যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে -

Friday, 28 May 2010

মানুষ

গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান্‌ ।
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।-
‘পূজারী দুয়ার খোলো,
ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হ’ল!’
স্বপন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়,
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়!
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান’, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি ক’ সাত দিন!’
সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে,
তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে!
ভুখারী ফুকারি’ কয়,
‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’
মসজিদে কাল শির্‌নী আছিল,-অঢেল গোস–র”টি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটি কুটি,
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে আজারির চিন্‌
বলে, ‘ বাবা, আমি ভূখা-ফাকা আমি আজ নিয়ে সাত দিন!’
তেরিয়া হইয়া হাঁকিল মোল্লা-‘ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা,
ভূখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?’
ভূখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল-‘তা হলে শালা
সোজা পথ দেখ!’ গোস–র”টি নিয়া মসজিদে দিল তালা!
ভুখারী ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে-
‘আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা ব’লে বন্ধ করনি প্রভু।
তব মস্‌জিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী।
মোল্লা-পুর”ত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!’
কোথা চেঙ্গিস্‌, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার!
খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?
সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা!
হায় রে ভজনালয়,
তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়!
মানুষেরে ঘৃণা করি’
ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি’ মরি’
ও’ মুখ হইতে কেতাব গ্রন’ নাও জোর ক’রে কেড়ে,
যাহারা আনিল গ্রন’-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে,
পূজিছে গ্রন’ ভন্ডের দল! মূর্খরা সব শোনো,
মানুষ এনেছে গ্রন’;-গ্রন’ আনেনি মানুষ কোনো।
আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহিম মোহাম্মাদ
কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর,-বিশ্বের সম্পদ,
আমাদেরি এঁরা পিতা-পিতামহ, এই আমাদের মাঝে
তাঁদেরি রক্ত কম-বেশী ক’রে প্রতি ধমনীতে রাজে!
আমরা তাঁদেরি সন্তান, জ্ঞাতি, তাঁদেরি মতন দেহ,
কে জানে কখন মোরাও অমনি হয়ে যেতে পারি কেহ।
হেসো না বন্ধু! আমার আমি সে কত অতল অসীম,
আমিই কি জানি-কে জানে কে আছে
আমাতে মহামহিম।

হয়ত আমাতে আসিছে কল্কি, তোমাতে মেহেদী ঈসা,
কে জানে কাহার অন- ও আদি, কে পায় কাহার দিশা?
কাহারে করিছ ঘৃণা তুমি ভাই, কাহারে মারিছ লাথি?
হয়ত উহারই বুকে ভগবান্‌ জাগিছেন দিবা-রাতি!
অথবা হয়ত কিছুই নহে সে, মহান্‌ উ”চ নহে,
আছে ক্লেদাক্ত ক্ষত-বিক্ষত পড়িয়া দুঃখ-দহে,
তবু জগতের যত পবিত্র গ্রন’ ভজনালয়
ঐ একখানি ক্ষুদ্র দেহের সম পবিত্র নয়!
হয়ত ইহারি ঔরসে ভাই ইহারই কুটীর-বাসে
জন্মিছে কেহ- জোড়া নাই যার জগতের ইতিহাসে!
যে বাণী আজিও শোনেনি জগৎ, যে মহাশক্তিধরে
আজিও বিশ্ব দেখনি,-হয়ত আসিছে সে এরই ঘরে!
ও কে? চন্ডাল? চম্‌কাও কেন? নহে ও ঘৃণ্য জীব!
ওই হ’তে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব।
আজ চন্ডাল, কাল হ’তে পারে মহাযোগী-সম্রাট,
তুমি কাল তারে অর্ঘ্য দানিবে, করিবে নান্দী-পাঠ।
রাখাল বলিয়া কারে করো হেলা, ও-হেলা কাহারে বাজে!
হয়ত গোপনে ব্রজের গোপাল এসেছে রাখাল সাজে!
চাষা ব’লে কর ঘৃণা!
দে’খো চাষা-রূপে লুকায়ে জনক বলরাম এলো কি না!
যত নবী ছিল মেষের রাখাল, তারাও ধরিল হাল,
তারাই আনিল অমর বাণী-যা আছে র’বে চিরকাল।
দ্বারে গালি খেয়ে ফিরে যায় নিতি ভিখারী ও ভিখারিনী,
তারি মাঝে কবে এলো ভোলা-নাথ গিরিজায়া, তা কি চিনি!
তোমার ভোগের হ্রাস হয় পাছে ভিক্ষা-মুষ্টি দিলে,
দ্বারী দিয়ে তাই মার দিয়ে তুমি দেবতারে খেদাইলে।
সে মার রহিল জমা-
কে জানে তোমায় লাঞ্ছিতা দেবী করিয়াছে কিনা ক্ষমা!

বন্ধু, তোমার বুক-ভরা লোভ, দু’চোখে স্বার্থ-ঠুলি,
নতুবা দেখিতে, তোমারে সেবিতে দেবতা হ’য়েছে কুলি।
মানুষের বুকে যেটুকু দেবতা, বেদনা-মথিত সুধা,
তাই লুটে তুমি খাবে পশু? তুমি তা দিয়ে মিটাবে ক্ষুধা?
তোমার ক্ষুধার আহার তোমার মন্দোদরীই জানে
তোমার মৃত্যু-বাণ আছে তব প্রাসাদের কোন্‌খানে!
তোমারি কামনা-রাণী
যুগে যুগে পশু, ফেলেছে তোমায় মৃত্যু-বিবরে টানি’।

Human Being
Translation: Sajed Kamal

I sing of equality.
There's nothing greater than a human being,
nothing nobler!
Caste, creed, religion--there's no difference.
Throughout all ages, all places,
we're all a manifestation
of our common humanity.

"O Priest, please open the door!
A hungry god is at your doorstep�
it's time for worship."
Awakened by this dream
the priest rushes to open the temple door
with eager anticipation: His day might have
finally arrive!! to get rich as a king
from the blessings that this god may bestow upon him.
Instead, there's this traveler--clad in rags, thin,
with a feeble voice, saying: "Please,
open the door, Father--1 haven't eaten anything
for seven days!"

The priest slams the door on his face!
Turning around to continue on his journey
through the dark night
the hungry traveler says: "This temple
belongs to the priest, 0 God, not to you!"
At the mosque, the mollah is overjoyed ,
by the huge amount of leftovers of ,meat and bread
from yesterday's offerings.

Just then a sickly traveler arrives at the door,
saying: "Father, I have been hungry
for the last seven days!"
The mollah reacts: "What a botheration!
You're starving?--Just go and drop dead
in some cattle graveyard!
Besides--do you say your prayers?"
"No, Father," replied the hungry man.
"That does it--out!" shouts the mollah
shutting the door on his face,
holding on to the meat and bread.

The hungry man continues on his journey,
saying: "I have lived for eighty years
without saying a prayer, yet you've never
deprived me of my food. But the mosques
and temples, O Lord--human beings have
no claim on them. Mollahs and priests
have locked all their doors!"

Where are you Chengis, Ghazni Mahmood, Kalapahar?
Smash the locked doors of these houses of worship!
Who dares shutting\the doors of the house of God,
who dares to put locks on them?
Open those doors--strike with your hammers & crowbars!
Oh, the house of worship--selfish, hypocrites
occupy their towers! -

Who are they--hating human beings
yet kissing the Quran, the Vedas, the Bible?
Snatch away those books from them.
The hypocrites pretend worshipping those books
by killing the human beings who have, in fact,
brought those books into existence.

Listen, you ignorants: Human beings
have brought the books,
the books never brought human beings!
Adam, David, Isiah, Moses, Abraham, Mohammad,
Krishna, Buddha, Nanak, Kabir--the treasures
of the world--they are our ancestors.
It's their blood that runs through our veins.
We're their children, kin--we're of the same body.
Who can tell?--Someone among us
may turn out to be like one of them.

Don't laugh, my friend--the self within us
is fathomless and infinite.
Do I-does anyone--know what greatness
may lie within that self?
Perhaps in me lies the Kalki,
and in you, Mehdi or Isiah.
Who knows what is one's limit or the origin!
Who finds what path to follow?
Whom do you hate, brother, whom do you kick?
Perhaps within his heart
resides the ever-awakened God!
Or pernaps he's nobody that important,
great, or of high esteem--but just someone
who's covered with filth, badly wounded and battered,
and burning with sorrow.

Yet, all the holy scriptures and houses of worship
are not as sacred as that one tiny human body!
Perhaps he'll father--in his house will be born�
someone yet unmatched in the history of the world,
who'll deliver a message never heard before,
whose great power the world has yet to witness!

Who's he? An untouchable?
Why do you startle? He's not to be despised!
He may turn out to be Harishchandra or Lord Shiva.
Today an untouchable--tomorrow he may become
a supremely revered yogi-emperor.
You'll come to him with offerings, sing his eulogy.
Why do you look down upon a shepherd?
Perhaps he's Krishna in shepherd's disguise!
Don't hate him for being a peasant�
he maybe Lord Balaram!
They're all bearers of eternal messages.
Everyday begging men and women
are turned away from the door.
How would I recognize
if Lord Bholanath and Girijaya were among them?

Just to avoid sharing a little of your sumptuous meal
with a beggar, you resort to your doorman--beating up
and chasing away a god!
But all that gets recorded--who knows if you're
ever forgiven by the humiliated goddess.
Friend, you're full of greed
with a blinder of selfishness over your eyes.
Otherwise you'd recognize the god
serving you as a coolie.

You, beast! To appease your hunger, do you want
to go on plundering the god within the human heart,
the nectar churned out of human pain?
Your evil gorge knows what appeases your hunger,
where in your palace is concealed your death-arrow.
Through the ages, your own desires
have dragged you into your death-holes.

No comments:

Post a Comment