাকিস অনুরাগে রে
ওরে ,
বনপাপিয়া কাহার গোপন পিয়া ছিলি আর জনমে
আজো ভুলতে নারি আজো ঝুরে হিয়া
ওরে পাপিয়া বল যে হারায় তাহারে কি
পাওয়া যায় ডাকিরে ।

যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই

যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই
কেন মনে রাখো তারে
ভুলে যাও মোরে ভুলে যাও একেবারে।।
আমি গান গাহি আপনার সুখে
তুমি কেন এসে দাঁড়াও সম্মুখে
আলেয়ার মতো ডাকিও না আর
নিশীথ অন্ধকারে।।
দয়া করো
দয়া করো আর আমারে লইয়া
খেলো না নিঠুর খেলা
শত কাঁদিলেও ফিরিবে না সেই
শুভ লগনের বেলা
প্রিয় শুভ লগনের বেলা
আমি ফিরি পথে তাহে কার ক্ষতি
তব চোখে কেন সজল মিনতী
আমি কি ভুলেও কোন দিনও
এসে দাঁড়ায়েছি তব দ্বারে।।

মোর ঘুম ঘোরে কে এলে মনোহর

মোর ঘুম ঘোরে কে এলে মনোহর
শ্রাবণ মেঘে নাচে নটবর
নমো নমো নমো নমো
ঝম ঝম ঝম ঝম ।

শিয়রে বসি চুপি চুপ চুমিলে নয়ন
মোর বিকশিল আবেশে তনু
নীপসম নিরূপম মনোরম ।
মোর ফুলবনে ছিল যত ফুল
ভরি ডালি দিনূ ঢালি দেবতা মোর ।
হায় নিলে না সে ফুল ছি ছি বেভুল
নিলে তুলি খোপা খুলি কুসুম ডোর
স্বপনে কি যে কয়েছি তাই গিয়াছে চলে
জাগিয়া কেদে ডাকি দেবতায়
প্রিয়তম প্রিয়তম প্রিয়তম ।।

দূর দ্বীপবাসীনি চিনি তোমারে চিনি

দূর দ্বীপবাসীনি, চিনি তোমারে চিনি
দারুচিনিরো দেশে, তুমি বিদেশীনিগো
সুমন্দভাসীনি।।

প্রশান্ত সাগরে তুফানেও ঝড়ে
শুনেছি তোমারি অশান্ত রাগীনি।।
বাজাও কি বুণো সুর পাহাড়ী বা‍শীতে
বনান্ত ছেয়ে যায় বাসন্তী হাসিতে।।
তব কবরী মূলে, নব এলাচীরো ফুল
দুলে কুসুম বিলাসিনী।।

মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম

মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম
ছিলাম নদীর চরে
যুগলরুপে এসেছি গো আবার মাটির ঘরে ।

তমালতরু চাঁপা লতার মতো
জড়িয়ে কত জনম হল গত
সেই বাধনের চিহ্ন আজো জাগে
জাগে হিয়ার থরে থরে ।।
বাহুর ডোরে বেধে আজো ঘুমের ঘোরে যেন
ঝড়ের বন লতার মতো লুটিয়ে কাদ কেন?
বনের কপোত কপোতাক্ষীর তীরে
পাখায় পাখায় বাধা ছিলাম নীড়ে
চিরতরে হলো ছাড়াছাড়ি
নিঠুর ব্যাধের শরে ।।

আলগা কর গো খোঁপার বাধন

আলগা কর গো খোঁপার বাঁধন
দীল ওহি মেরা ফাস্ গেয়ি
বিনোদ বেনীর জরীণ ফিতায়
আন্ধা ইশক মেরা কস্ গেয়ি ।।

তোমার কেশের গন্ধে কখন
লুকায়ে আসিল লোভী আমার মন
বেহুশ হো কর গির পারি হাতমে
বাজু বান্দমে বস্ গেয়ি ।।
কানের দুলে প্রাণ রাখিলে বিধিয়া
আখঁ ফেরা দিয়া চোরি কার নিদিয়া
দেহের দেউরিতে বেড়াতে আসিয়া
আউর নেহি উয়ো ওয়াপাস গেয়ি ।।

প্রজাপতি প্রজাপতি

প্রজাপতি প্রজাপতি
কোথায় পেলে ভাই এমন রঙ্গীন পাখা
টুকটুকে লাল নীল ঝিলিমিলি আঁকাবাঁকা।।
তুমি টুলটুলে বন-ফুলে মধু খাও
মোর বন্ধু হয়ে সেই মধু দাও,
ওই পাখা দাও সোনালী-রূপালী পরাগ মাখা।।
মোর মন যেতে চায় না পাঠশালাতে
প্রজাপতি, তুমি নিয়ে যাও সাথী করে তোমার সাথে।
তুমি হাইয়ায় নেচে নেচে যাও
আর তোমার মত মোরে আনন্দ দাও,
এই জামা ভাল লাগে না দাও জামা ছবি-আঁকা।।

খেলিছে জলদেবী

খেলিছে জলদেবী সুনীল সাগর জলে
তরঙ্গ লহর তোলে লীলায়িত কুন্তলে।।
জল ছল ঊর্মী নূপুর শ্রোতনীরে বাজে সুমধুর
জল চঞ্চল ছল কাঁকন কেউর
ঝিনুকের মেখলা কটিতে দোলে।।
আনমনে খেলে চলে বালিকা
খুলে পড়ে মুকুতা মালিকা
হরষিত পারাবারে ঊর্মী জাগে
লাজে চাঁদ লুকালো গগন তলে।।

হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে

হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে
কুড়ায়ে ঝরা ফুল একেলা আমি
তুমি কেন হায় আসিলে হেথায়
সুখের স্বরগ হইতে নামি ।

চারিদিকে মোর উড়িছে কেবল
শুকানো পাতা মলীণ ফুলদ্বয়
বৃথাই সেথা হায় তব আঁখিজল
ছিটাও অবিরল দিবসযামী ।
এলে অবেলায় পথিক বেভুল
বিদিছে কাটা নাহি পাবে ফুল
কি দিয়ে বরণ করি ও চরণ
নিভিছে জীবন জীবনস্বামী ।

বসিয়া বিজনে কেন একা মনে

( মন-মিশ্র গজল কাহারবা)

বসিয়া বিজনে কেন একা মনে
পাণিয়া ভরণে চল লো গোরী
চল জলে চল কাদে বনতল
ডাকে ছল ছল জল লহরী ।।

দিন চলে যায় বলাকা পাখায়
বিহগের বুকে বিহগী লুকায়
কেদে চখা চখা মাগিছে বিদায়
বারোয়ার সুরে ঝুরে বাশরি ।।
সাঝ হেরে মুখ চাদ কুমুরে
ছায়াপথ সিথি রচি চিকুরে
নাচে ছায়া -নটি কানন-পুরে
দুলে রটপট লতা কবরী ।।
‌বেলা গেল বধু ডাকে ননদী
চ’লো জল নিতে যাবি লো যদি
কালো হয়ে আসে সুদূর নদী
নাগরিকা-সাজে সাজে নগরী ।।
মাঝি বাধে তরী সিনান-ঘাটে
ফিরিছে পথিক বিজন মাঠে
কারে ভেবে বেলা কাদিয়া কাটে
ভর আখি-জলে ঘট পাপড়ি ।।
ওগো বেদরদী ও রাঙা পায়ে
মালা হয়ে কে গো গেল জড়ায়ে
তব সাথে কবি পড়িল গায়ে
পায়ে রাখি তার না গলে পড়ি ।।

মুছাফির মোছ রে আঁখিজল

মুছাফির মোছ রে আঁখিজল
ফিরে চল আপনারে নিয়া
আপনি ফুটেছিল ফুল
গিয়াছে আপনি ঝরিয়া ।।

রে পাগল একি দুরাশা
জলে তুই বাঁধবি বাসা
মেটে না হেথায় পিয়াসা
হেথা নাই তৃষা দরিয়া।।
বরষায় ফুটল না বকুল
পউষে ফুটিবে কি সে ফুল
এদেশে ঝরে শুধু ফুল
নিরাশার কানন ধরিয়া ।।
রে কবি কতই দেয়ালি
জ্বালিলি তোর আলো জ্বালি
এলো না তোর বনমালী
আধার আজ তোরই দুনিয়া ।।

নূরজাহান! নূরজাহান!

নূরজাহান! নূরজাহান!
সিন্ধু নদীতে ভেসে,
এলে মেঘলামতীর দেশে
ইরানী গুলিস্তান।।
নার্গিস লালা গোলাপ আঙ্গুর-লতা
শিরিঁ ফরহাঁদ সিরাজের উপকথা
এনেছিলে তুমি তনুর পেয়ালা ভরি’
বুলবুলি দিলরুবা রবাবের গান।।
তব প্রেমে উন্মাদ ভুলিল সেলিম,
সে যে রাজাধিরাজ-
চন্দন সম মাখিল অঙ্গে
কলঙ্ক লোক-লাজ।
যে কলঙ্ক লয়ে হাসে চাঁদ
নীল আকাশে,
যাহা লেখা থাকে শুধু
প্রেমিকের ইতিহাসে,
দিবে চিরদিন নন্দন-লোক-চারী
তব সেই কলঙ্ক
সে প্রেমের সম্মান।।

এই রাঙামাটির পথে লো

এই রাঙামাটির পথে লো
মাদল বাজে বাজে বাঁশের বাঁশি।
বাঁশি বাজে বুকের মাঝে লো
মন লাগে না কাজে লো
রইতে নারি ঘরে ওলো
প্রাণ হলো উদাসী লো ।।

মাদলীয়ার তালে তালে
অঙ্গ ওঠে দুলে লো ।
দোল লাগে শাল পিয়াল বনে
নতুন খোপার ফুলে লো
মহুয়া বনে লুটিয়ে পরে
মাতাল চাঁদের হাসি লো ।।
চোখে ভালো লাগে যাকে
তারে দেখবো পথের বাঁকে ।
তার চাচড় কেশে পড়িয়ে দেবো
ঝুমকো জবার ফুল
তার গলার মালার কুসুম কেড়ে
পড়বো কানের দুল ।
তার নাচের তালের ইশারাতে
বলবো ভালোবাসি লো ।।

Friday 11 November 2011

আজো কাঁদে কাননে কোয়েলিয়া

আজো কাঁদে কাননে কোয়েলিয়া
চম্পা কুঞ্জে আজি গুঞ্জে ভ্রমরা-কুহরিছে পাপিয়া।
প্রেম-কুসুম শুকাইয়া গেল হায়!
প্রাণ-প্রদীপ মোর হের গো নিভিয়া যায়,
বিরহী এসে ফিরিয়া।
তোমারি পথ চাহি হে প্রিয় নিশিদিন
মালার ফুল মোর ধুলায় হ’ল মলিন
জনম গেল ঝুরিয়া।।

Thursday 10 November 2011

রুমঝুম রুমুঝুম কে বাজায়

রুমঝুম রুমুঝুম কে বাজায়,
জল ঝুম্‌ঝুমি
চমকিয়া জাগে ঘুমন্ত বনভূমি।

দুরন্ত অরণ্যা গিরি-নির্ঝরিণী
রঙ্গে সঙ্গে লয়ে বনের হরিণী
শাখায় শাখায় ঘুম ভাঙ্গায়
ভীরু মুকুলের কপোল চুমি।

কুহু-কুহু কুহরে পাহাড়ী কুহু,
পিয়াল ডালে
পল্লব-বীণা বাজায় ঝিরিঝিরি সমীরণ,
তারি তালে তালে।

সেই জল-ছলছল সুরে জাগিয়া
সাড়া দেয় বন-পারে বাঁশী রাখালিয়া
পল্লীর প্রান্তর ওঠে শিহরি
বলে - ‘চঞ্চলা কে গো তুমি’?

Saturday 5 November 2011

কাব্য-গীতির শ্রেষ্ঠ স্রষ্ঠা, দ্রষ্ঠা, ঋষি ও ধ্যানী

কাব্য-গীতির শ্রেষ্ঠ স্রষ্ঠা, দ্রষ্ঠা, ঋষি ও ধ্যানী
মহাকবি রবি অস্ত গিয়াছে!
বীণা, বেণুকা ও বাণী নীরব হইল।
ধুলির ধরণী জানিনা সে কত দিন
রস- যমুনার পরশ পাবেনা।
প্রকৃতি বাণীহীন মৌন বিষাদে কাঁদিবে ভুবনে ভবনে ও বনে একা;
রেখায় রেখায় রুপ দিবে আর কাহার ছন্দ লেখা?
অপ্রাকৃত মদনে মাধবী চাঁদের জ্যোৎস্না দিয়া
রূপায়িত রসায়িত করিবে কে লেখনী, তুলিকা নিয়া?

ব্যাস, বাল্মীকি,কালিদাস, খৈয়াম, হাফিজ ও রুমী
আরবের ইমরুল কায়েস যে ছিলে এক সাথে তুমি!
সকল দেশের সক্ল কালের সকল কবিরে ভাঙ্গি'
তাঁহাদের রুপে রসে রাঙ্গাইয়া, বুঝি কত যুগ জাগি'
তোমারে রচিল রসিক বিধাতা, অপরুপ সে বিলাস,
তব রুপে গুনে ছিল যে পরম সুন্দরের আভাস।